লাশ কেটে ২৬ টুকরা: ডিএমপি বলছে, ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী

রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের হত্যাকাণ্ড ‘প্রেমঘটিত সংকট’ বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ জরেজুল ইসলামের বরাতে পুলিশ শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানায়। দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এটা আসলে ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী।

শফিকুল ইসলাম বলেন, “মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার সঙ্গে পরিচয় ও সম্পর্ক হয়। বিষয়টি ধরে ফেলেন জরেজের স্ত্রী। সহায়তার জন্য তিনি জরেজের ঘনিষ্ট বন্ধু আশরাফুলের দ্বারস্থ হন। জরেজের স্ত্রী শামীমার নম্বর দেন আশরাফুলকে। তাকে ফোন করে যেন তার স্বামীর জীবন থেকে সরে যেতে বলেন, সেই অনুরোধ করেন। পরে শামীমাকে ফোন দেন আশরাফুল। একসময় তারা দুজন সম্পর্কে জড়ান।”

ডিবি প্রধান বলেন, “এর মধ্যে আশরাফুল ও শামীমা পরিকল্পনা করেন যে জরেজকে জাপানে পাঠিয়ে দেবেন। সে অনুযায়ী দুই বন্ধু মিলে গত মঙ্গলবার ঢাকায় রওনা দেন। এরপর তারা শনির আখড়ায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। আশরাফুলকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান জরেজ ও শামীমা, কিন্তু তিনি ঘুমান না। আশরাফুল বার বার শামীমার সান্নিধ্যে যেতে চেষ্টা করেন, এতে জরেজ বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কা হয়।”

তিনি বলেন, “একপর্যায়ে জরেজ বাসা থেকে বেরিয়ে যান। দেখতে একইরকম হওয়ায় ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে যান। সে বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মোবাইল নিতে আবার বাসায় ফেরেন। জরেজ বাসায় ঢুকলে শামীমা তাকে ভেতরে যেতে বলেন এবং আশরাফুল ঘুমিয়ে গেছে বলে জানান। ঘুমিয়েছে কি না, দেখার জন্য শামীমা গায়ে হাত দিলে আশরাফুল জেগে যান। তখন জরেজ আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। আশরাফুল বিকৃত যৌনাচারের জন্য শামীমাকে জোর করতে থাকে, তখন শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেঁধে দেন। এরমধ্যে শামীমা চিৎকার করলে জরেজ বেরিয়ে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে বাড়ি দেয়। তিনি চিৎকার করতে থাকলে শামীমা তার মুখে ওড়না পুরে দিয়ে স্কচটেপ পেঁচিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর দেখেন আশরাফুল আর নড়াচড়া করতেছে না, তিনি মারা গেছেন।”

ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, তারা এ অবস্থায় আশরাফুলের লাশ নিয়ে রাতে এক বাসায় থাকেন, বৃহস্পতিবার সকালবেলা বাইরে থেকে ড্রাম এবং অন্যান্য জিনিস কিনে আনেন। লাশটি ২৬ টুকরা করে দুটি ড্রামে ভরে উপরে চাল দিয়ে ঢেকে দেন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছ থেকে দুটি ড্রাম থেকে খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজ থেকে পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

এ ঘটনায় শুক্রবার শাহবাগ থানায় মামলা করেন আশরাফুলের বোন। রাতেই ডিবি পুলিশ জরেজকে এবং র‍্যাব জরেজের প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয়।