কাশ্মীরের স্বাধীনতাপন্থী নেতা ইয়াসিন ভারতীয় গোয়েন্দাদের এজেন্ট?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
কাশ্মীরের স্বাধীনতাপন্থী নেতা ইয়াসিন ভারতীয় গোয়েন্দাদের এজেন্ট?
ইয়াসিন মালিক। ছবি: উইকিপিডিয়া

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা কাশ্মীরের স্বাধীনতাপন্থী শীর্ষ নেতা ইয়াসিন মালিককে আবারও আলোচনায়। সশস্ত্র পথ রেখে অহিংসপন্থায় আন্দোলন শুরু করার মালিক সম্প্রতি আদালতে একটি হলফনামা দিয়েছেন তারপর থেকেই নতুন করে আলোচনায় তিনি।

ইয়াসিন মালিক গত আশির দশকের শেষের দিক থেকে স্বাধীন কাশ্মীরের দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রামের সমর্থক হয়ে ওঠেন। বর্তমানে মালিক দিল্লির একটি কারাগারে যাবজ্জীবন দণ্ড ভোগ করছেন। ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাসহ অনেকের চোখেই তিনি একজন খলনায়ক। অন্যদিকে, পাকিস্তানও তাকে অবিশ্বাস করেছে।

কিন্তু, গত আগস্টের শেষের দিকে ৫৯ বছর বয়সী মালিক দিল্লি হাইকোর্টে একটি চাঞ্চল্যকর হলফনামা দাখিল করেছেন, যাতে নড়ে উঠেছে অনেকেই। সাবেক ভারতীয় কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন হলফনামায় ইয়াসিন যেসব দাবি করেছেন তার মধ্যে কিছু সত্যতা থাকতে পারে।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালিকের দাবির মূল কেন্দ্রে একটি চাঞ্চল্যকর প্রশ্ন রয়েছে- তিনি কি আসলে এত দিন ধরে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর একজন এজেন্ট ছিলেন?

ইয়াসিন মালিকের দাবি কী

ইয়াসিন তার ৮৪ পৃষ্ঠার হলফনামায় দাবি করেছেন, নব্বইয়ের দশক থেকে যখন কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহ তুঙ্গে, তখন থেকেই তিনি কাশ্মীর সংঘাত সমাধানের জন্য ভারত সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন।

মালিকের দাবি, তিনি বেশ কয়েকজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান, এমনকি আরএসএস-এর সদস্যদের সঙ্গের বহুবার দেখা করেছেন। এই বৈঠকগুলো ছিল ভারতের সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এক গোপন কূটনীতির অংশ, যার লক্ষ্য ছিল কাশ্মীরে শান্তি প্রচেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

মালিকের দাবি ২০০৬ সালে লস্কর-ই-তাইয়েবার প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তানের হাফিজ সাঈদের সঙ্গে তার বৈঠকের ব্যবস্থা ভারতের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা-আইবির উদ্যোগে হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল সাঈদকে সশস্ত্র পথ থেকে সরে আসতে উৎসাহিত করা।

মালিকের দাবির কেন্দ্রে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর যে প্রশ্নটি উঠেছে তা হলো, তিনি কি এত দিন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একজন গোপন এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন?

কে এই ইয়াসিন মালিক?

শ্রীনগরের মাইসুমা এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন মালিক ২১ বছর বয়সে ১৯৮৭ সালে স্থানীয় নির্বাচনে কারচুপির ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তান চলে যান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেখানে তিনি সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

ফিরে এসে তিনি জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফোর্স (জেকেএলএফ) এর নেতৃত্ব করেন। এই সংগঠনটি ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর একাধিক হামলার জন্য দায়ী ছিল।

তবে, কাশ্মীরকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে চাওয়ার কারণে তার পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। এরপর থেকে পাকিস্তানের সমর্থন ইয়াসিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিজবুল মুজাহিদিনের দিকে চলে যায়।

১৯৯০ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মালিকের দাবি, গ্রেপ্তারের পর তাকে দিল্লির তিহার জেলে নেওয়া হয় এবং পরে ভারতের রাজধানীর উপকণ্ঠে মেহেরুলির একটি গেস্ট হাউসে রাখা হয়। সেখানে ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা তার সাথে ‘প্রায় প্রতিদিন’ দেখা করতেন এবং তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র শেখরের সাথে ডিনার করার জন্য চাপ দিতেন। ইয়াসিন বলেন, ওই কর্মকর্তারা তাকে সশস্ত্র বিদ্রোহ ছাড়ান জন্য বলেছিল।

১৯৯৪ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান এবং প্রকাশ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ ত্যাগ করে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু করেন।

এরপর থেকে তিনি আরও চারজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ রেখেছেন বলে দাবি করেছেন। এর মধ্যে ছিলেন কংগ্রেস দলের পি.ভি. নরসিংহ রাও, ১৯৯০-এর দশকে স্বল্প সময়ের জন্য ইউনাইটেড ফ্রন্ট জোট সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া ইন্দর কুমার গুজরাল, বিজেপির অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং কংগ্রেসের মনমোহন সিং।

২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার পর তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার সংগঠন জেকেএলএফকে নিষিদ্ধ করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুরনো মামলাগুলো (যেমন ১৯৮৯ সালে রুবিয়া সাঈদের অপহরণ এবং ১৯৯০ সালে বিমান বাহিনীর চার সদস্যকে হত্যার অভিযোগ) আবারও সামনে আনা হয়। ২০২২ সালের মে মাসে, একটি বিশেষ আদালত তাকে দুটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০ বছরের কঠোর কারাদণ্ডসহ মোট এক লাখ রুপি জরিমানা করে। বর্তমানে তিনি তিহার জেলে আছেন।

কাশ্মীরের মানচিত্র
কাশ্মীরের মানচিত্র

কেন মালিকের হলফনামা

দিল্লি হাইকোর্টে গত ২৫ আগস্ট দাখিল করা মালিকের হলফনামাটি ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি-এনআইএর একটি আবেদনের জবাবে ছিল। এনআইএ মালিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করেছে।

হলফনামায় মালিক দাবি করেছেন, যদিও তিনি প্রকাশ্যে নিজেকে এমন একজন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, আপসহীন ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেছেন যাকে লক্ষ লক্ষ কাশ্মীরি ভারতের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য শ্রদ্ধা করে, একই সঙ্গে তিনি ধারাবাহিকভাবে একাধিক ভারতীয় সরকারের সাথে একটি সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, ভারত সরকার তাকে আশ্বস্ত করেছিল যে যতদিন তিনি অহিংস পথে থাকবেন, ততদিন তার বা জেকেএলএফের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগগুলো আর সামনে কথা বাড়াবে না।

ইয়াসিন মালিকের দাবি, ভারত সরকার প্রায় ২৫ বছর ধরে এই বোঝাপড়াটি বজায় রেখেছে এবং এখন এনআইএ তাকে একজন ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিত্রিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোকে বিকৃত করছে।

মালিকের মতে, তার হলফনামার উদ্দেশ্য হলো তার পক্ষ থেকে আসল ঘটনা তুলে ধরা, যে পরিস্থিতিতে তিনি কাজ করেছেন তা জানানো এবং বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক আলোচনা ও গোপন বৈঠকের পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসঘাতকতা ফাঁস করা।

মালিক আরও দাবি করেন যে, ২০০৬ সালে সাঈদের সাথে দেখা করার জন্য পাকিস্তানে তার ভ্রমণটি ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অনুমোদন করেছিলেন এবং ফিরে আসার পর তিনি ভারতের শীর্ষ নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের কাছে এই বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।

কাশ্মীর ইস্যুতে কয়েক দশক ধরে লেখালেখি করছেন এমন একজন যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাংবাদিক আল জাজিরাকে জানিয়েছেন যে, মালিকের হলফনামাটি এই অঞ্চলের মতো সংঘাতগুলোর ‘বাস্তবতাকে তুলে ধরে’।

তিনি আরও বলেন, মালিকের মামলাটি একটি "লিটমাস টেস্ট"।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সাংবাদিক এবং লেখক, বলেন, “প্রসিকিউশন বলে যে মালিকের পক্ষে দাঁড়ানো মানে ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। কিন্তু তিনি এর সম্পূর্ণ বিপরীতটা প্রমাণ করেছেন। তিনি নিজের জন্য, ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য এবং বহুমুখী এই সংঘাতে রাষ্ট্র ও তার বিভিন্ন প্রতিনিধির জন্য দাঁড়িয়েছেন।”

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি এবং র-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ.এস. দুলাত, আল জাজিরাকে জানান যে নব্বইয়ের দশকে মালিকের সাথে দিল্লির যোগাযোগ করার সিদ্ধান্তকে কাশ্মীরে ধারাবাহিকভাবে ভারতীয় সরকারগুলোর শান্তি প্রক্রিয়া অনুসরণের চেষ্টার আলোকে দেখা উচিত।

দুলাত বলেন, “শান্তি প্রক্রিয়ায় যারা সাহায্য করতে পারতেন, সবার সাথেই যোগাযোগ করা হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। এতে একটি ঐকমত্য ছিল, যা সরকার থেকে সরকারে, এবং মাত্রায় ভিন্ন ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেকেই একমত ছিলেন যে কাশ্মীরের শান্তি প্রয়োজন। আমি মনে করি না এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত ছিল। সময় প্রতিনিয়ত বদলায়, মানুষ বদলায়, আজকের পরিস্থিতি গতকালের মতো হবে না।"

তবে, দুলাত মালিকের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো এবং সেগুলোর সত্যতা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি।

মালিকের অন্যান্য চাঞ্চল্যকর দাবি

মালিক তার হলফনামায় আরও দাবি করেছেন, ২০১৬ সালে তরুণ বিদ্রোহী নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর ভারতশাসিত কাশ্মীরে যে ব্যাপক গণ অভ্যুত্থান হয়েছিল, তা দমন করতে তিনি ভারত সরকারকে সহায়তা করেছিলেন।

হলফনামা অনুসারে, ওই গণ অভ্যুত্থানের সময় তিনি প্রয়াত কাশ্মীরি স্বাধীনতাপন্থী নেতা সাইয়েদ আলী শাহ গিলানির সাথে বৈঠক করেছিলেন, যা ভারত সরকারের সম্মতিতে হয়েছিল।

মালিক বলেন, সেই বৈঠকে তিনি গিলানিকে ধর্মঘট স্থগিত করতে অনুরোধ করেন। মালিকের দাবি, গিলানির নেতৃত্বাধীন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর জোটের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি এই বিরতি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বলেন, এই বিরতির ফলে রাস্তাঘাটের বিক্ষোভ আর বাড়েনি এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। তিনি আরও দাবি করেন যে, তার এই প্রস্তাবকে কাশ্মীরের ব্যবসায়ী ও বণিক সম্প্রদায়ও সমর্থন করেছিল, কারণ ধর্মঘটের কারণে তারা আয়ের উৎস হারাচ্ছিল।

মালিক তার হলফনামায় আরও প্রকাশ করেছেন যে, ২০০০ সালে তিনি ভারতীয় শিল্পপতি ধীরুভাই আম্বানির সাথেও গোপন আলোচনার অংশ ছিলেন।

কাশ্মীরের মানচিত্র
কাশ্মীরের মানচিত্র

সেই সময়, প্রবীণ আম্বানি গুজরাটে একটি তেল শোধনাগারে বিনিয়োগ করছিলেন, যা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ এটি ‘পাকিস্তানের গুলি ছোড়ার দূরত্বের’ মধ্যে অবস্থিত ছিল"। কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা তার এই শোধনাগার প্রকল্পে বিপদ ডেকে আনতে পারে, এমন আশঙ্কায় আম্বানি একজন ঘনিষ্ঠ সহকারীর মাধ্যমে মালিকের সাথে আলোচনা শুরু করেন।

তবে মালিক এই বৈঠক সম্পর্কে বেশি কিছু জানাননি, শুধু বলেছেন যে তারা সাধারণ কুশল বিনিময় করেছেন এবং নিজেদের সাধারণ পটভূমি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানাননি যে তিনি শিল্পপতির উদ্বেগ কমাতে পেরেছিলেন কি না। যদিও সেই প্রকল্পটি আজ বিশ্বের বৃহত্তম তেল শোধনাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম।

মালিক আরও দাবি করেন যে, ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর আমলে, যখন কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি একটি ভারতীয় পাসপোর্ট পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব এবং আরও অনেক দেশে ভ্রমণ করেছেন। তার প্রতিটি বৈঠকের বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতেন।

মালিকের অভিযোগ কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

মালিকের অভিযোগগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে।

ভারতশাসিত কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি (মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা রুবিয়া সাঈদের বোন) ১৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে জানান যে তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন। তিনি এনআইয়ের মৃত্যুদণ্ড চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই নতুন তথ্যের ভিত্তিতে মালিকের মামলাটি ‘সহানুভূতির চোখে’ দেখার অনুরোধ করেছেন। এক সপ্তাহ পরে, সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়্যার’ একটি কলামে মুফতি লিখেছেন, “ভারতীয় রাষ্ট্র ‘স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য পূরণের জন্য কিছু ব্যক্তিকে ব্যবহার করে এবং তারপর তাদের কার্যকারিতা ফুরিয়ে গেলে তাদের বাতিল বা শাস্তি দেয়।” তিনি ২০১৩ সালে তিহার জেলে আফজাল গুরুর গোপন ফাঁসির সাথে মালিকের মামলার তুলনা করেছেন। আফজাল গুরু ছিলেন একজন কাশ্মীরি, যাকে ২০০১ সালে ভারতীয় সংসদ ভবনে হামলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অজয় সাহনি বিশ্বাস করেন, মালিকের এই হলফনামার ফল উল্টো হতে পারে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে মালিক এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, যিনি উভয় পক্ষেই কাজ করেছেন। সাহনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে হত্যা এবং সন্ত্রাসের মামলা রয়েছে। তিনি অবশ্যই সরকারের কারো ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাই তাকে এতদিন স্বাধীনভাবে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। না হলে এত বছরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো।”

মালিক তার বিচারকে ‘আস্থার লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করা প্রসঙ্গে সাহনি বলেন, “শুধু রাষ্ট্রের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছেন বলেই আপনি একজন সৎ মানুষ তা বোঝায় না। বরং এটা উল্টোটা প্রমাণ করে। আপনি যদি একজন সৎ মানুষ হতেন, তাহলে রাষ্ট্র আপনাকে এভাবে ব্যবহার করতে পারত না।”

সাংবাদিক ও লেখক বিক্রম জিৎ সিং বলেন, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ‘যা ঘটছে সে বিষয়ে ভালোভাবে জানত’ এবং মালিকের দাবিগুলো ‘যুক্তিযুক্ত’ বলে মনে হয়। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, “এটি একটি পরিচিত সত্য যে সরকারগুলো সেতু তৈরি করার জন্য এই ধরনের ব্যক্তিদের ব্যবহার করেছে। এগুলো প্রকাশ করে যে, যখন কোনো রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে আপস চায়, তখন সরকারগুলো কীভাবে কাজ করে - যা রাষ্ট্র এবং অরাষ্ট্রীয় অভিনেতাদের একটি মিশ্রণ।”

সম্পর্কিত