ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে এবারের পাকিস্তান-আফগানিস্তান সংঘর্ষ। গত কয়েক দশকে এত গুরুতর সংঘর্ষ আগে দেখা যায়নি। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষের মূলে রয়েছে এক ব্যক্তি। তার নাম নূর ওয়ালি মেহসুদ। আফগানিস্তানে মেহসুদ ও তার অনুসারীদের উপস্থিতিই ইসলামাবাদের অসন্তোষের মূল কারণ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, মেহসুদ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) প্রধান। ইসলামাবাদের অভিযোগ, মেহসুদ ও তার অনুসারীরা আফগান মাটিতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকেই পাকিস্তানে প্রায় প্রতিদিন হামলা চালাচ্ছে।
গত সপ্তাহে কাবুলে আকাশপথে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তান। হামলায় উড়ে গিয়েছিল একটি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত গাড়ি। ওই গাড়িতে মেহসুদ ছিল বলে খবর ছিল ইসলামাবাদের কাছে। তবে শেষ পর্যন্ত সে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। টিটিপি পরে তার একটি অডিও বার্তাও প্রকাশ করে।
আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি২০১৮ সালে একেবারে কোনঠাসা হয়ে গিয়েছিল টিটিপি। পাকিস্তানের সেনারা তাদের পাকিস্তানের মাটি থেকে তাড়িয়ে আফগানিস্তানে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে এই গোষ্ঠীর প্রধান পদে থাকা তিনজনকে পরপর ড্রোন হামলায় হত্যা করেছিল আমেরিকা। এই পরিস্থিতিতেই টিটিপির দায়িত্ব নিয়েছিলেন মেহসুদ। বিশ্লেষকদের মতে, মেহসুদই প্রায় শূন্য থেকে ফের নতুন করে গড়ে তুলেছিলেন টিটিপিকে।
টিটিপি ভাঙার পর অনেক টুকরো টুকরো উগ্রপন্থী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। পরে মেহসুদ ওগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসেন। একই সঙ্গে ইসলামাবাদবিরোধী প্রচারও শুরু করে তিনি।
২০২১-এ আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরে তালেবান। পাকিস্তানের দাবি, তার পরে টিটিপির শক্তি আরও বেড়ে যায়। তাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র আসে। সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে, বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিমে নিয়মিত হামলা শুরু করে টিটিপি।
মেহসুদ নেতৃত্ব দেওয়ার আগে টিটিপি হামলা চালাত পাকিস্তানের মসজিদ বা বাজার অঞ্চলে। নেতৃত্ব নিয়ে মেহসুদ নির্দেশ দেয় পাকিস্তানের সেনা ও পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করতে।
ভিডিও বার্তায় পাকিস্তানি সেনাদের ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দিতে শুরু করেন মেহসুদ। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের নিন্দা করে তিনি ৭৮ বছর ধরে পাকিস্তানি জনতাকে ‘হাইজ্যাক’ করে রাখার অভিযোগ করেন।
এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত স্বাধীন বিশেষজ্ঞ আব্দুল সাঈদের মতে, মেহসুদ উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে বসবাসকারী পশতুন জাতিগত গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলেন। আফগান তালেবানরা মূলত পশতুন। আর মেহসুদ পশতুনদের অধিকারের জন্য লড়াই করেন।
টিটিপি প্রধান মেহসুদ ধর্মের সঙ্গে জাতীয়তাবাদের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন বলে অভিমত বিশ্লেষকদের। তিনটি বইও লিখেছেন তিনি। এর মধ্যে ৭০০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে তিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সময় টিটিপির উত্থান এবং বিদ্রোহ সম্পর্কে লিখেছেন।