নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ

ট্রাম্প বনাম মামদানি: সামনে আসছে মুখোমুখি লড়াই

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
ট্রাম্প বনাম মামদানি: সামনে আসছে মুখোমুখি লড়াই
এআই দিয়ে তৈরি প্রতীকী ছবি

টাইলার পেজার

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে জোহরান মামদানিকে একজন উগ্রপন্থী, কমিউনিস্ট এবং নিউইয়র্ক সিটির জন্য হুমকি বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ৩৪ বছর বয়সী মামদানির চেয়ে তিনি ‘অনেক বেশি আকর্ষণীয়’।

কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানিকে একজন মেধাবী রাজনীতিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি তাকে ‘চতুর’ ও ‘ভালো বক্তা’ বলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু জন ব্যক্তি এমন কথা জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের মন্তব্য নিয়ে তাদের সাথে নিউইয়র্ক টাইমসের কথা হয়েছিল।

তাই বলা যায়, অনিচ্ছাসূচক প্রশংসা সত্ত্বেও, দেখা যাচ্ছে দুই ব্যক্তি মুখোমুখি সংঘর্ষের দিকে এগোচ্ছেন। যেখানে তরুণ গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী এমন এক প্রেসিডেন্টের উল্টো দিকে দাঁড়াতে চলেছেন, যিনি ইতিমধ্যেই তাকে একটি শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। ট্রাম্পের কাছে নবনির্বাচিত মেয়র হলেন ডেমোক্র্যাট দলের বিরোধিতার প্রতীক। মামদানি যখন অসম্ভব বলে মনে হওয়া এক বিজয় অর্জন করলেন, তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেন যে ডেমোক্র্যাটরা ‘পাগল’। আর ‘মামদানি বা যা-ই হোক তার নাম– সেও তেমনই’।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও সহযোগীরা স্বীকার করেছেন, মামদানি এবং নিউইয়র্ক সিটি সম্ভবত প্রেসিডেন্টের পরবর্তী আক্রমণের লক্ষ্য হতে যাচ্ছে। তবে কেউ কেউ সতর্ক করে বলেছেন, নিউইয়র্কে ট্রাম্পের একাধিক জমি ও বাড়িঘরের ব্যবসা থাকায় শহরের আর্থিক সাফল্যের সাথে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত আছে।

গত বুধবার ট্রাম্প এমনকি এ-ও বলেছিলেন, তিনি হয়তো ‘তাকে একটু সাহায্য করতে পারেন’। কারণ তিনি চান নিউইয়র্ক সিটি সফল হোক।

তারপরেও প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়েছেন, তিনি শহরটিকে ‘আইনে যতটুকু ন্যূনতম প্রয়োজন, তার বেশি নয়’– এমন সীমিত পরিমাণ অর্থ ছাড়া কোনো কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ দেবেন না। যদিও আইনি দিক থেকে তিনি কংগ্রেসের অনুমোদিত অর্থ আটকাতে পারেন না। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। (অভিবাসন নীতি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন অতীতে শহরগুলোর জন্য বরাদ্দ কেন্দ্রীয় বাজেট আটকে রাখার চেষ্টা করেছে। তবে তারা আদালতে এ নিয়ে বারবার হেরেছে।)

কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নিউইয়র্ক সিটিতে স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে ডজনখানেক ভিন্ন ভিন্ন খাতে তহবিল আসে। প্রশাসন যদি এসবের কোনো একটি ক্ষেত্রেও প্রত্যাশিত অর্থ আটকে রাখে, তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই মামলায় গড়াবে।

অন্যদিকে, মামদানিও সংঘাতের জন্য প্রস্তুত মনে হচ্ছে। বিজয় র‍্যালিতে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। নিউইয়র্কে হস্তক্ষেপ করার কেন্দ্রীয় চেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মামদানি বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, যেহেতু আমি জানি আপনি (টেলিভিশন) দেখছেন, আমি আপনার জন্য চারটি শব্দ বলব। আপনার টিভির ভলিউম বাড়ান।”

(হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভিট পরে নিশ্চিত করেছেন যে, ট্রাম্প সত্যিই দেখছিলেন।)

মামদানি বলেন, তিনি প্রেসিডেন্টের হুমকিতে দমে যাবেন না এবং নিউইয়র্ক সিটি দেখাবে কীভাবে ট্রাম্প ও তার রাজনৈতিক আন্দোলনকে পরাজিত করা যায়। তিনি বলেন, “তাহলে শুনুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমাদের কারও কাছে পৌঁছতে চাইলে আপনাকে আমাদের সবার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।”

মামদানি, সম্ভবত, ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মামলা ছাড়া খুব কম সুযোগ পাবেন, যদি থাকে তাও। নবনির্বাচিত মেয়র শহরের আইন বিভাগে দু শ জন অতিরিক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করলে এদের একাংশকে কাজে লাগাবেন তিনি।

নবনির্বাচিত মেয়র মামদানি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যদি প্রেসিডেন্ট একসাথে কাজ করতে চান, তবে আমি তাঁর সঙ্গে কাজ করব যাতে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মতো (নিউইয়র্কবাসী) দোকান থেকে সস্তায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারেন বা তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি বাস্তবায়িত হয়।” আর “যদি প্রেসিডেন্ট এই শহরের মানুষের বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তবে আমি মানুষের পাশে থাকব তাদের রক্ষা করার জন্য।”

ডেমোক্র্যাট দলের একজন কৌশলবিদ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা ডেভিড অ্যাক্সেলরড বলেছেন, মামদানি ট্রাম্প সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন তা একেবারেই ‘অপ্রয়োজনীয়’। তিনি বলেন, “আমি মনে করি ট্রাম্পের সঙ্গে ট্রল করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া খুব ভালো কাজ নয়। কিন্তু যখন ট্রাম্প শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন, তখন দৃঢ় থাকা প্রয়োজন–এটাই আমি মনে করি। প্রশ্ন হলো: কীভাবে আপনি প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ করবেন এবং তারপরও এই ধারণার জন্য জায়গা রাখবেন যে আপনি পুরো শহরের জন্য মেয়র হবেন?”

ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিউইয়র্কে। ফলে শহরের ভালোমন্দ নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তার উপদেষ্টারা মামদানিকে হারানোর জন্য নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও তারা সফল হননি। গত বছর ট্রাম্প নিউইয়র্ক সিটিতে একাধিকবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চালিয়েছেন। যদিও এই শহরের বাসিন্দারা সাধারণত ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করেন। আর তাই, নিউইয়র্কে প্রেসিডেন্টের কিছু সহযোগী তাকে শহরের সঙ্গে আরও কৌশলী আচরণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

জন ক্যাটসিমাটিডিস নিউইয়র্কের একজন বিলিয়নিয়ার। তার গ্রোসারি ও তেলের ব্যবসা আছে। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টকে তিনি বলেছেন, নিউইয়র্কবাসীর সহায়তা করতে পারে–এমন অর্থ আটকে রাখার প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেন, তিনি মনে করেন না প্রেসিডেন্টের এই শহরে সেনাবাহিনী পাঠানোর প্রয়োজন আছে। পরিবর্তে, তিনি ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়েছেন যে ফেডারেল সরকার নিউইয়র্ক সিটির জন্য যে বরাদ্দ দেয় তা তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুক।

জন ক্যাটসিমাটিডিস বলেন, কেন্দ্রীয় তহবিল মামদানি নিজের ইচ্ছা মতো খরচ করতে পারবেন না। তবে তিনি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুব কাছ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। কারণ ট্রাম্প নিউইয়র্কের প্রতি যত্নশীল।

টাইলার পেজার: নিউইয়র্ক টাইমস-এর হোয়াইট হাউস প্রতিবেদক।

সম্পর্কিত