ইকোনমিস্টের নিবন্ধ
চরচা ডেস্ক

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। তখন তিনি জাতিকে নতুন করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের পতনের পর ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ ইউনূসের ক্ষমতায় আসার সুযোগ তৈরি হয়।
শেখ হাসিনা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে ক্রমশ আরও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিলেন। দুর্বল করে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আর শেষ করছিলেন দেশের রিজার্ভ। তার পতনে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক মহলে গণতন্ত্রের বিজয় উদযাপিত হয়। সবাই আশা করেছিল, শেখ হাসিনার পতন দেশকে নতুন পথে নিয়ে যাবে।

কিন্তু সেই নতুন ভোর শিগগিরই অনিশ্চয়তার কুয়াশায় ঢাকা পড়তে থাকে। ২০২৫ সালের বড় অংশজুড়েই বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিরতায় আটকে ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কারের ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।
আরও বড় উদ্বেগ হলো প্রতিশোধমূলক রাজনীতির আরেকটি চক্রে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি। সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক মহল আওয়ামী লীগের শাসনামলে হওয়া নির্যাতনের বিচার চাইছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী সমর্থকদের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে; অনেককে বিনা বিচারে আটক রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তার অজুহাতে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনৈতিক ইতিহাসকেই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়।
তবে আশার কথা, ২০২৬ সালের শুরুতেই বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটাই হবে দেশের জনগণের এক বড় বিজয়। ২০২৪ সালে দেশটিতে হওয়া সবশেষ সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের চোখে ছিল ব্যাপকভাবে অনিয়মপূর্ণ। যেখানে কার্যত বিরোধীরা ছিল না, আর ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ।
বাংলাদেশের মানুষ আশা করছে, এবারের ভোট দেশে স্থিতিশীলতার নতুন অধ্যায় শুরু করবে। তবে শঙ্কাও আছে, নতুন সরকার পুরনো সমস্যা সামনে আনতে পারে। জরিপে এগিয়ে থাকা বিএনপি দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিত। একই সঙ্গে বিতর্ক রয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েও। তাদের বিরুদ্ধে অতীতে চরমপন্থীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ক্ষমতায় যেই আসুক, তাদের সামনে থাকবে বিশাল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। একসময় দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত তৈরি পোশাক শিল্প এখন আমেরিকার শুল্ক বাড়ানোর কারণে ধাক্কা খাচ্ছে। বেকারত্ব বেড়েই চলেছে, বিশেষত তরুণদের মধ্যে।
পররাষ্ট্রনীতিতেও কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। ইউনূসের সময়ে বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকেছে। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য, অবকাঠামো ও প্রতিরক্ষায় একের পর এক চুক্তি হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত। পাশাপাশি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে চলমান মানবিক সংকটও নতুন নেতৃত্বকে দ্রুত সমাধান করতে হবে। আমেরিকার সহায়তা কমে আসায় এই ভার সামলানো আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের স্বপ্নময় যাত্রা মাত্র চার বছরেই সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে থমকে যায়। আজকের বাংলাদেশি জনগণ আশায় বুক বাঁধছে জাতির এই দ্বিতীয় জাগরণ আগেরবারের মতো দ্রুত নিভে যাবে না, বরং টেকসই ভবিষ্যতের পথে পথ দেখাবে।
**দ্য ইকোনমিস্টের এশিয়া করেসপন্ডেন্ট ও নিউজ এডিটর বিষ্ণু পদ্মনাভের লেখা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে প্রকাশিত**

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। তখন তিনি জাতিকে নতুন করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের পতনের পর ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ ইউনূসের ক্ষমতায় আসার সুযোগ তৈরি হয়।
শেখ হাসিনা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে ক্রমশ আরও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিলেন। দুর্বল করে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আর শেষ করছিলেন দেশের রিজার্ভ। তার পতনে বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক মহলে গণতন্ত্রের বিজয় উদযাপিত হয়। সবাই আশা করেছিল, শেখ হাসিনার পতন দেশকে নতুন পথে নিয়ে যাবে।

কিন্তু সেই নতুন ভোর শিগগিরই অনিশ্চয়তার কুয়াশায় ঢাকা পড়তে থাকে। ২০২৫ সালের বড় অংশজুড়েই বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিরতায় আটকে ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কারের ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।
আরও বড় উদ্বেগ হলো প্রতিশোধমূলক রাজনীতির আরেকটি চক্রে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি। সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক মহল আওয়ামী লীগের শাসনামলে হওয়া নির্যাতনের বিচার চাইছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী সমর্থকদের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে; অনেককে বিনা বিচারে আটক রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তার অজুহাতে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনৈতিক ইতিহাসকেই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়।
তবে আশার কথা, ২০২৬ সালের শুরুতেই বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটাই হবে দেশের জনগণের এক বড় বিজয়। ২০২৪ সালে দেশটিতে হওয়া সবশেষ সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের চোখে ছিল ব্যাপকভাবে অনিয়মপূর্ণ। যেখানে কার্যত বিরোধীরা ছিল না, আর ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪০ শতাংশ।
বাংলাদেশের মানুষ আশা করছে, এবারের ভোট দেশে স্থিতিশীলতার নতুন অধ্যায় শুরু করবে। তবে শঙ্কাও আছে, নতুন সরকার পুরনো সমস্যা সামনে আনতে পারে। জরিপে এগিয়ে থাকা বিএনপি দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিত। একই সঙ্গে বিতর্ক রয়েছে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়েও। তাদের বিরুদ্ধে অতীতে চরমপন্থীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ক্ষমতায় যেই আসুক, তাদের সামনে থাকবে বিশাল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। একসময় দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত তৈরি পোশাক শিল্প এখন আমেরিকার শুল্ক বাড়ানোর কারণে ধাক্কা খাচ্ছে। বেকারত্ব বেড়েই চলেছে, বিশেষত তরুণদের মধ্যে।
পররাষ্ট্রনীতিতেও কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। ইউনূসের সময়ে বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকেছে। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য, অবকাঠামো ও প্রতিরক্ষায় একের পর এক চুক্তি হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত। পাশাপাশি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে চলমান মানবিক সংকটও নতুন নেতৃত্বকে দ্রুত সমাধান করতে হবে। আমেরিকার সহায়তা কমে আসায় এই ভার সামলানো আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের স্বপ্নময় যাত্রা মাত্র চার বছরেই সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে থমকে যায়। আজকের বাংলাদেশি জনগণ আশায় বুক বাঁধছে জাতির এই দ্বিতীয় জাগরণ আগেরবারের মতো দ্রুত নিভে যাবে না, বরং টেকসই ভবিষ্যতের পথে পথ দেখাবে।
**দ্য ইকোনমিস্টের এশিয়া করেসপন্ডেন্ট ও নিউজ এডিটর বিষ্ণু পদ্মনাভের লেখা ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে প্রকাশিত**