চরচা ডেস্ক

ভাড়া স্থির রাখা ও শিশুসেবা বিনামূল্যে করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া জোহরান মামদানির সামনে এখন প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবে রূপ দেওয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ।
৩৪ বছর বয়সী এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী মেয়র প্রার্থীদের একজন হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল এই শহরকে সাধারণ মানুষের জন্য আরও বসবাসযোগ্য ও সাশ্রয়ী করে তোলার সাহসী অঙ্গীকারে তিনি লাখো সমর্থকের মন জয় করেছেন।
তার এই প্রচারণা নিউইয়র্কসহ বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রায় এক লাখ স্বেচ্ছাসেবক এতে যুক্ত ছিলেন। মামদানির প্রচারণা শুধু শহরের রাজনীতিতেই নয়, বরং সারা আমেরিকার প্রগতিশীল রাজনীতির জন্যই নতুন উদ্দীপনা জুগিয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে অনেক তরুণ প্রার্থী তার অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে নামছেন, যা আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির নীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
তবে এই পরিস্থিতির অন্য আরেকটি দিকও আছে। নিউইয়র্কবাসীর বিরাট প্রত্যাশা এখন জোহরানের সামনে। তাই এখন মামদানির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে পরিণত করে সেই আস্থার প্রতিদান দেওয়া।
আগামী জানুয়ারি থেকে গ্রেসি ম্যানশনে উঠবেন জোহরান মামদানি। ম্যানহাটনের আপার ইস্ট সাইডে অবস্থিত নিউইয়র্কের ঐতিহাসিক এই মেয়র ভবনটিই হবে তার নতুন ঠিকানা। তবে সেসবের আগে জোহরান নিউইয়র্কবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তার এই অভাবনীয় সাফল্য অবশ্যই উদযাপন করবেন। এই উদযাপনের উপলক্ষ আশা ও পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে নতুন এক নেতৃত্ব।
প্রগতিশীল সংগঠন জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস-এর যোগাযোগ পরিচালক উসামা আন্দরাবি বলেন, “আমার মনে হয়, নিউইয়র্কবাসীর জন্য এটি এক ক্ষীণ আলোর রেখা, এমন এক সময়ে যখন চারপাশে ছিল অন্ধকারের প্রলয়।”

জোহরান মামদানির বিজয় শুধু নিউইয়র্ক নয়, আমেরিকার প্রগতিশীল মহলেও নতুন আলো জ্বালিয়েছে। নিজেকে বামপন্থী দাবি করা মামদানি যখন ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জিতল তার পরবর্তী দুই মাসে বামঘেঁষা সংগঠন রান ফর সামথিং এর সঙ্গে ১০ হাজারেরও বেশি নতুন সদস্য যুক্ত হয়েছেন। এদের সবাই নিজেদের মতো করে মামদানির জন্য রাজনৈতিক প্রচারণা শুরু করতে আগ্রহী।
নিউইয়র্কে মামদানির নির্বাচনী প্রচারণা ছিল খুবই সহজ-সরল আর সোশ্যাল মিড়িয়া নির্ভর। এতে তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের বাইরে কোনো নির্বাচনে এবারই শহরটিতে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন। এ থেকে নিউইয়র্ক রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো তা বোঝা যায়।
এ বিষয়ে আন্দরাবি বলেন, “নিউইয়র্কবাসী দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্ড্রু কুমোর মতো করপোরেটমুখী রাজনীতিবিদদেরই একমাত্র বিকল্প হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। জোহরানের বিজয় প্রমাণ করেছে যে আপনি যদি রিয়েল এস্টেট করপোরেশন, ইসরায়েলপন্থী লবি, রিপাবলিকান ও জনগণের সম্পদ লুটে নেওয়া কোটিপতিদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, তাহলে ভোটাররা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই অবস্থানকেই সমর্থন করবে।”
এই নির্বাচনী লড়াইটি অনেকের চোখে ছিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভবিষ্যতের এক পরীক্ষা। এখানে মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। ৬৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কুমোকে নিউইয়র্কের ধনকুবের আর রিপাবলিকানরা প্রচুর আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। সেজন্য তার প্রচারণা ছিল খুবই জাঁকজমকপূর্ণ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি জোহরান মামদানির কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন। এই ফলাফল শুধু নিউইয়র্ক নয়, গোটা আমেরিকার রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিয়েছে।
মামদানির বিজয় এখন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির শীর্ষ নেতাদের জন্য এক বড় দ্বিধা তৈরি করেছে। তারা পুরো নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে একবারও মামদানিকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানাননি। প্রতিনিধি তবে সাম্প্রতিক জরিপগুলো বলছে বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রচলিত ধারা ও নেতৃত্ব দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় হয়ে পড়েছে। অনেক ভোটারই এখন পার্টির মধ্যে মৌলিক পরিবর্তনের দাবি তুলছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মামদানির মতো প্রগতিশীল নেতাদের উত্থান সেই পরিবর্তনেরই প্রতিফলন। আর এই বাস্তবতা এখন ডেমোক্র্যাটিক প্রতিষ্ঠানের জন্য উপেক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। কারণ জনগণ স্পষ্টতই ভিন্ন এক নেতৃত্ব ও নতুন দিকনির্দেশনা চায়।
এদিকে এখন থেকেই কাজে নেমে পড়তে হবে জোহরান মামদানিকে। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় যে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশেষ করে আবাসন, পরিবহন ও শিশুসেবা নিয়ে, এখন সেগুলো বাস্তবায়নের পালা। তবে প্রশ্ন হলো, দ্রুতগামী জীবনের জন্য খ্যাত এই শহরে মেয়রের চেয়ারে বসার পর নিউইয়র্কবাসী কতটা ধৈর্য দেখাবে?
সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাক্সওয়েল স্কুল অব সিটিজেনশিপ অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পলিটিক্যালদ সায়েন্সের অধ্যাপক গ্রান্ট রিহার বলেন, “নিউইয়র্কবাসীর ধৈর্য আদৌ আছে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।”
তিনি আরও বলেন, “মামদানি এতদিন যা যা বলেছে সেসবকে এখন বাস্তবে রুপ দিতে হবে। তবে কিন্তু নিউইয়র্ক এমনিতেই এক কঠিন প্রশাসনিক শহর। অনেকের মতে, আমেরিকায় প্রেসিডেন্টের পর সবচেয়ে কঠিন রাজনৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়া। তাই মামাদানির জন্য কোনোকিছুই খুব একটা সহজ হবে না।”
তবে মামদানি শুধু প্রতিশ্রুতিই দেননি, সেগুলো কীভাব বাস্তাবায়ন করতে হবে তার উপায়ও স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। আর এজন্যই মামদানির নির্বাচনী প্রচারণা মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটিকে সাশ্রয়ী করার তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তিনি কর্পোরেট কর বাড়ানো এবং শহরের ধনী নাগরিকদের ওপর ২ শতাংশ সম্পদকর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাকে কাজ করতে হবে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির এবং গভর্নর ক্যাথি হোকুলের সঙ্গে; যিনি আগেই নতুন আয়করের বিরোধিতা করেছেন। ফলে, মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার আগে স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন মামদানি। আর তার পরেই শুরু হবে কঠিন রাজনৈতিক দরকষাকষি।
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছায়াও তার পিছু ছাড়বে না। সাবেক নিউইয়র্কবাসী এই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আগেই হুমকি দিয়েছেন, মামদানি নির্বাচনে জয়ী হলে নিউইয়র্ক সিটির তহবিল বন্ধ করে দেবে। এমনকি মামদানিকে দেশ থেকে বহিষ্কারের কথাও বলেছেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি মামদানি বাধার সম্মুখীন হন, তাহলে অনেক নিউইয়র্কবাসীর সহানুভূতিও তিনি পাবেন। তার নেতৃত্বকে অনেকে দেখছেন পরিবর্তনের প্রতীক এবং নতুন এক প্রজন্মের আশা হিসেবে।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিউইয়র্কের রাস্তায় নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন। শুধু স্ক্যাভেঞ্জার হান্ট বা সকার টুর্নামেন্ট নয়, ম্যানহাটনের এক সিনিয়র সেন্টারে সালসা নাচ ও তাইচি অনুশীলন করেছেন।

তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা স্প্যানিশ, উর্দু ও হিন্দিতে কথা বলার জন্য, মুসলিম পরিচয়ের জন্য তাকে কটাক্ষ করেছেন। তবুও তিনি প্রচারণার ভিডিও প্রকাশ করতে কখনো দ্বিধা করেননি। সহজভাবে বলতে গেলে, মামদানির এই মনোভাব নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। আর এই আশার শুরু মামদানির নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম ভিডিও প্রকাশের পর থেকেই।
সেই ভিডিও ক্লিপে মামদানির বক্তব্যে, নিউইয়র্কে জীবনযাত্রার ব্যয় অতিমাত্রায় বৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া, শিশুসেবার খরচ ও জীবিকা নির্বাহের সংগ্রাম যা মানুষকে নিত্যজীবনে চাপের মধ্যে রাখে, সেসব উঠে আসে। তিনি সেই ভিডিওতে বলেছিলেন যে জীবন এবার সহজ হবে। এখন যখন তিনি নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবে রূপ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে যাচ্ছেন। আর এবার এমন মুহূর্তও আসতে পারে যখন মামদানির মনে হবে যে এর চেয়ে মেয়র হওয়া সহজ ছিল।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

ভাড়া স্থির রাখা ও শিশুসেবা বিনামূল্যে করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া জোহরান মামদানির সামনে এখন প্রতিশ্রুতিগুলোর বাস্তবে রূপ দেওয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ।
৩৪ বছর বয়সী এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী মেয়র প্রার্থীদের একজন হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল এই শহরকে সাধারণ মানুষের জন্য আরও বসবাসযোগ্য ও সাশ্রয়ী করে তোলার সাহসী অঙ্গীকারে তিনি লাখো সমর্থকের মন জয় করেছেন।
তার এই প্রচারণা নিউইয়র্কসহ বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রায় এক লাখ স্বেচ্ছাসেবক এতে যুক্ত ছিলেন। মামদানির প্রচারণা শুধু শহরের রাজনীতিতেই নয়, বরং সারা আমেরিকার প্রগতিশীল রাজনীতির জন্যই নতুন উদ্দীপনা জুগিয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে অনেক তরুণ প্রার্থী তার অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে নামছেন, যা আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির নীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
তবে এই পরিস্থিতির অন্য আরেকটি দিকও আছে। নিউইয়র্কবাসীর বিরাট প্রত্যাশা এখন জোহরানের সামনে। তাই এখন মামদানির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে পরিণত করে সেই আস্থার প্রতিদান দেওয়া।
আগামী জানুয়ারি থেকে গ্রেসি ম্যানশনে উঠবেন জোহরান মামদানি। ম্যানহাটনের আপার ইস্ট সাইডে অবস্থিত নিউইয়র্কের ঐতিহাসিক এই মেয়র ভবনটিই হবে তার নতুন ঠিকানা। তবে সেসবের আগে জোহরান নিউইয়র্কবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তার এই অভাবনীয় সাফল্য অবশ্যই উদযাপন করবেন। এই উদযাপনের উপলক্ষ আশা ও পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে নতুন এক নেতৃত্ব।
প্রগতিশীল সংগঠন জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস-এর যোগাযোগ পরিচালক উসামা আন্দরাবি বলেন, “আমার মনে হয়, নিউইয়র্কবাসীর জন্য এটি এক ক্ষীণ আলোর রেখা, এমন এক সময়ে যখন চারপাশে ছিল অন্ধকারের প্রলয়।”

জোহরান মামদানির বিজয় শুধু নিউইয়র্ক নয়, আমেরিকার প্রগতিশীল মহলেও নতুন আলো জ্বালিয়েছে। নিজেকে বামপন্থী দাবি করা মামদানি যখন ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জিতল তার পরবর্তী দুই মাসে বামঘেঁষা সংগঠন রান ফর সামথিং এর সঙ্গে ১০ হাজারেরও বেশি নতুন সদস্য যুক্ত হয়েছেন। এদের সবাই নিজেদের মতো করে মামদানির জন্য রাজনৈতিক প্রচারণা শুরু করতে আগ্রহী।
নিউইয়র্কে মামদানির নির্বাচনী প্রচারণা ছিল খুবই সহজ-সরল আর সোশ্যাল মিড়িয়া নির্ভর। এতে তরুণ ও প্রথমবারের ভোটারদের বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের বাইরে কোনো নির্বাচনে এবারই শহরটিতে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন। এ থেকে নিউইয়র্ক রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো তা বোঝা যায়।
এ বিষয়ে আন্দরাবি বলেন, “নিউইয়র্কবাসী দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্ড্রু কুমোর মতো করপোরেটমুখী রাজনীতিবিদদেরই একমাত্র বিকল্প হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। জোহরানের বিজয় প্রমাণ করেছে যে আপনি যদি রিয়েল এস্টেট করপোরেশন, ইসরায়েলপন্থী লবি, রিপাবলিকান ও জনগণের সম্পদ লুটে নেওয়া কোটিপতিদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, তাহলে ভোটাররা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই অবস্থানকেই সমর্থন করবে।”
এই নির্বাচনী লড়াইটি অনেকের চোখে ছিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভবিষ্যতের এক পরীক্ষা। এখানে মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। ৬৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কুমোকে নিউইয়র্কের ধনকুবের আর রিপাবলিকানরা প্রচুর আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। সেজন্য তার প্রচারণা ছিল খুবই জাঁকজমকপূর্ণ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি জোহরান মামদানির কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন। এই ফলাফল শুধু নিউইয়র্ক নয়, গোটা আমেরিকার রাজনীতির সমীকরণ বদলে দিয়েছে।
মামদানির বিজয় এখন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির শীর্ষ নেতাদের জন্য এক বড় দ্বিধা তৈরি করেছে। তারা পুরো নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে একবারও মামদানিকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানাননি। প্রতিনিধি তবে সাম্প্রতিক জরিপগুলো বলছে বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রচলিত ধারা ও নেতৃত্ব দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় হয়ে পড়েছে। অনেক ভোটারই এখন পার্টির মধ্যে মৌলিক পরিবর্তনের দাবি তুলছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মামদানির মতো প্রগতিশীল নেতাদের উত্থান সেই পরিবর্তনেরই প্রতিফলন। আর এই বাস্তবতা এখন ডেমোক্র্যাটিক প্রতিষ্ঠানের জন্য উপেক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। কারণ জনগণ স্পষ্টতই ভিন্ন এক নেতৃত্ব ও নতুন দিকনির্দেশনা চায়।
এদিকে এখন থেকেই কাজে নেমে পড়তে হবে জোহরান মামদানিকে। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় যে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশেষ করে আবাসন, পরিবহন ও শিশুসেবা নিয়ে, এখন সেগুলো বাস্তবায়নের পালা। তবে প্রশ্ন হলো, দ্রুতগামী জীবনের জন্য খ্যাত এই শহরে মেয়রের চেয়ারে বসার পর নিউইয়র্কবাসী কতটা ধৈর্য দেখাবে?
সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাক্সওয়েল স্কুল অব সিটিজেনশিপ অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পলিটিক্যালদ সায়েন্সের অধ্যাপক গ্রান্ট রিহার বলেন, “নিউইয়র্কবাসীর ধৈর্য আদৌ আছে কি না, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।”
তিনি আরও বলেন, “মামদানি এতদিন যা যা বলেছে সেসবকে এখন বাস্তবে রুপ দিতে হবে। তবে কিন্তু নিউইয়র্ক এমনিতেই এক কঠিন প্রশাসনিক শহর। অনেকের মতে, আমেরিকায় প্রেসিডেন্টের পর সবচেয়ে কঠিন রাজনৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হওয়া। তাই মামাদানির জন্য কোনোকিছুই খুব একটা সহজ হবে না।”
তবে মামদানি শুধু প্রতিশ্রুতিই দেননি, সেগুলো কীভাব বাস্তাবায়ন করতে হবে তার উপায়ও স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। আর এজন্যই মামদানির নির্বাচনী প্রচারণা মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটিকে সাশ্রয়ী করার তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তিনি কর্পোরেট কর বাড়ানো এবং শহরের ধনী নাগরিকদের ওপর ২ শতাংশ সম্পদকর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাকে কাজ করতে হবে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির এবং গভর্নর ক্যাথি হোকুলের সঙ্গে; যিনি আগেই নতুন আয়করের বিরোধিতা করেছেন। ফলে, মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার আগে স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন মামদানি। আর তার পরেই শুরু হবে কঠিন রাজনৈতিক দরকষাকষি।
এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছায়াও তার পিছু ছাড়বে না। সাবেক নিউইয়র্কবাসী এই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আগেই হুমকি দিয়েছেন, মামদানি নির্বাচনে জয়ী হলে নিউইয়র্ক সিটির তহবিল বন্ধ করে দেবে। এমনকি মামদানিকে দেশ থেকে বহিষ্কারের কথাও বলেছেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি মামদানি বাধার সম্মুখীন হন, তাহলে অনেক নিউইয়র্কবাসীর সহানুভূতিও তিনি পাবেন। তার নেতৃত্বকে অনেকে দেখছেন পরিবর্তনের প্রতীক এবং নতুন এক প্রজন্মের আশা হিসেবে।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিউইয়র্কের রাস্তায় নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন। শুধু স্ক্যাভেঞ্জার হান্ট বা সকার টুর্নামেন্ট নয়, ম্যানহাটনের এক সিনিয়র সেন্টারে সালসা নাচ ও তাইচি অনুশীলন করেছেন।

তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা স্প্যানিশ, উর্দু ও হিন্দিতে কথা বলার জন্য, মুসলিম পরিচয়ের জন্য তাকে কটাক্ষ করেছেন। তবুও তিনি প্রচারণার ভিডিও প্রকাশ করতে কখনো দ্বিধা করেননি। সহজভাবে বলতে গেলে, মামদানির এই মনোভাব নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে নতুন আশা জাগিয়েছে। আর এই আশার শুরু মামদানির নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম ভিডিও প্রকাশের পর থেকেই।
সেই ভিডিও ক্লিপে মামদানির বক্তব্যে, নিউইয়র্কে জীবনযাত্রার ব্যয় অতিমাত্রায় বৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া, শিশুসেবার খরচ ও জীবিকা নির্বাহের সংগ্রাম যা মানুষকে নিত্যজীবনে চাপের মধ্যে রাখে, সেসব উঠে আসে। তিনি সেই ভিডিওতে বলেছিলেন যে জীবন এবার সহজ হবে। এখন যখন তিনি নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবে রূপ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে যাচ্ছেন। আর এবার এমন মুহূর্তও আসতে পারে যখন মামদানির মনে হবে যে এর চেয়ে মেয়র হওয়া সহজ ছিল।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান