চরচা ডেস্ক

গত সপ্তাহে গুলিতে আহত হওয়ার পর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম তরুণ নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে বাংলাদেশ আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে। তার এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সহিংস বিক্ষোভ, শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর কার্যালয়ে হামলা এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশের আসন্ন নির্বাচনপূর্ব নাজুক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ এবং এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতির মোড়ও ঘুরে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন এশিয়া নিউজিল্যান্ড ফাউন্ডেশনের এশিয়া মিডিয়া সেন্টারের মিডিয়া উপদেষ্টা ফারহীন হুসেন।
এশিয়া মিডিয়া সেন্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ৩২ বছর বয়সী এই অ্যাক্টিভিস্টের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে রাজপথে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাদির মৃত্যু কেবল তার সমর্থকদের মধ্যেই নয় বরং এর বাইরেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তিনি ছাত্র সংগঠন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র ছিলেন। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার ওপর গুলি চালানোর ঠিক একদিন আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল, যা এই হত্যাকাণ্ডকে আরও গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য এনে দেয়।
এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এটি হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচন। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার বিপরীতে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ঢাকা জুড়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ শুরু হয়, যা রাতারাতি চরম রূপ ধারণ করে। বিক্ষোভকারীরা দেশের অন্যতম প্রভাবশালী দুটি সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এবং ‘প্রথম আলো’র কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পর্যবেক্ষকরা এই হামলার মাত্রাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গণমাধ্যমের ওপর এই হামলা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং জননিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই অশান্তি ঢাকার বাইরেও প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এক নেতার বাড়িতে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এক শিশু নিহত এবং আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে। পুলিশের তথ্যমতে, হামলাটি গভীর রাতে ব্যবসায়ী ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেনের বাসভবনে ঘটে।
অঞ্চলের ওপর এর প্রভাব কী?
এই অস্থিরতা বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রভাব বহন করছে। ভারত ও মিয়ানমারের মাঝামাঝি অবস্থানে বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্বের কারণে এখানে দীর্ঘায়িত অস্থিরতা বাণিজ্য করিডোরকে ব্যাহত করতে পারে। পাশাপাশি নৌ-চলাচলের পথকে প্রভাবিত করতে পারে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও উৎপাদন খাতের সাপ্লাই চেইন বাধার সম্মুখীন হতে পারে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তারের জন্য বিদেশি শক্তিগুলোর সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।
এই সংকট আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হাদির হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন এবং ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সাথে সংগতি রেখে একটি দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বচ্ছ তদন্ত’ পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি সকলকে সংযম প্রদর্শনের অনুরোধ করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক একইভাবে এই তরুণ নেতার মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
হাদির হত্যাকাণ্ড এবং শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ককে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে জটিল পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে তীব্র ভারত-বিরোধী সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন বন্ধের দাবি তুলেছেন এবং চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
হাদির হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর (সেভেন সিস্টার্স) নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। বাংলাদেশের কয়েকজন নেতা এই এলাকা নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে করা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধেও ঢাকার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একচ্ছত্র প্রভাব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ এখন ভারতের পাশাপাশি চীন, পাকিস্তান ও আমেরিকার সঙ্গে বহুমুখী সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে নতুন শক্তির উত্থানের ফলে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে, যা ভারতের জন্য নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন তার প্রভাব আরও বৃদ্ধির সুযোগ পাচ্ছে।
এদিকে ভারতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অস্থিরতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, চলমান অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল করতে পারে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে, বিশেষ করে ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে।
গত নভেম্বরে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বিক্ষোভ দমনে জড়িত থাকার কারণে হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। ট্রাইব্যুনাল তাকে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া এবং নৃশংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়াসহ একাধিক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে।
শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সহিংসতা বাংলাদেশকে আবারও এক নাজুক সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সামনে নির্বাচন এবং জনআস্থার সংকট বজায় থাকা অবস্থায় আগামী কয়েকদিনে বোঝা যাবে, বাংলাদেশ আরও বেশি অস্থিতিশীলতার দিকে না গিয়ে শোক, বিচার এবং ভিন্নমতকে সামলে নিয়ে সামনে এগোতে পারে কি না।

গত সপ্তাহে গুলিতে আহত হওয়ার পর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম তরুণ নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে বাংলাদেশ আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে। তার এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সহিংস বিক্ষোভ, শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর কার্যালয়ে হামলা এবং কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশের আসন্ন নির্বাচনপূর্ব নাজুক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ এবং এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতির মোড়ও ঘুরে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন এশিয়া নিউজিল্যান্ড ফাউন্ডেশনের এশিয়া মিডিয়া সেন্টারের মিডিয়া উপদেষ্টা ফারহীন হুসেন।
এশিয়া মিডিয়া সেন্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ৩২ বছর বয়সী এই অ্যাক্টিভিস্টের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে রাজপথে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাদির মৃত্যু কেবল তার সমর্থকদের মধ্যেই নয় বরং এর বাইরেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তিনি ছাত্র সংগঠন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র ছিলেন। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার ওপর গুলি চালানোর ঠিক একদিন আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল, যা এই হত্যাকাণ্ডকে আরও গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য এনে দেয়।
এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এটি হবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচন। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার বিপরীতে স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ঢাকা জুড়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ শুরু হয়, যা রাতারাতি চরম রূপ ধারণ করে। বিক্ষোভকারীরা দেশের অন্যতম প্রভাবশালী দুটি সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এবং ‘প্রথম আলো’র কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পর্যবেক্ষকরা এই হামলার মাত্রাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
গণমাধ্যমের ওপর এই হামলা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং জননিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই অশান্তি ঢাকার বাইরেও প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এক নেতার বাড়িতে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এক শিশু নিহত এবং আরও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে। পুলিশের তথ্যমতে, হামলাটি গভীর রাতে ব্যবসায়ী ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেনের বাসভবনে ঘটে।
অঞ্চলের ওপর এর প্রভাব কী?
এই অস্থিরতা বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রভাব বহন করছে। ভারত ও মিয়ানমারের মাঝামাঝি অবস্থানে বাংলাদেশের ভৌগোলিক গুরুত্বের কারণে এখানে দীর্ঘায়িত অস্থিরতা বাণিজ্য করিডোরকে ব্যাহত করতে পারে। পাশাপাশি নৌ-চলাচলের পথকে প্রভাবিত করতে পারে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষ করে তৈরি পোশাক ও উৎপাদন খাতের সাপ্লাই চেইন বাধার সম্মুখীন হতে পারে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তারের জন্য বিদেশি শক্তিগুলোর সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।
এই সংকট আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হাদির হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন এবং ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সাথে সংগতি রেখে একটি দ্রুত, নিরপেক্ষ, পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বচ্ছ তদন্ত’ পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি সকলকে সংযম প্রদর্শনের অনুরোধ করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক একইভাবে এই তরুণ নেতার মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
হাদির হত্যাকাণ্ড এবং শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ককে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে জটিল পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে তীব্র ভারত-বিরোধী সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন বন্ধের দাবি তুলেছেন এবং চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
হাদির হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর (সেভেন সিস্টার্স) নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। বাংলাদেশের কয়েকজন নেতা এই এলাকা নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে করা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধেও ঢাকার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার পতনের পর দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একচ্ছত্র প্রভাব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ এখন ভারতের পাশাপাশি চীন, পাকিস্তান ও আমেরিকার সঙ্গে বহুমুখী সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে নতুন শক্তির উত্থানের ফলে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে, যা ভারতের জন্য নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। অন্যদিকে, বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন তার প্রভাব আরও বৃদ্ধির সুযোগ পাচ্ছে।
এদিকে ভারতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অস্থিরতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, চলমান অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল করতে পারে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে, বিশেষ করে ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে।
গত নভেম্বরে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বিক্ষোভ দমনে জড়িত থাকার কারণে হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। ট্রাইব্যুনাল তাকে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া এবং নৃশংসতা প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়াসহ একাধিক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে।
শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সহিংসতা বাংলাদেশকে আবারও এক নাজুক সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সামনে নির্বাচন এবং জনআস্থার সংকট বজায় থাকা অবস্থায় আগামী কয়েকদিনে বোঝা যাবে, বাংলাদেশ আরও বেশি অস্থিতিশীলতার দিকে না গিয়ে শোক, বিচার এবং ভিন্নমতকে সামলে নিয়ে সামনে এগোতে পারে কি না।

কোনটি তথ্য, কোনটি অপতথ্য, তার কোনো বাছবিচার কেউ করছে না। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে ঠিক এ উৎকণ্ঠাই প্রকাশ করা হয়েছিল প্রশাসন থেকে। নির্বাচনের সময়ে এ অপতথ্যের বাড়বাড়ন্ত ঠেকানোর কী প্রস্তুতি নির্বাচনের কমিশনের আছে–সে প্রশ্ন এরই মধ্যে উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।