চরচা ডেস্ক

খাবার নেই, স্বাস্থ্য সেবা নেই, শিক্ষা নেই, কাজ নেই। আছে শুধু অনিরাপত্তা আর অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসে এভাবেই নিজের হতাশার কথা বলছিলেন জামিলদা খাতুন। তার আট সদস্যের পরিবার ২০১৭ সাল থেকে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আগত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিশাল জনগোষ্ঠীর অংশ, যাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম অভিযান এখনও স্মৃতিতে তাজা।
কক্সবাজারে বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সাত বছর পর এই মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। অর্থনৈতিক সহায়তা কমছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, আর নতুন করে সহিংসতার ছায়া নেমে আসছে।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর সবচেয়ে তাৎক্ষণিক সংকট হলো অর্থায়নে ব্যাপক কাটছাঁট। দীর্ঘদিনের প্রধান দাতা আমেরিকা, তাদের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ হওয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা কমে গেছে।
২০২৪ সালে যেখানে প্রায় ৩০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছিল, ২০২৫ সালে সেই পরিমাণ অনেক কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ জাতিসংঘের হিসাব বলছে, পুরো সহায়তা কার্যক্রম চালাতে এই বছর প্রয়োজন ৯৩ দশমিক ৪ কোটি ডলার। যার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ অর্থই এখন পর্যন্ত জোগাড় হয়েছে।
ফলে মাঠপর্যায়ে এর প্রভাব স্পষ্ট। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা শিবিরে ৪০ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে, ২৫ শতাংশ নারী রক্ত স্বল্পতায় (অ্যানিমিয়া) ভুগছে। ইতিমধ্যে শিবিরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলগুলো একের পর এক বন্ধ হচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করেছে, চলতি বছরের মধ্যে জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে এবং বছরের শেষে খাদ্য রেশনও বন্ধ হতে পারে।

রাখাইনে মিয়ানমারের সেনা জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই নতুনভাবে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করছে। আরাকান রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ করছে, তবে তাদের বিরুদ্ধেও রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে দেড় লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার সবচেয়ে বড় সংখ্যা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা রোহিঙ্গা নীতিতেও প্রভাব ফেলছে। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বাংলাদেশে আগামী বছর নতুন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা বলছেন,রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই সমাধান।
এদিকে শিবিরে সংগঠিত অপরাধচক্র, চাঁদাবাজি ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য বাড়ছে। কিছু মহল মনে করছে, এই গোষ্ঠীগুলোকে এসব কাজে উৎসাহিত করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে। ফলে, শিবির এখন আরও বিপজ্জনক ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
এমন পরিস্থিতিতে চরম হতাশায় রোহিঙ্গারা এখন সমুদ্রপথে পালানোর ঝুঁকি নিচ্ছে। ২০২৫ সালের মে মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি নৌকা ডুবে ৪০০ জনেরও বেশি শরণার্থী মারা যায়। তবুও কোনো দেশ তাদের নিতে রাজি হচ্ছে না।
আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়। এর মাধ্যমে ২০২২ সাল থেকে ১৬ হাজার রোহিঙ্গা আমেরিকায় পুনর্বাসিত হয়েছিল।
এমনকি ভারতের নৌবাহিনীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে, তারা রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানানো হয়েছে। একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী ফোনে তার ভাইকে জানান, ‘আমাদের হাত বেঁধে, চোখ ঢেকে বন্দির মতো নৌকায় তোলা হয়েছিল। তারপর সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হলো।’
জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টমাস অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, এই অভিযোগ প্রমাণের মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সবচেয়ে জরুরি হলো কক্সবাজারে মানবিক সহায়তার প্রবাহ অব্যাহত রাখা। এর মধ্যে পর্যাপ্ত খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা এবং উন্নত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। বাংলাদেশের উচিত রোহিঙ্গাদের জন্য কাজের সুযোগ ও স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে কিছুটা শিথিলতা দেখানো।
একইসঙ্গে শিবিরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন, যাতে শান্তিপূর্ণ রোহিঙ্গা নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে যদি চীন চায় তাহলে এ ক্ষেত্রে তারা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দেশটির সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া রাখাইনে তাদের ব্যাপক বিনিয়োগও রয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন এক ভুলে যাওয়া সংকট। এটি ধীরে ধীরে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, যদি দ্রুত আন্তর্জাতিক মনোযোগ না ফিরে আসে, কক্সবাজারের এই মানবিক বিপর্যয় শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয়, সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে।

খাবার নেই, স্বাস্থ্য সেবা নেই, শিক্ষা নেই, কাজ নেই। আছে শুধু অনিরাপত্তা আর অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসে এভাবেই নিজের হতাশার কথা বলছিলেন জামিলদা খাতুন। তার আট সদস্যের পরিবার ২০১৭ সাল থেকে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আগত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিশাল জনগোষ্ঠীর অংশ, যাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম অভিযান এখনও স্মৃতিতে তাজা।
কক্সবাজারে বর্তমানে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সাত বছর পর এই মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। অর্থনৈতিক সহায়তা কমছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে, আর নতুন করে সহিংসতার ছায়া নেমে আসছে।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর সবচেয়ে তাৎক্ষণিক সংকট হলো অর্থায়নে ব্যাপক কাটছাঁট। দীর্ঘদিনের প্রধান দাতা আমেরিকা, তাদের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ হওয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা কমে গেছে।
২০২৪ সালে যেখানে প্রায় ৩০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছিল, ২০২৫ সালে সেই পরিমাণ অনেক কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ জাতিসংঘের হিসাব বলছে, পুরো সহায়তা কার্যক্রম চালাতে এই বছর প্রয়োজন ৯৩ দশমিক ৪ কোটি ডলার। যার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ অর্থই এখন পর্যন্ত জোগাড় হয়েছে।
ফলে মাঠপর্যায়ে এর প্রভাব স্পষ্ট। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা শিবিরে ৪০ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে, ২৫ শতাংশ নারী রক্ত স্বল্পতায় (অ্যানিমিয়া) ভুগছে। ইতিমধ্যে শিবিরের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও স্কুলগুলো একের পর এক বন্ধ হচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করেছে, চলতি বছরের মধ্যে জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে এবং বছরের শেষে খাদ্য রেশনও বন্ধ হতে পারে।

রাখাইনে মিয়ানমারের সেনা জান্তা ও আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই নতুনভাবে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করছে। আরাকান রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা এখন আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ করছে, তবে তাদের বিরুদ্ধেও রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের শুরু থেকে দেড় লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার সবচেয়ে বড় সংখ্যা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা রোহিঙ্গা নীতিতেও প্রভাব ফেলছে। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বাংলাদেশে আগামী বছর নতুন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা বলছেন,রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই সমাধান।
এদিকে শিবিরে সংগঠিত অপরাধচক্র, চাঁদাবাজি ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য বাড়ছে। কিছু মহল মনে করছে, এই গোষ্ঠীগুলোকে এসব কাজে উৎসাহিত করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে। ফলে, শিবির এখন আরও বিপজ্জনক ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
এমন পরিস্থিতিতে চরম হতাশায় রোহিঙ্গারা এখন সমুদ্রপথে পালানোর ঝুঁকি নিচ্ছে। ২০২৫ সালের মে মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি নৌকা ডুবে ৪০০ জনেরও বেশি শরণার্থী মারা যায়। তবুও কোনো দেশ তাদের নিতে রাজি হচ্ছে না।
আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়। এর মাধ্যমে ২০২২ সাল থেকে ১৬ হাজার রোহিঙ্গা আমেরিকায় পুনর্বাসিত হয়েছিল।
এমনকি ভারতের নৌবাহিনীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে, তারা রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানানো হয়েছে। একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী ফোনে তার ভাইকে জানান, ‘আমাদের হাত বেঁধে, চোখ ঢেকে বন্দির মতো নৌকায় তোলা হয়েছিল। তারপর সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হলো।’
জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার টমাস অ্যান্ড্রুজ বলেছেন, এই অভিযোগ প্রমাণের মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সবচেয়ে জরুরি হলো কক্সবাজারে মানবিক সহায়তার প্রবাহ অব্যাহত রাখা। এর মধ্যে পর্যাপ্ত খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা এবং উন্নত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। বাংলাদেশের উচিত রোহিঙ্গাদের জন্য কাজের সুযোগ ও স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণে কিছুটা শিথিলতা দেখানো।
একইসঙ্গে শিবিরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন, যাতে শান্তিপূর্ণ রোহিঙ্গা নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে যদি চীন চায় তাহলে এ ক্ষেত্রে তারা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দেশটির সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া রাখাইনে তাদের ব্যাপক বিনিয়োগও রয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন এক ভুলে যাওয়া সংকট। এটি ধীরে ধীরে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, যদি দ্রুত আন্তর্জাতিক মনোযোগ না ফিরে আসে, কক্সবাজারের এই মানবিক বিপর্যয় শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয়, সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে।