অর্ণব সান্যাল

ঠাকুরমার ঝুলি এই বাংলার নিজস্ব রূপকথার ঝুলি। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা রূপকথা সংগ্রহ করেছিলেন ঢাকার কাছেই জন্ম নেওয়া দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। সেসব এক করে একটি ঝুলিতে ভরেছিলেন তিনি। ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রথম প্রকাশিত হওয়া এই ঝুলি এখনো এ বঙ্গের শিশু-কিশোরদের রূপকথার তৃষ্ণা মেটানোর ভালো উৎস।
যদিও আমাদের দেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই রূপকথার কমতি নেই! ঠাকুরমার ঝুলির প্রয়োজনীয়তা এখন তাই প্রায় ফুরিয়েছে। কারণ, এসব নতুন নতুন রূপকথার কাছে ডালিম কুমারের গল্পে বর্ণিত কল্পনাও নস্যি। আগে সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের কথিত উন্নয়নের রূপকথা তৈরি ও ছড়ানো হতো, সেসব এখনো বিদ্যমান। বর্তমানে শোনানো হয় রাতারাতি পরিবর্তনের রূপকথা। আর বাস্তবতা অস্বীকারের মধ্য দিয়ে আরেকটি ভিন্ন পরাবাস্তব জগৎ তৈরির চেষ্টা তো আরও প্রবল!
তবে বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি রূপকথা রচিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭১ সাল নিয়ে। স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে, দেশের জন্মের ইতিহাস নিয়ে গত প্রায় দেড় বছর ধরে নিত্যনতুন তথ্য পাচ্ছি আমরা। সেসব তথ্য ও বিশ্লেষণের একটি, আরেকটির চেয়ে রঙচঙা, রগরগে। সেসব এতটাই চমক জাগানিয়া যে, আমজনতার চমকিত হওয়ার শক্তিও নিঃশেষ হওয়ার পথে।
কেউ বলছেন, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ই হয়নি, হয়েছে ভারতের বিজয়। কেউ আবার বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় জড়িত ছিল না স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর, আলশামস গং। কেউ কেউ আবার ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষের ওপর চালানো পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার মতো কর্মকাণ্ডের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অক্লেশে। কেউ আবার বলে ওঠেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল ভারতীয় ষড়যন্ত্র কেবল! আর নিহত, আহত বা নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা অস্বীকার করার প্রবণতা তো প্রবল। সেই প্রবণতা কোনো নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে হয় না, ইতিহাসকে আরও নৈব্যর্ক্তিক করার ইচ্ছায় হয় না, বরং হয় মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করার মানসিকতায়।
অন্যদিকে প্রতিবেশী ভারতের সাবেক, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরা তো অনেক বছর ধরেই ১৬ ডিসেম্বরে এমনভাবে বার্তা লেখেন, তাতে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধটা কেবল ভারতীয় সেনারাই করেছিল, আর তাতে বাংলাদেশের মানুষের অংশগ্রহণও ছিল না! ভারতীয়রা তো বিদেশি, তবে এই দেশে জন্ম নেওয়া মানুষেরাও যখন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরকে ‘ভাঁওতা’ বলে জোর গলায় দাবি করেন, তখন আসলে কিছু বলারও থাকে না। অবুঝকে বোঝানো যায়, কিন্তু যারা বুঝবে না বলেই অবুঝ সেজেছে, তাদের আর বোঝানোর কী আছে!
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন ঘটনা কি স্বাধীন বাংলাদেশে এবারই প্রথম? নাহ, তবে মাত্রার রকমফের আছে। নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, জ্ঞান হওয়ার পর গত শতকের সেই নব্বইয়ের দশক থেকেই আমরা দেখে আসছি একটি দেশের জন্মের ইতিহাসের মুহুর্মুহু পাল্টে যাওয়া। সরকার বদলের সাথে সাথেই আমরা দেখেছি, স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের ইতিহাসের অধ্যায়ের বদলে যাওয়া। মজার বিষয় হলো, একটি স্বাধীন দেশে সরকারিভাবে তৈরি করা পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা একেক সরকারের আমলে একেকজন দিতেন, কারও ভূমিকা ছোট হতো, কারও বড় হতো! অথচ যেসব ব্যক্তিত্বের অবদান নিয়ে তুচ্ছ রাজনৈতিক স্বার্থে এমন কাটাছেঁড়া করা হতো, তারা প্রত্যেকে স্বমহিমায় এতটাই উজ্জ্বল ছিলেন যে, এসব কর্মকাণ্ডে তাদের ঔজ্বল্য কমত বৈ বাড়ত না। এই পৃথিবীতে থাকা স্বাধীন দেশগুলোতে জন্মের ইতিহাসের এমন ঘন ঘন বদলানোর উদাহরণ পাওয়া বেশ কঠিন। অথচ সেই কাজটিই আমরা করে গেছি বছরের পর বছর।
ফলে এই দেশের জন্মের ইতিহাস স্বাধীনতার কিছুদিনের মধ্যেই অত্যন্ত বিতর্কিত একটি বিষয়ে পরিণত হয়। এবং এসব বিতর্ককে তেলে-জলে সতেজ রাখার বন্দোবস্তও হয় সব পক্ষের সোৎসাহে। এ জায়গায় দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকেরা বাদ সাধতে পারতেন। একটি নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যক্তিক ইতিহাস রচনার মাধ্যমে এবং সেটিকে প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক প্রতিষ্ঠা দিয়েই এই কাজটি করা যেত। জাতি অন্তত কোনো দল বা পক্ষের মতাদর্শের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের একটি সত্যিকারের ইতিহাস পেত। সবচেয়ে উপকার যেটি হতো, সেটি হলো নানামুখী বা উদ্দেশের ন্যারেটিভের বাইরে একটি ‘কালেকটিভ ন্যারেটিভ’ তৈরির সুযোগ হতো। কিন্তু এ দেশের সিংহভাগ শিক্ষাবিদ, গবেষক বা ঐতিহাসিকেরাও সেই দায়িত্ব পালন করেননি। এতে আখেরে লাভ হয়েছে এবং হচ্ছে স্বাধীনতার সত্যিকারের বিরোধীদের। ইতিহাসের বয়ানে বেশি ফাঁকফোঁকর রাখলে এবং মুক্তিযুদ্ধকে সত্যি মানা মানুষেরাই যদি সেই বয়ানকে বারংবার বিতর্কিত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়, তবে বিরোধীদের কাজ সহজ হয়ে যায়।
আর সেই কাজটিই এখন পূর্ণদ্যোমে চলছে। বিতর্ক তৈরির বদলে চলে এসেছে পুরো অস্বীকারের প্রচার। ধ্রুব সত্যের মতো জানা তথ্যও এখন উল্টে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঔদ্ধত্য এবং গায়ের ও গলার জোর এ ক্ষেত্রে প্রধান অনুষঙ্গ। তাই স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর শুনতে হচ্ছে যে–একাত্তরের স্বাধীনতা নাকি ‘মিথ্যা’!
এখনকার এসব প্রচার, প্রপাগান্ডার বিপরীতে সরকারের কোনো প্রতিবাদ নেই, বয়ান নেই, এমনকি উল্লেখযোগ্য বিবৃতিও নেই! অথচ বর্তমান সরকারের কাছ থেকে একটি প্রকৃষ্ট ও সাহসী বিবৃতি অন্তত আশা করাই যায়। কিন্তু সেখানেও বেশির ভাগ সময় মিলেছে হিরণ্ময় নীরবতা। এই নীরবতাকে কোনো নিন্দুক যদি ‘সম্মতির লক্ষণ’ হিসেবে ধরে নিতে চায়, তবে কি তাকে দোষ দেওয়া যাবে?
তাই একাত্তর, একাত্তরের ইতিহাস, একাত্তরের শহীদ, একাত্তরের যোদ্ধা ও যুদ্ধ–সবই এখন বড্ড বেশি একা! একাকীত্ব একাত্তরের আগেও ছিল। রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠী বা দলগত সংকীর্ণতা, স্বার্থ বা বয়ানের মোড়কে অতীতেও একা ছিল একাত্তর। তবে এতটা জাপ্টে হয়তো ধরেনি কখনো, এতটা আক্রান্তও হয়তো হয়নি।
একটি আশাবাদ দিয়ে শেষ করা যাক। ‘একাত্তর এই জবুথবু দশা কাটিয়ে উঠুক’–স্বাধীনতার এত বছর পর এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক প্রার্থনা আর কী হতে পারে! খটকা লাগল? হ্যাঁ, এটাই এখন ‘আশাবাদ’।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, চরচা

ঠাকুরমার ঝুলি এই বাংলার নিজস্ব রূপকথার ঝুলি। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা রূপকথা সংগ্রহ করেছিলেন ঢাকার কাছেই জন্ম নেওয়া দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। সেসব এক করে একটি ঝুলিতে ভরেছিলেন তিনি। ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রথম প্রকাশিত হওয়া এই ঝুলি এখনো এ বঙ্গের শিশু-কিশোরদের রূপকথার তৃষ্ণা মেটানোর ভালো উৎস।
যদিও আমাদের দেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই রূপকথার কমতি নেই! ঠাকুরমার ঝুলির প্রয়োজনীয়তা এখন তাই প্রায় ফুরিয়েছে। কারণ, এসব নতুন নতুন রূপকথার কাছে ডালিম কুমারের গল্পে বর্ণিত কল্পনাও নস্যি। আগে সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের কথিত উন্নয়নের রূপকথা তৈরি ও ছড়ানো হতো, সেসব এখনো বিদ্যমান। বর্তমানে শোনানো হয় রাতারাতি পরিবর্তনের রূপকথা। আর বাস্তবতা অস্বীকারের মধ্য দিয়ে আরেকটি ভিন্ন পরাবাস্তব জগৎ তৈরির চেষ্টা তো আরও প্রবল!
তবে বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি রূপকথা রচিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭১ সাল নিয়ে। স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে, দেশের জন্মের ইতিহাস নিয়ে গত প্রায় দেড় বছর ধরে নিত্যনতুন তথ্য পাচ্ছি আমরা। সেসব তথ্য ও বিশ্লেষণের একটি, আরেকটির চেয়ে রঙচঙা, রগরগে। সেসব এতটাই চমক জাগানিয়া যে, আমজনতার চমকিত হওয়ার শক্তিও নিঃশেষ হওয়ার পথে।
কেউ বলছেন, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ই হয়নি, হয়েছে ভারতের বিজয়। কেউ আবার বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় জড়িত ছিল না স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর, আলশামস গং। কেউ কেউ আবার ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষের ওপর চালানো পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার মতো কর্মকাণ্ডের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অক্লেশে। কেউ আবার বলে ওঠেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল ভারতীয় ষড়যন্ত্র কেবল! আর নিহত, আহত বা নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা অস্বীকার করার প্রবণতা তো প্রবল। সেই প্রবণতা কোনো নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে হয় না, ইতিহাসকে আরও নৈব্যর্ক্তিক করার ইচ্ছায় হয় না, বরং হয় মুক্তিযুদ্ধকে অবজ্ঞা করার মানসিকতায়।
অন্যদিকে প্রতিবেশী ভারতের সাবেক, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরা তো অনেক বছর ধরেই ১৬ ডিসেম্বরে এমনভাবে বার্তা লেখেন, তাতে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধটা কেবল ভারতীয় সেনারাই করেছিল, আর তাতে বাংলাদেশের মানুষের অংশগ্রহণও ছিল না! ভারতীয়রা তো বিদেশি, তবে এই দেশে জন্ম নেওয়া মানুষেরাও যখন ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরকে ‘ভাঁওতা’ বলে জোর গলায় দাবি করেন, তখন আসলে কিছু বলারও থাকে না। অবুঝকে বোঝানো যায়, কিন্তু যারা বুঝবে না বলেই অবুঝ সেজেছে, তাদের আর বোঝানোর কী আছে!
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন ঘটনা কি স্বাধীন বাংলাদেশে এবারই প্রথম? নাহ, তবে মাত্রার রকমফের আছে। নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, জ্ঞান হওয়ার পর গত শতকের সেই নব্বইয়ের দশক থেকেই আমরা দেখে আসছি একটি দেশের জন্মের ইতিহাসের মুহুর্মুহু পাল্টে যাওয়া। সরকার বদলের সাথে সাথেই আমরা দেখেছি, স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ের ইতিহাসের অধ্যায়ের বদলে যাওয়া। মজার বিষয় হলো, একটি স্বাধীন দেশে সরকারিভাবে তৈরি করা পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা একেক সরকারের আমলে একেকজন দিতেন, কারও ভূমিকা ছোট হতো, কারও বড় হতো! অথচ যেসব ব্যক্তিত্বের অবদান নিয়ে তুচ্ছ রাজনৈতিক স্বার্থে এমন কাটাছেঁড়া করা হতো, তারা প্রত্যেকে স্বমহিমায় এতটাই উজ্জ্বল ছিলেন যে, এসব কর্মকাণ্ডে তাদের ঔজ্বল্য কমত বৈ বাড়ত না। এই পৃথিবীতে থাকা স্বাধীন দেশগুলোতে জন্মের ইতিহাসের এমন ঘন ঘন বদলানোর উদাহরণ পাওয়া বেশ কঠিন। অথচ সেই কাজটিই আমরা করে গেছি বছরের পর বছর।
ফলে এই দেশের জন্মের ইতিহাস স্বাধীনতার কিছুদিনের মধ্যেই অত্যন্ত বিতর্কিত একটি বিষয়ে পরিণত হয়। এবং এসব বিতর্ককে তেলে-জলে সতেজ রাখার বন্দোবস্তও হয় সব পক্ষের সোৎসাহে। এ জায়গায় দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকেরা বাদ সাধতে পারতেন। একটি নিরপেক্ষ ও নৈর্ব্যক্তিক ইতিহাস রচনার মাধ্যমে এবং সেটিকে প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক প্রতিষ্ঠা দিয়েই এই কাজটি করা যেত। জাতি অন্তত কোনো দল বা পক্ষের মতাদর্শের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের একটি সত্যিকারের ইতিহাস পেত। সবচেয়ে উপকার যেটি হতো, সেটি হলো নানামুখী বা উদ্দেশের ন্যারেটিভের বাইরে একটি ‘কালেকটিভ ন্যারেটিভ’ তৈরির সুযোগ হতো। কিন্তু এ দেশের সিংহভাগ শিক্ষাবিদ, গবেষক বা ঐতিহাসিকেরাও সেই দায়িত্ব পালন করেননি। এতে আখেরে লাভ হয়েছে এবং হচ্ছে স্বাধীনতার সত্যিকারের বিরোধীদের। ইতিহাসের বয়ানে বেশি ফাঁকফোঁকর রাখলে এবং মুক্তিযুদ্ধকে সত্যি মানা মানুষেরাই যদি সেই বয়ানকে বারংবার বিতর্কিত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়, তবে বিরোধীদের কাজ সহজ হয়ে যায়।
আর সেই কাজটিই এখন পূর্ণদ্যোমে চলছে। বিতর্ক তৈরির বদলে চলে এসেছে পুরো অস্বীকারের প্রচার। ধ্রুব সত্যের মতো জানা তথ্যও এখন উল্টে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঔদ্ধত্য এবং গায়ের ও গলার জোর এ ক্ষেত্রে প্রধান অনুষঙ্গ। তাই স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর শুনতে হচ্ছে যে–একাত্তরের স্বাধীনতা নাকি ‘মিথ্যা’!
এখনকার এসব প্রচার, প্রপাগান্ডার বিপরীতে সরকারের কোনো প্রতিবাদ নেই, বয়ান নেই, এমনকি উল্লেখযোগ্য বিবৃতিও নেই! অথচ বর্তমান সরকারের কাছ থেকে একটি প্রকৃষ্ট ও সাহসী বিবৃতি অন্তত আশা করাই যায়। কিন্তু সেখানেও বেশির ভাগ সময় মিলেছে হিরণ্ময় নীরবতা। এই নীরবতাকে কোনো নিন্দুক যদি ‘সম্মতির লক্ষণ’ হিসেবে ধরে নিতে চায়, তবে কি তাকে দোষ দেওয়া যাবে?
তাই একাত্তর, একাত্তরের ইতিহাস, একাত্তরের শহীদ, একাত্তরের যোদ্ধা ও যুদ্ধ–সবই এখন বড্ড বেশি একা! একাকীত্ব একাত্তরের আগেও ছিল। রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠী বা দলগত সংকীর্ণতা, স্বার্থ বা বয়ানের মোড়কে অতীতেও একা ছিল একাত্তর। তবে এতটা জাপ্টে হয়তো ধরেনি কখনো, এতটা আক্রান্তও হয়তো হয়নি।
একটি আশাবাদ দিয়ে শেষ করা যাক। ‘একাত্তর এই জবুথবু দশা কাটিয়ে উঠুক’–স্বাধীনতার এত বছর পর এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক প্রার্থনা আর কী হতে পারে! খটকা লাগল? হ্যাঁ, এটাই এখন ‘আশাবাদ’।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, চরচা

‘ব্যাটল অব শিরোমণি’র শুরুটা হয়েছিল ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১। ভারতীয় বাহিনীর মেজর মহেন্দ্র সিং ও মুক্তিবাহিনীর মেজর ওসমান গনির নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর একটা বড় কনভয় খুলনা শহর মুক্ত করতে রওনা দেয়। কিন্তু এই কনভয়ের শিরোমণি এলাকায় পৌঁছলে পাকিস্তান বাহিনী চতুর্দিক থেকে অ্যামবুশ করে। এতে ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর