ড. রাজিয়া সুলতানা ও মুহাম্মদ মাজেদুল হক

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতাও আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। নতুন বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার কি এই সংকটকালীন সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন, নিরাপত্তা জোরদার এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে? আসন্ন নির্বাচন কি সত্যিকার অর্থে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে, যেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব?
২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণআন্দোলনের পর বহুল আলোচিত গণভোটের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও পরিবর্তনশীল জোট, কৌশল এবং মতাদর্শিক পুনর্বিন্যাসের এক জটিল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা মোট ভোটারের ১০ শতাংশেরও বেশি হওয়া এবং বিপুলসংখ্যক তরুণ ভোটারের অন্তর্ভুক্তি সব মিলিয়ে ২০২৬ সালের নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক ঘটনায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
তবে শেখ হাসিনার নাটকীয় প্রস্থানের ষোল মাস পরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দায়িত্ব ছিল অর্থনীতি স্থিতিশীল করা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনআস্থা পুনর্গঠন করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। শুরুতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সরকারটি ব্যাপক সমর্থন পেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়েছে চ্যালেঞ্জগুলো তাদের প্রাথমিক ধারণার চেয়ে অনেক গভীর ও কাঠামোগত। ফলে লক্ষ্য অর্জনে অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে।

বাস্তবতায় বাংলাদেশে একটি ভঙ্গুর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিদ্যমান, যেখানে অস্থিরতা, সুযোগসন্ধানী আচরণ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা প্রবল। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী, পাশাপাশি ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-সহ কয়েকটি ছোট দল অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রতি বাস্তব ও টেকসই প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতা কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জবাবদিহির অভাব, অস্বচ্ছ অর্থায়ন এবং গভীরে প্রোথিত পৃষ্ঠপোষক নেটওয়ার্ক এখনও দলগুলোর আচরণ নির্ধারণ করছে। এর ফলে এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে যোগ্যতা ও দক্ষতার চেয়ে আনুগত্য বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, দলগুলো এখন গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবর্তে এক ধরনের ‘রাজনৈতিক খেলায়’ লিপ্ত।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের ঘাটতি নাগরিকদের কার্যকর প্রতিনিধিত্বকে দুর্বল করছে এবং অসন্তোষ ও অস্থিরতার ক্ষেত্র তৈরি করছে। স্থানীয় পর্যায়ের বহু কর্মী সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ার কারণে হতাশা প্রকাশ করছেন। এর ফল হিসেবে দলগুলোর ভেতরে উপদল গঠনের প্রবণতা বাড়ছে, যা অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও তীব্র করছে। উদাহরণস্বরূপ, সম্ভাব্যভাবে আবার ক্ষমতায় ফেরার অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও বিএনপি এখনও প্রজন্মগত বিভাজন ও নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের মতো ধর্মভিত্তিক দলগুলো অভ্যন্তরীণ ভাঙনের মুখে পড়লেও তরুণ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের প্রভাব বাড়ছে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখনও পরিবর্তন ও ধারাবাহিকতার মাঝামাঝি এক স্থবির অবস্থায় আটকে আছে।
ঐক্যমত্য, দ্বন্দ্ব ও অসহিষ্ণুতার চক্র
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় যে সংলাপ ও সহনশীলতার ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি। দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ড. ইউনূস একাধিক উদ্যোগ নিলেও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া দুর্বলই রয়ে গেছে। এমনকি নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বা রাজনৈতিক সমাবেশ পরিচালনার মতো অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও যে সামান্য সমঝোতা হয়, তা পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে দ্রুত ভেঙে পড়ে।
রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অসহিষ্ণুতাই এখন প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় পক্ষই প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, বরং অস্তিত্বগত হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করছে। ফলে রাজনৈতিক বক্তব্য ক্রমেই উসকানিমূলক হয়ে উঠছে এবং সহিংসতার ঝুঁকি সর্বদা উপস্থিত থাকছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে মতবিরোধ দ্রুতই প্রকাশ্য অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে রূপ নেয়। বিএনপি অভিযোগ করে অন্তর্বর্তী সরকার বেছে বেছে সংস্কার বাস্তবায়ন করছে, আর জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি অভিযোগ তোলে বিএনপি আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষ এবং নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার ঘটনা নির্বাচন-পূর্ব পরিবেশের অস্থিরতাই তুলে ধরছে।

এই অস্থির বাস্তবতায় রাজনৈতিক সহিংসতা ক্রমে দরকষাকষির একটি কৌশলে পরিণত হয়েছে। ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা এই প্রবণতাকে স্পষ্ট করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের শক্তি প্রদর্শন, প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারের জন্য রাজপথের শক্তি ব্যবহার করছে। এর ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যবধান আরও গভীর হচ্ছে। অনেক নাগরিকই এখন সন্দেহ প্রকাশ করছেন আসন্ন নির্বাচন আদৌ কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনবে কি না, নাকি এটি কেবল ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার পালাবদলের আরেকটি পর্ব।
জোটের রাজনীতি
২০২৫ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জোট গঠনের প্রবণতা চোখে পড়ার মতো। তবে এসব জোট অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অস্থির ও সুযোগসন্ধানী। বিএনপি এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। আনুষ্ঠানিক জোটে আবদ্ধ না হয়ে দলটি মধ্যপন্থী ও ইসলামপন্থী উভয় ধরনের দলের সঙ্গে নীরব সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নির্বাচনী সুবিধা ও আদর্শগত ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা স্পষ্ট।
দীর্ঘদিন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা থাকা জামায়াতে ইসলামী কৌশলগত সংযম এবং তৃণমূল সংগঠনের পুনর্গঠনের মাধ্যমে আবারও মূলধারার আলোচনায় ফিরে এসেছে। সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের দাবিকে কেন্দ্র করে তাদের অবস্থান বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সমর্থকদের মতে, এটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে পারে।
এদিকে ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন দল এনসিপি নিজেদেরকে আধুনিক, কৌশলগত ও দূরদর্শী বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা ও তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা দলটিকে আলোচনায় এনেছে, যদিও এর সাংগঠনিক বিস্তৃতি এখনো সীমিত। বিশ্লেষকদের ধারণা, এনসিপি হয়তো অল্প কয়েকটি আসনের বেশি জিততে পারবে না, তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আসনে ভোট বিভাজন ঘটিয়ে রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। এই বাস্তবতায় আদর্শ অনেক ক্ষেত্রেই কৌশলের অধীনস্থ হয়ে পড়ছে। জোট গঠিত হচ্ছে অভিন্ন নীতির ভিত্তিতে নয়, বরং আসন বণ্টন, আর্থিক সুবিধা ও বাহ্যিক সমর্থনের বাস্তববাদী হিসাব-নিকাশের ওপর। ফলে আজকের বাংলাদেশে জোটের রাজনীতি মূলত একসঙ্গে শাসনের চেয়ে একসঙ্গে টিকে থাকার কৌশলে পরিণত হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বহিঃশক্তির প্রভাব
২০২৫ সালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির পারস্পরিক সংযোগ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমেই উপলব্ধি করছে যে আন্তর্জাতিক পরিসরে তাদের ভাবমূর্তি দেশের ভেতরে রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী বা দুর্বল—দু’ভাবেই প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে বিদেশি সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রবাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লবিং তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিএনপি পশ্চিমা অংশীদারদের কাছে গণতান্ত্রিক শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে নিজেদেরকে একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ওপর নির্ভর করছে, যদিও এসব সংস্থার সংকোচনমূলক নীতির ফলে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ঢাকার কৌশলগত গুরুত্বের কারণে নয়াদিল্লির অবস্থান এখনও সংযত ও হিসাবি। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখলেও, বিএনপির সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনকে ভারত সতর্ক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে, বিশেষত দলটির ঐতিহাসিকভাবে ইসলামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে। সীমান্ত ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বয়ান দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংবেদনশীল কূটনৈতিক যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তাই তুলে ধরছে।
২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আদালতের রায়ের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নতুন মোড় নেয়। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো—শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে নয়াদিল্লি কী সিদ্ধান্ত নেবে। অনুপ চেটিয়ার মামলার সঙ্গে তুলনা করলে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার বিষয়, তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান এবং ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে পরিবারের গভীর সম্পর্কের কারণে। রায় নিয়ে ভারতের আপাত নিরপেক্ষ অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ইঙ্গিত দেয় যে দিল্লি এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক নীতি গ্রহণ করবে। তবে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে ভারত তাঁর প্রত্যর্পণ থেকে বিরত থাকতে পারে—এ সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমনকি প্রত্যর্পণে সম্মতি দিলেও, বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, কারণ আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকের প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
অন্যদিকে চীন বাংলাদেশে নীরব কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বিস্তৃত করেছে। অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখে বেইজিং স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদার হিসেবেই থাকতে চায়। পাকিস্তানও সতর্কতার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা পুনর্গঠন করেছে, ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় তাদের সহানুভূতিশীল অবস্থান থেকে সৃষ্ট সদিচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে। এই বহুমাত্রিক সম্পর্কের জালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বৈধতা ও পররাষ্ট্রনীতি ক্রমেই একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো দেশে ভোটের জন্য প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের প্রতিযোগিতায়ও নেমেছে, যা সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আরও জটিল করে তুলছে।
রাজনীতিতে তরুণদের উপস্থিতি
২০২৫ সালের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর একটি হলো বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির রূপান্তর। একসময় ছাত্ররাজনীতিকে দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত মূল দলের সম্প্রসারণ হিসেবে দেখা হলেও, বর্তমানে তরুণদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা নির্বাচনী গতিশীলতায় একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলো তরুণ ভোটারদের সম্পৃক্ত করতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, যেখানে তৃণমূল সংগঠনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ছাত্রসংগঠনগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিশেষভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রামীণ ভিত্তি শক্তিশালী করতে স্থানীয় যুব নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন, যার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আন্দোলনকে জাতীয় কৌশলের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। অবিচার ও বঞ্চনার বয়ান তরুণ ভোটারদের মধ্যে বিশেষ করে উচ্চ বেকারত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে ব্যাপক সাড়া ফেলছে। তবে তরুণদের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্তির ফল দ্বিমুখী। একদিকে এটি রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে উজ্জীবিত করছে, অন্যদিকে রাজপথে সংঘর্ষের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে যুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্যাম্পাস ও স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিযোগিতা কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ছাত্র সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা নিরাপত্তা সংস্থা ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য ক্রমেই বড় উদ্বেগে পরিণত হচ্ছে।
২০২৬ সাল: সম্ভাবনা না ঝুঁকি
জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে বলে ধারণা করা হলেও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎচিত্র এখনও অনিশ্চিত। আগের সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভ ও অসন্তোষের কারণে বিএনপি আপাতদৃষ্টিতে এগিয়ে রয়েছে। ২০৩৪ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গঠন এবং ১ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। তবে সমালোচকেরা সতর্ক করছেন গভীর ও অর্থবহ সংস্কার ছাড়া এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে তারা কি পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে সরে এসে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসনের প্রতি নতুন প্রজন্মের আস্থা অর্জন করতে পারে। চব্বিশ-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন এক ভোটারসমাজ তৈরি করেছে, যারা আগের তুলনায় বেশি তথ্যসচেতন, খুঁতখুঁতে এবং দাবিদার। সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে, নির্বাচনী বিজয় অর্জন করলেও দলের বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ধীরগতিতে হলেও নিজেদের নির্বাচনী অবস্থান শক্ত করছে। তরুণ সমর্থকগোষ্ঠীর বিস্তার, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা এবং সামাজিক ইস্যুতে মনোযোগ দেওয়ার কৌশলের ফলে ধারণা করা হচ্ছে তারা সংসদে ৪০ থেকে ৫০টি আসন পেতে পারে। এটি বাস্তবায়িত হলে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পর এটিই হবে দলটির সবচেয়ে বড় প্রত্যাবর্তন।
এনসিপির উত্থান, যদিও আসনসংখ্যার দিক থেকে সীমিত হতে পারে, তবুও বিএনপি আওয়ামী লীগ দ্বৈততার বাইরে একটি রাজনৈতিক বিকল্পের প্রতি জনআগ্রহের ইঙ্গিত দেয়। নগরকেন্দ্রিক হলেও দলটির উপস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি প্রজন্মগত পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ২০২৬ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে না। এই সিদ্ধান্ত এবং শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে ভারতের অবস্থান এই দুটি বিষয়ই নির্বাচন-পূর্ব ও নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ধরন এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
২০২৫ সালের শেষে বাংলাদেশ আবারও একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আসন্ন নির্বাচন শুধু সরকার পরিবর্তনের প্রশ্ন নয়; দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অসহিষ্ণুতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ভঙ্গুরতার চক্র থেকে দেশ বের হতে পারবে কি না—তারও একটি বড় পরীক্ষা। কৌশলগত জোট, অস্বচ্ছ অর্থায়ন এবং বহির্মুখী লবিংনির্ভর বর্তমান রাজনৈতিক খেলা জনমনে গভীর সংশয় তৈরি করেছে। কর্মসূচিভিত্তিক প্রতিযোগিতার পরিবর্তে জোটগত হিসাব ও তরুণদের সংগঠিতকরণে অতিরিক্ত নির্ভরতা দেখায় যে নীতিনির্ভর শাসনের চেয়ে স্বার্থনির্ভর রাজনীতিই এখনও প্রাধান্য পাচ্ছে।
তবু এই অস্থিরতার মাঝেও আশার একটি ক্ষীণ আলো রয়ে গেছে। তরুণ ভোটারদের সক্রিয়তা, স্বচ্ছতার দাবি এবং জবাবদিহির প্রতি বাড়তে থাকা প্রত্যাশা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা নিভে যায়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে কি না, নাকি আবারও স্বল্পমেয়াদি স্বার্থের কাছে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বিসর্জন দেবে—তা শুধু ২০২৬ সালের নির্বাচনের ফলেই নয়, আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পথচলা ও টেকসই স্থিতির সম্ভাবনাকেও নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর থমকে আছে শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে নয়, বরং সংস্কার বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে নিহিত কাঠামোগত জড়তার কারণেও।
লেখা: সাউথ এশিয়ান ভয়েসেসের নিবন্ধ
লেখক: রাজিয়া সুলতানা বর্তমানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে ( বিআইএসএস) একজন কোর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত।
মুহাম্মদ মাজেদুল হক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইএসএস) একজন গবেষণা কর্মকর্তা।

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতাও আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। নতুন বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার কি এই সংকটকালীন সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন, নিরাপত্তা জোরদার এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে? আসন্ন নির্বাচন কি সত্যিকার অর্থে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে, যেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব?
২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণআন্দোলনের পর বহুল আলোচিত গণভোটের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও পরিবর্তনশীল জোট, কৌশল এবং মতাদর্শিক পুনর্বিন্যাসের এক জটিল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা মোট ভোটারের ১০ শতাংশেরও বেশি হওয়া এবং বিপুলসংখ্যক তরুণ ভোটারের অন্তর্ভুক্তি সব মিলিয়ে ২০২৬ সালের নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক ঘটনায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
তবে শেখ হাসিনার নাটকীয় প্রস্থানের ষোল মাস পরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দায়িত্ব ছিল অর্থনীতি স্থিতিশীল করা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনআস্থা পুনর্গঠন করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। শুরুতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সরকারটি ব্যাপক সমর্থন পেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়েছে চ্যালেঞ্জগুলো তাদের প্রাথমিক ধারণার চেয়ে অনেক গভীর ও কাঠামোগত। ফলে লক্ষ্য অর্জনে অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে।

বাস্তবতায় বাংলাদেশে একটি ভঙ্গুর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিদ্যমান, যেখানে অস্থিরতা, সুযোগসন্ধানী আচরণ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা প্রবল। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী, পাশাপাশি ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-সহ কয়েকটি ছোট দল অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রতি বাস্তব ও টেকসই প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামোগত দুর্বলতা কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জবাবদিহির অভাব, অস্বচ্ছ অর্থায়ন এবং গভীরে প্রোথিত পৃষ্ঠপোষক নেটওয়ার্ক এখনও দলগুলোর আচরণ নির্ধারণ করছে। এর ফলে এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে যোগ্যতা ও দক্ষতার চেয়ে আনুগত্য বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, দলগুলো এখন গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবর্তে এক ধরনের ‘রাজনৈতিক খেলায়’ লিপ্ত।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের ঘাটতি নাগরিকদের কার্যকর প্রতিনিধিত্বকে দুর্বল করছে এবং অসন্তোষ ও অস্থিরতার ক্ষেত্র তৈরি করছে। স্থানীয় পর্যায়ের বহু কর্মী সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ার কারণে হতাশা প্রকাশ করছেন। এর ফল হিসেবে দলগুলোর ভেতরে উপদল গঠনের প্রবণতা বাড়ছে, যা অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও তীব্র করছে। উদাহরণস্বরূপ, সম্ভাব্যভাবে আবার ক্ষমতায় ফেরার অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও বিএনপি এখনও প্রজন্মগত বিভাজন ও নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের মতো ধর্মভিত্তিক দলগুলো অভ্যন্তরীণ ভাঙনের মুখে পড়লেও তরুণ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের প্রভাব বাড়ছে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখনও পরিবর্তন ও ধারাবাহিকতার মাঝামাঝি এক স্থবির অবস্থায় আটকে আছে।
ঐক্যমত্য, দ্বন্দ্ব ও অসহিষ্ণুতার চক্র
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় যে সংলাপ ও সহনশীলতার ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি। দলগুলোর মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ড. ইউনূস একাধিক উদ্যোগ নিলেও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া দুর্বলই রয়ে গেছে। এমনকি নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বা রাজনৈতিক সমাবেশ পরিচালনার মতো অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও যে সামান্য সমঝোতা হয়, তা পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে দ্রুত ভেঙে পড়ে।
রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় অসহিষ্ণুতাই এখন প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় পক্ষই প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, বরং অস্তিত্বগত হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করছে। ফলে রাজনৈতিক বক্তব্য ক্রমেই উসকানিমূলক হয়ে উঠছে এবং সহিংসতার ঝুঁকি সর্বদা উপস্থিত থাকছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে মতবিরোধ দ্রুতই প্রকাশ্য অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে রূপ নেয়। বিএনপি অভিযোগ করে অন্তর্বর্তী সরকার বেছে বেছে সংস্কার বাস্তবায়ন করছে, আর জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি অভিযোগ তোলে বিএনপি আলোচনায় আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঘন ঘন সংঘর্ষ এবং নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার ঘটনা নির্বাচন-পূর্ব পরিবেশের অস্থিরতাই তুলে ধরছে।

এই অস্থির বাস্তবতায় রাজনৈতিক সহিংসতা ক্রমে দরকষাকষির একটি কৌশলে পরিণত হয়েছে। ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা এই প্রবণতাকে স্পষ্ট করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের শক্তি প্রদর্শন, প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারের জন্য রাজপথের শক্তি ব্যবহার করছে। এর ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সাধারণ মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যবধান আরও গভীর হচ্ছে। অনেক নাগরিকই এখন সন্দেহ প্রকাশ করছেন আসন্ন নির্বাচন আদৌ কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনবে কি না, নাকি এটি কেবল ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার পালাবদলের আরেকটি পর্ব।
জোটের রাজনীতি
২০২৫ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জোট গঠনের প্রবণতা চোখে পড়ার মতো। তবে এসব জোট অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অস্থির ও সুযোগসন্ধানী। বিএনপি এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। আনুষ্ঠানিক জোটে আবদ্ধ না হয়ে দলটি মধ্যপন্থী ও ইসলামপন্থী উভয় ধরনের দলের সঙ্গে নীরব সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নির্বাচনী সুবিধা ও আদর্শগত ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা স্পষ্ট।
দীর্ঘদিন রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা থাকা জামায়াতে ইসলামী কৌশলগত সংযম এবং তৃণমূল সংগঠনের পুনর্গঠনের মাধ্যমে আবারও মূলধারার আলোচনায় ফিরে এসেছে। সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের দাবিকে কেন্দ্র করে তাদের অবস্থান বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সমর্থকদের মতে, এটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে পারে।
এদিকে ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন দল এনসিপি নিজেদেরকে আধুনিক, কৌশলগত ও দূরদর্শী বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা ও তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা দলটিকে আলোচনায় এনেছে, যদিও এর সাংগঠনিক বিস্তৃতি এখনো সীমিত। বিশ্লেষকদের ধারণা, এনসিপি হয়তো অল্প কয়েকটি আসনের বেশি জিততে পারবে না, তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আসনে ভোট বিভাজন ঘটিয়ে রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। এই বাস্তবতায় আদর্শ অনেক ক্ষেত্রেই কৌশলের অধীনস্থ হয়ে পড়ছে। জোট গঠিত হচ্ছে অভিন্ন নীতির ভিত্তিতে নয়, বরং আসন বণ্টন, আর্থিক সুবিধা ও বাহ্যিক সমর্থনের বাস্তববাদী হিসাব-নিকাশের ওপর। ফলে আজকের বাংলাদেশে জোটের রাজনীতি মূলত একসঙ্গে শাসনের চেয়ে একসঙ্গে টিকে থাকার কৌশলে পরিণত হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বহিঃশক্তির প্রভাব
২০২৫ সালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির পারস্পরিক সংযোগ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমেই উপলব্ধি করছে যে আন্তর্জাতিক পরিসরে তাদের ভাবমূর্তি দেশের ভেতরে রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী বা দুর্বল—দু’ভাবেই প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে বিদেশি সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রবাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লবিং তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিএনপি পশ্চিমা অংশীদারদের কাছে গণতান্ত্রিক শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে নিজেদেরকে একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ওপর নির্ভর করছে, যদিও এসব সংস্থার সংকোচনমূলক নীতির ফলে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ঢাকার কৌশলগত গুরুত্বের কারণে নয়াদিল্লির অবস্থান এখনও সংযত ও হিসাবি। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখলেও, বিএনপির সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনকে ভারত সতর্ক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে, বিশেষত দলটির ঐতিহাসিকভাবে ইসলামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে। সীমান্ত ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বয়ান দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংবেদনশীল কূটনৈতিক যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তাই তুলে ধরছে।
২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আদালতের রায়ের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নতুন মোড় নেয়। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো—শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে নয়াদিল্লি কী সিদ্ধান্ত নেবে। অনুপ চেটিয়ার মামলার সঙ্গে তুলনা করলে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার বিষয়, তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান এবং ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে পরিবারের গভীর সম্পর্কের কারণে। রায় নিয়ে ভারতের আপাত নিরপেক্ষ অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ইঙ্গিত দেয় যে দিল্লি এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক নীতি গ্রহণ করবে। তবে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে ভারত তাঁর প্রত্যর্পণ থেকে বিরত থাকতে পারে—এ সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমনকি প্রত্যর্পণে সম্মতি দিলেও, বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, কারণ আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকের প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
অন্যদিকে চীন বাংলাদেশে নীরব কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বিস্তৃত করেছে। অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখে বেইজিং স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তারা বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অংশীদার হিসেবেই থাকতে চায়। পাকিস্তানও সতর্কতার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা পুনর্গঠন করেছে, ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় তাদের সহানুভূতিশীল অবস্থান থেকে সৃষ্ট সদিচ্ছাকে কাজে লাগিয়ে। এই বহুমাত্রিক সম্পর্কের জালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বৈধতা ও পররাষ্ট্রনীতি ক্রমেই একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো দেশে ভোটের জন্য প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের প্রতিযোগিতায়ও নেমেছে, যা সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আরও জটিল করে তুলছে।
রাজনীতিতে তরুণদের উপস্থিতি
২০২৫ সালের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনগুলোর একটি হলো বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির রূপান্তর। একসময় ছাত্ররাজনীতিকে দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত মূল দলের সম্প্রসারণ হিসেবে দেখা হলেও, বর্তমানে তরুণদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা নির্বাচনী গতিশীলতায় একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলো তরুণ ভোটারদের সম্পৃক্ত করতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, যেখানে তৃণমূল সংগঠনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ছাত্রসংগঠনগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিশেষভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রামীণ ভিত্তি শক্তিশালী করতে স্থানীয় যুব নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন, যার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আন্দোলনকে জাতীয় কৌশলের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। অবিচার ও বঞ্চনার বয়ান তরুণ ভোটারদের মধ্যে বিশেষ করে উচ্চ বেকারত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে ব্যাপক সাড়া ফেলছে। তবে তরুণদের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্তির ফল দ্বিমুখী। একদিকে এটি রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে উজ্জীবিত করছে, অন্যদিকে রাজপথে সংঘর্ষের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে যুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্যাম্পাস ও স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিযোগিতা কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ছাত্র সহিংসতা বৃদ্ধির আশঙ্কা নিরাপত্তা সংস্থা ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য ক্রমেই বড় উদ্বেগে পরিণত হচ্ছে।
২০২৬ সাল: সম্ভাবনা না ঝুঁকি
জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে বলে ধারণা করা হলেও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎচিত্র এখনও অনিশ্চিত। আগের সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভ ও অসন্তোষের কারণে বিএনপি আপাতদৃষ্টিতে এগিয়ে রয়েছে। ২০৩৪ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গঠন এবং ১ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। তবে সমালোচকেরা সতর্ক করছেন গভীর ও অর্থবহ সংস্কার ছাড়া এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে তারা কি পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে সরে এসে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসনের প্রতি নতুন প্রজন্মের আস্থা অর্জন করতে পারে। চব্বিশ-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন এক ভোটারসমাজ তৈরি করেছে, যারা আগের তুলনায় বেশি তথ্যসচেতন, খুঁতখুঁতে এবং দাবিদার। সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে, নির্বাচনী বিজয় অর্জন করলেও দলের বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ধীরগতিতে হলেও নিজেদের নির্বাচনী অবস্থান শক্ত করছে। তরুণ সমর্থকগোষ্ঠীর বিস্তার, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা এবং সামাজিক ইস্যুতে মনোযোগ দেওয়ার কৌশলের ফলে ধারণা করা হচ্ছে তারা সংসদে ৪০ থেকে ৫০টি আসন পেতে পারে। এটি বাস্তবায়িত হলে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পর এটিই হবে দলটির সবচেয়ে বড় প্রত্যাবর্তন।
এনসিপির উত্থান, যদিও আসনসংখ্যার দিক থেকে সীমিত হতে পারে, তবুও বিএনপি আওয়ামী লীগ দ্বৈততার বাইরে একটি রাজনৈতিক বিকল্পের প্রতি জনআগ্রহের ইঙ্গিত দেয়। নগরকেন্দ্রিক হলেও দলটির উপস্থিতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি প্রজন্মগত পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ২০২৬ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে না। এই সিদ্ধান্ত এবং শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে ভারতের অবস্থান এই দুটি বিষয়ই নির্বাচন-পূর্ব ও নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ধরন এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
২০২৫ সালের শেষে বাংলাদেশ আবারও একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আসন্ন নির্বাচন শুধু সরকার পরিবর্তনের প্রশ্ন নয়; দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অসহিষ্ণুতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ভঙ্গুরতার চক্র থেকে দেশ বের হতে পারবে কি না—তারও একটি বড় পরীক্ষা। কৌশলগত জোট, অস্বচ্ছ অর্থায়ন এবং বহির্মুখী লবিংনির্ভর বর্তমান রাজনৈতিক খেলা জনমনে গভীর সংশয় তৈরি করেছে। কর্মসূচিভিত্তিক প্রতিযোগিতার পরিবর্তে জোটগত হিসাব ও তরুণদের সংগঠিতকরণে অতিরিক্ত নির্ভরতা দেখায় যে নীতিনির্ভর শাসনের চেয়ে স্বার্থনির্ভর রাজনীতিই এখনও প্রাধান্য পাচ্ছে।
তবু এই অস্থিরতার মাঝেও আশার একটি ক্ষীণ আলো রয়ে গেছে। তরুণ ভোটারদের সক্রিয়তা, স্বচ্ছতার দাবি এবং জবাবদিহির প্রতি বাড়তে থাকা প্রত্যাশা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা নিভে যায়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে কি না, নাকি আবারও স্বল্পমেয়াদি স্বার্থের কাছে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বিসর্জন দেবে—তা শুধু ২০২৬ সালের নির্বাচনের ফলেই নয়, আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পথচলা ও টেকসই স্থিতির সম্ভাবনাকেও নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর থমকে আছে শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে নয়, বরং সংস্কার বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে নিহিত কাঠামোগত জড়তার কারণেও।
লেখা: সাউথ এশিয়ান ভয়েসেসের নিবন্ধ
লেখক: রাজিয়া সুলতানা বর্তমানে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে ( বিআইএসএস) একজন কোর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত।
মুহাম্মদ মাজেদুল হক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইএসএস) একজন গবেষণা কর্মকর্তা।

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতাও আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। নতুন বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার কি এই সংকটকালীন

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অনেকটাই থমকে গেছে। সেইসঙ্গে ক্রমাগত অর্থপাচার দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক চাপ তৈরি করেছে। এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে- শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক আর্থিক খাত ছাড়া কি বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবে?