নতজানু মনোভাবই কি সংবাদমাধ্যমের বার বার আক্রান্ত হওয়ার কারণ?

নতজানু মনোভাবই কি সংবাদমাধ্যমের বার বার আক্রান্ত হওয়ার কারণ?
ওসমান হাদি মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আগুন দেওয়া হয় প্রথম আলো ভবনে। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাস ঘাঁটলে কিছু বিষয় এক লহমায় চোখের সামনে উঠে আসে। সেই বিষয়গুলো কিছু একক শব্দ দিয়েই বোঝানো সম্ভব। সেসব শব্দ দেখলেই বোঝা হয়ে যায় যে, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম আসলে কতটা গাড্ডায় আছে!

এই শব্দগুলো হলো- হামলা, মামলা, হুমকি, দোষারোপ, দলবাজি, ভুল, পক্ষপাতিত্ব, প্রপাগান্ডা, দুর্নীতি, অনৈতিকতা, অশিক্ষা, সুযোগসন্ধান, সততা, অসততা, সত্য, নির্যাতন, নিপীড়ন ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবের সাথে চাইলে আরও নানা শব্দ যুক্ত করা যায়। এসব শব্দের একক ব্যবহারেই এ দেশের সংবাদমাধ্যমের এক-একটি অবস্থা ফুটে ওঠে। এসবের মধ্য দিয়ে দেশীয় সংবাদমাধ্যমের সমস্যা, দোষ, গুণ, সীমাবদ্ধতা-সবই বোঝা হয়ে যায়।

হামলা, মামলা, হুমকি, নির্যাতন ও নিপীড়ন দিয়েই শুরু করা যাক। সংবাদমাধ্যমের আক্রান্ত হওয়ার খবর এখন জ্বলজ্বলে। সদ্যই দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার মারাত্মক মব আক্রমণের শিকার হয়েছে। প্রথম আলোর একটি ভবনে একদল জনতা হামলা করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, আগুন ধরিয়ে দেয়, লুটপাট চালায়। একই অবস্থা হয় দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়েও। সেখানেও ভাঙচুর চলে, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই দুই সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়েই আটকা পড়েছিলেন বেশ কিছু সংবাদকর্মী। তাদের জীবনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছিল প্রচণ্ডভাবে। আক্রমণকারী জনতা পুরোপুরি উন্মত্ত আচরণ করছিল। আগুন নেভাতে এগিয়ে আসা দমকল বাহিনীকেও বাধা দেওয়া হয়েছিল। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে। উদ্ধার হন সাংবাদিকেরা। তবে নিজ নিজ বাসায় পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তারা জীবনের ঝুঁকিতে ছিলেন। এমনকি তাদের বাঁচাতে এগিয়ে যাওয়া নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে পর্যন্ত লাঞ্ছিত হতে হয়।

এক কথায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে যে হামলা হয়েছে, তা প্রাণঘাতী করার উদ্দেশ্যই ছিল। এই হামলা চলার সময় মনেই হয়নি যে, এই দেশে কোনো সরকার আছে, এবং তাদের কাজ হচ্ছে দেশের সকল নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে নিরাপত্তা দেওয়া! বরং বাংলা সিনেমার সেই চিরচেনা দৃশ্যের মতো মারামারি শেষে আবির্ভূত হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ততক্ষণে অবশ্য রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ নামে পরিচিত সংবাদমাধ্যমের ওপর আঘাত করা শেষ এবং সেই স্তম্ভটিকে টালমাটাল করে ফেলাও সারা।

ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ডেইলি স্টার ভবনেও ভাঙচুর চালানো হয়। ছবি: চরচা
ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ডেইলি স্টার ভবনেও ভাঙচুর চালানো হয়। ছবি: চরচা

যদিও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের ভিত আরও আগে থেকেই নড়বড়ে। ভিত কবে শক্ত ছিল আদতে, সেই প্রশ্নও তোলা যায়। এবং তার সন্তোজনক উত্তরও খুব একটা মিলবে না। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনার পর থেকেই সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো এবং সাংবাদিকদের একটি অংশও প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে। একটি বক্তব্যও উঠে আসছে যে, এর আগে নাকি কোনো মিডিয়া হাউজে এভাবে আগুন জ্বালানো হয় নাই। তবে এই বক্তব্য সঠিক নয়। সুদূর অতীতে যাওয়ার দরকার হবে না, নিকট অতীতেই মিডিয়া হাউজে আক্রমণ, ভাঙচুর ও জ্বালা-পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে-পরে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজের ওপর আক্রমণ হয়েছে। সরকার পতনের পর তো একাধিক মিডিয়া হাউজে ঢুকে হামলা, ভাঙচুর চলেছে, লুটপাট হয়েছে। এরও আগের ১২ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলেও অন্তত দুটি পত্রিকা অফিসে ও একাধিক টিভি চ্যানেলে হামলার, আগুন জ্বালানোর, কার্যক্রম বন্ধ করার, এমনকি সম্পাদককে লাঞ্ছনার খবরও মিলবে। তবে সেসব হামলা নিয়ে এতটা উচ্চকিত প্রতিবাদ কী শোনা গেছে?

না, যায়নি। কিন্তু সেসব প্রতিবাদও উচ্চস্বরে হলে, হয়তো আজকের খাদের কিনারে দাঁড়ানোর মতো পরিস্থিতি এ দেশের সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের কপালে ভাঁজ বাড়াতো না। আর এই জায়গাতেই চলে আসে সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতি হওয়া অন্যায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবাদের ভাষার ও প্রাবল্যের কম-বেশির বিষয়টি। যেটি অন্যায়, যেটি নির্যাতন, যেটি নিপীড়ন–সেটি সব ক্ষেত্রেই এক এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও একই প্রাবল্যে হওয়া উচিত। যদি আইনত কোনো অপরাধ করে থাকে কোনো সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিক, তবে তা আইনিভাবেই প্রমাণিত হতে হবে। এবং সেই অনুযায়ীই প্রতিবিধান করতে হবে। এর বাইরে যে কোনো পদক্ষেপই সংবাদমাধ্যমের ওপর বলপ্রয়োগ হিসেবেই গণ্য হয়। আর সেই বলপ্রয়োগের প্রতিবাদও একই মাত্রায় হওয়া উচিত। নইলে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির পথ খুলে যায় এবং একেক শাসকগোষ্ঠী নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী সেই পথ ধরে এগিয়ে যায়। এতে করে সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন বা নিয়ন্ত্রণ আরোপের অপচেষ্টা চলতেই থাকে। এসবের সুযোগ অন্যান্য বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীও নিতে থাকে। মূল লক্ষ্য আসলে একই থাকে সব পক্ষেরই, আর সেটি হলো–প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংবাদমাধ্যমকে দুর্বল করে দেওয়া।

এই ধরনের ফাঁদ আসলে ক্ষমতাকাঠামোর পক্ষ থেকেই তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো ও সাংবাদিকেরাও সেই ফাঁদে অহরহ পা দিয়ে যায়। এ দেশের গত ৫৪ বছরের ইতিহাসে সংবাদমাধ্যমের জগৎ বা সাংবাদিকেরা কখনোই সেই অর্থে স্বাধীন ছিল না। পুরোপুরি স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য যেমন অনুকূল পরিবেশের প্রয়োজন, তাও সেভাবে কখনো ছিল না। বর্তমানের ‘নতুন বাংলাদেশ’ও তার ব্যতিক্রম নয়। ফলে সংবাদমাধ্যম ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ ভোগ করছে-এ ধরনের কর্তৃপক্ষীয় বক্তব্য সব সময়ই সংশ্লিষ্টদের ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের বা কৌতুকের হাসি ছাড়া, অন্য কিছু উৎপাদন করেনি। যদিও এই বিষয়টিকে সাহসীভাবে উপস্থাপনের সাহসও দেশের বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমের নেই। এবং সেই সাহস গড়ে না ওঠার, গড়ে না তোলার–এ দুই উদ্যোগেই সদিচ্ছার অভাব আছে ভালোমতোই।

এ দেশের সংবাদমাধ্যম শিল্পের অবস্থাও তথৈবচ। ছবি: পেক্সেলস
এ দেশের সংবাদমাধ্যম শিল্পের অবস্থাও তথৈবচ। ছবি: পেক্সেলস

অন্যদিকে এ দেশের সংবাদমাধ্যম শিল্পের অবস্থাও তথৈবচ। এর জন্য বিশেষজ্ঞ মতের আসলে প্রয়োজন নেই খুব একটা। কারণ, এতদিন ধরে এই শিল্পের অংশ হয়ে থাকা অবস্থায় এটুকু অন্তত জানা গেছে, সাংবাদিকতা পেশাটি অত্যন্ত অনিশ্চিত। আর্থিক নিরাপত্তা খুব একটা নেই, এমনকি এ খাতের দেশের শীর্ষ কিছু প্রতিষ্ঠানেও এই অনিশ্চয়তা প্রবল। করপোরেট লুকে সাংবাদিকতাকে কিছুটা আকর্ষণীয় চেহারা দেওয়ার চেষ্টা অনেক প্রতিষ্ঠান করেছে বটে, তবে ভেতরটা ফাঁপাই। আর্থিক নিরাপত্তা না থাকার দরুণ দেশের সাংবাদিকদের একটি অংশ অসৎ পথেও পা বাড়ায় হরদম। এটি ঠিক যে, এই পেশার সিংহভাগ মানুষই নিজের ভালো লাগা থেকেই এটিকে বেছে নিয়েছেন এবং তারা সৎও। কিন্তু এক গামলা দুধে যেমন এক ফোঁটা গোচনাই সব গুণাগুণ নষ্ট করে দিতে পারে, তেমনি ২০ শতাংশ অসৎ ব্যক্তির কারণে বাকি ৮০ শতাংশেরই নাম খারাপ হয়। আমাদের দেশেও সেটিই হয়েছে।

এদেশে বেশির ভাগ সময়েই সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান চালু করা হয় যেনতেন প্রকারে। এর মূল কারণই হলো, এদের মালিক বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আছে। তারা যতটা না সাংবাদিকতা করতে সংবাদমাধ্যম চালু করে, তার চেয়ে বেশি নিজেদের নানামাত্রিক স্বার্থ রক্ষা করতে চায়। এর মানে এই নয় যে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সংবাদমাধ্যম চালু করতে পারবে না। অবশ্যই পারবে। সারা বিশ্বেই তেমনটা হয়। তবে সেক্ষেত্রে মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রাখা হয় এবং সেটি রক্ষার বন্দোবস্তও থাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে। আর আমাদের দেশে এই কথিত ‘মহৎ উদ্দেশ্য’ কেবলই একটি মুখোশ মাত্র। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুখোশের আড়ালে অন্য খেলা চলে।

এর বাইরে আরেকটি বড় অভিযোগ সাংবাদিকদের কিছু অংশের বিরুদ্ধে আছে, সেটি হলো পক্ষপাতদুষ্ট হওয়া। এ বিষয়টির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যায় ‘দলবাজি’, ‘ভুল’, বা ‘প্রপাগান্ডা’র মতো শব্দগুলোকে। ১৫/১৬ বছর আগে এগুলো ততটা মাথাচাড়া দেয়নি। তবে যত দিন গেছে, পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়েও আমরা বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও যাচাইবিহীন সংবাদ প্রকাশের খবর শুনেছি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থার চাপ দেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। আর গত কয়েক বছরে তা যে আরও প্রবল হয়েছিল, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে অনেক খবরই চেপে যায় কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান, বা এমনভাবে ঘুরিয়ে প্রকাশ করে, যাতে মূল তথ্যই আর পাওয়া হয় না। প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার প্রশস্তিমূলক বাক্যের স্তম্ভও গড়ে তোলা হয় নানা চাপে পড়ে। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমও সঠিক সংবাদ ও সকল তথ্য পরিবেশনের আদর্শিক অবস্থান থেকে সরে গেছে নানা সময়। নিকট ও দূর অতীতে এসবের ঢের উদাহরণ আছে।

এতে করে একজন দর্শক বা পাঠক স্বাভাবিকভাবেই প্রতারিত বোধ করেন। যে নাগরিক প্রতিদিনকার জীবনে নানা আর্থসামাজিক ও রাষ্ট্রপ্রদত্ত সংকটে পর্যুদস্ত থাকেন, তিনি যখন যেকোনো গণমাধ্যমে ‘সুখে, শান্তিতে থাকা’র বয়াননির্ভর সংবাদ পড়েন বা শোনেন বা দেখেন, তখন তার মনে এক ধরনের অব্যক্ত ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ১০০‑তে ১০০ না পেলেও নিজের প্রবল বাস্তবতার ৬০ বা ৭০ শতাংশ প্রতিচ্ছবির প্রতিনিধিত্ব চান। কিন্তু সেটাও না পেলে তৈরি হয় আস্থার সংকট। এবং এ দেশের সংবামাধ্যমগুলো সেই প্রবল আস্থার সংকটে প্রায় এক দশক ধরেই আছে। এর প্রাবল্য বেড়েছে মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল মাধ্যমের প্রসারের কারণেই। কারণ মানুষ বিকল্প হিসেবে মূলত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে বেছে নেওয়ার চেষ্টা করছে, যদিও এতে ছড়িয়ে পড়া কনটেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে হাজার। কিন্তু এই বিকল্পের পথে সাধারণ মানুষের হাঁটার অন্যতম দায় কি সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর নয়? অবশ্যই সেই দায় আছে।

এর বাইরে আছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ভিন্ন ভিন্ন অ্যাজেন্ডা ও স্বার্থ। যে আজকে বিদ্রোহের ডাক দেয়, সেও সময় ফুরোলে পরে বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলনের খবর শোনায়। এই রূপান্তর কখনো সূক্ষ্ম, আবার কখনো স্থূল হয়। কিন্তু হয়। অন্তত এ দেশে এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। কেবলই সঠিক ও নিখাদ সংবাদ উপহার দেয়, এমন সংবাদমাধ্যম খুঁজতে গেলে এ দেশে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে!

এসব কারণেই বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা সামাজিকভাবে কখনও ‘সাংঘাতিক’, আবার কখনও ‘সঙবাদিক’ হিসেবে পরিচিত হয়ে যান। নানামাত্রিক অ্যাজেন্ডা, উদ্দেশ্য, পেছনে থাকা ব্যবসায়িক স্বার্থ প্রভৃতি একেকটি সংবাদমাধ্যমকে গণের হতে দেয় না। বরং সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পক্ষ তৈরি হয়ে যায়। এভাবেই সংবাদ থেকে শুরু করে প্রতিবাদ–সবই হয়ে পড়ে ‘সিলেক্টিভ’। কখনো গগনবিদারী আওয়াজ ওঠে, কখনও ওঠে মিনমিনিয়ে।

এতে করে আদতে ক্ষতি হয় পুরো সংবাদমাধ্যম জগতেরই, সাংবাদিকদেরই। সাংবাদিকতার হিসাবে, ন্যায্যতার হিসাবে বা কেবলই নৈতিকতার হিসাবে এই পেশাজীবী মানুষ বা প্রতিষ্ঠানগুলোর একাট্টা হওয়া আর হয় না। সেখানেও পক্ষ, বিপক্ষ তৈরি হয়ে যায়। ফলে ন্যায্য দাবিও দ্বিধাবিভক্ত রূপ লাভ করে। সৃষ্টি হয় ক্ষমতার ও বাণিজ্যের বিভিন্ন ভরকেন্দ্রের প্রতি একটি নতজানু মনোভাব। তাতে মওকা পেয়ে যায় মব, মতান্তরে ‘প্রেশার গ্রুপ’–এর মতো চরম অরাজক শক্তিগুলো। গণতান্ত্রিক শক্তিও ফায়দা লোটে ইচ্ছামতো। দুর্বলতা পেলে কে আর ছাড়ে, বলুন!

ফলে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা ও সংবাদমাধ্যম জগৎ আটকে পড়েছে এক দুষ্টচক্রে। এই দুষ্টচক্র তৈরির জন্য যেমন সরকার থেকে শুরু করে রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতি দায়ী, তেমনি সাংবাদিক সমাজও দায়ী। এ থেকে বের হওয়ার উদ্যোগও খুব একটা নেই। তাই ক্ষণে ক্ষণে নানাপক্ষীয় হুমকি, হামলা ও আফসোসে তড়পানো ছাড়া সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকদের আপাতত আর কিছু করারও নেই!

লেখক: বার্তা সম্পাদক, চরচা

সম্পর্কিত