চরচা ডেস্ক

মুখে টেপ লাগিয়ে ঘুমানোর বিষয়টা শুনে অনেকে অবাক হতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে এটাই হয়ে উঠেছে বেশ আলোচিত একটি ট্রেন্ড। এর উপকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে অনেকে বলছেন, মুখে টেপ লাগিয়ে ঘুমানো শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর করা থেকে শুরু করে মুখের দুর্গন্ধ কমানোর মতো অনেক সমস্যার সমাধান করে।
নাক ও মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ভালো-মন্দ
রাতে ঘুমানোর সময় অনেকে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের কিছু উপকারিতা আছে। যেমন, নাকের ভেতরের টারবিনেটস নামে পরিচিত ছোট ছোট হাড়ের কাঠামো বাতাস থেকে ধূলিকণা ও রোগজীবাণু ছেঁকে ফেলে। এছাড়াও নাক বাতাসকে আর্দ্র ও উষ্ণ করে, যা ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এভাবে শ্বাস নেওয়া নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন বাড়াতে পারে, যা রক্তনালীকে প্রসারিত করতে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে।
আর মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন নাক ডাকা, মুখের স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়া। এছাড়া কারো অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) হতে পারে, যেখানে গলার পেশী শ্বাসনালীকে আটকে দেওয়ায় ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। শিশুদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ীভাবে মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অভ্যাস মুখের অস্বাভাবিক গঠন করতে পারে।
গবেষণা কী বলছে?
এই সমস্ত তথ্য হয়তো মনে হতে পারে, যে রাতে মুখে টেপ লাগিয়ে ঘুমানোটা কিছু মানুষের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে দুঃখের বিষয় হলো, গবেষণা এই ধারণাকে সমর্থন করে না। গত মে মাসে পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার জন্য মুখ-টেপিং-এর উপর দশটি গবেষণার একটি পর্যালোচনায় কিছু বিষয় উঠে এসেছে।
এই পর্যালোচনায় অন্তর্ভুক্ত একটি গবেষণায় বলছে যে, ওএসএ আক্রান্ত ২০ জন রোগী এক রাতের জন্য মুখের টেপ ব্যবহার করার পরে, প্রতি ঘণ্টা ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধা গড় সংখ্যায় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। নাক ডাকার ঘটনাও প্রায় উল্লেখযোগ্য হারে কমে। অটোলারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’র একটি গবেষণাও একই ফলাফল আসে। তবে, উভয় গবেষণাই খুব অল্প সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স জার্নাল এসব ফলাফলের ক্লিনিক্যাল গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মুখ-টেপিং অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে মিলিতভাবে ওএসএ-এর চিকিৎসায় আরও বেশি কার্যকর হতে পারে। ২০২২ সালে অ্যানালস অব দ্য আমেরিকান থোরাসিক সোসাইটিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ম্যানডিবুলার অ্যাডভান্সমেন্ট ডিভাইস (ওএসএ-এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি বিশেষ মাউথগার্ড) এবং মুখ-টেপিং একসঙ্গে ব্যবহার করলে বেশি কার্যকর ফল পাওয়া যায়। তবে, আরও শক্তিশালী সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য, আরও বেশি সংখ্যক অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন, যেখানে শুধুমাত্র মুখ-টেপিং-এর কার্যকারিতা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
যারা গুরুতর ওএসএ এবং নাকের প্রতিবন্ধকতা, যেমন ডেভিয়েটেড সেপ্টাম সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য মুখ-টেপিং উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স পর্যালোচনা এই ধরনের ক্ষেত্রে মুখে টেপ লাগাতে বারণ করেছে। কারণ যদি কারো শ্বাসনালী সরু থাকে তাহলে মুখ-টেপিং এর ফলে শ্বাসরোধের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
যদিও মুখের স্বাস্থ্যবিধির জন্য মুখ-টেপিং করা আরও বেশি কার্যকর। মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে লালা শুকিয়ে যায়, যা সাধারণত দাঁতের ক্ষয় এবং মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে এটি আসলেই কাজ করে কি না তা প্রমাণ করার জন্য এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য গবেষণা হয়নি।
কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির একজন অটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট (নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ) ব্রায়ান রোটেনবার্গ জানান, যে মুখ-টেপিং-এর ঝুঁকি এর সম্ভাব্য লাভের তুলনায় বেশি। তিনি বলেন, “যারা এটি মুখ-টেপিং করেন, তারা হয়তো গুরুতর সমস্যাকে উপেক্ষা করছেন। নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া নাকের পলিপ, এমনকি টিউমারের মতো অবস্থাকে নির্দেশ করতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া একটি ‘তাৎক্ষণিক সমাধান’ হলেও মুখে টেপ লাগানোর পরিবর্তে পরিপূর্ণভাবে চিকিৎসা নেওয়া উচিৎ।”
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

মুখে টেপ লাগিয়ে ঘুমানোর বিষয়টা শুনে অনেকে অবাক হতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে এটাই হয়ে উঠেছে বেশ আলোচিত একটি ট্রেন্ড। এর উপকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে অনেকে বলছেন, মুখে টেপ লাগিয়ে ঘুমানো শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর করা থেকে শুরু করে মুখের দুর্গন্ধ কমানোর মতো অনেক সমস্যার সমাধান করে।
নাক ও মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ভালো-মন্দ
রাতে ঘুমানোর সময় অনেকে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়। নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের কিছু উপকারিতা আছে। যেমন, নাকের ভেতরের টারবিনেটস নামে পরিচিত ছোট ছোট হাড়ের কাঠামো বাতাস থেকে ধূলিকণা ও রোগজীবাণু ছেঁকে ফেলে। এছাড়াও নাক বাতাসকে আর্দ্র ও উষ্ণ করে, যা ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এভাবে শ্বাস নেওয়া নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন বাড়াতে পারে, যা রক্তনালীকে প্রসারিত করতে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে।
আর মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন নাক ডাকা, মুখের স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়া। এছাড়া কারো অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) হতে পারে, যেখানে গলার পেশী শ্বাসনালীকে আটকে দেওয়ায় ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। শিশুদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ীভাবে মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অভ্যাস মুখের অস্বাভাবিক গঠন করতে পারে।
গবেষণা কী বলছে?
এই সমস্ত তথ্য হয়তো মনে হতে পারে, যে রাতে মুখে টেপ লাগিয়ে ঘুমানোটা কিছু মানুষের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে দুঃখের বিষয় হলো, গবেষণা এই ধারণাকে সমর্থন করে না। গত মে মাসে পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার জন্য মুখ-টেপিং-এর উপর দশটি গবেষণার একটি পর্যালোচনায় কিছু বিষয় উঠে এসেছে।
এই পর্যালোচনায় অন্তর্ভুক্ত একটি গবেষণায় বলছে যে, ওএসএ আক্রান্ত ২০ জন রোগী এক রাতের জন্য মুখের টেপ ব্যবহার করার পরে, প্রতি ঘণ্টা ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধা গড় সংখ্যায় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। নাক ডাকার ঘটনাও প্রায় উল্লেখযোগ্য হারে কমে। অটোলারিঙ্গোলজি হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’র একটি গবেষণাও একই ফলাফল আসে। তবে, উভয় গবেষণাই খুব অল্প সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করে এবং পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স জার্নাল এসব ফলাফলের ক্লিনিক্যাল গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মুখ-টেপিং অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে মিলিতভাবে ওএসএ-এর চিকিৎসায় আরও বেশি কার্যকর হতে পারে। ২০২২ সালে অ্যানালস অব দ্য আমেরিকান থোরাসিক সোসাইটিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ম্যানডিবুলার অ্যাডভান্সমেন্ট ডিভাইস (ওএসএ-এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি বিশেষ মাউথগার্ড) এবং মুখ-টেপিং একসঙ্গে ব্যবহার করলে বেশি কার্যকর ফল পাওয়া যায়। তবে, আরও শক্তিশালী সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য, আরও বেশি সংখ্যক অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন, যেখানে শুধুমাত্র মুখ-টেপিং-এর কার্যকারিতা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
যারা গুরুতর ওএসএ এবং নাকের প্রতিবন্ধকতা, যেমন ডেভিয়েটেড সেপ্টাম সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য মুখ-টেপিং উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স পর্যালোচনা এই ধরনের ক্ষেত্রে মুখে টেপ লাগাতে বারণ করেছে। কারণ যদি কারো শ্বাসনালী সরু থাকে তাহলে মুখ-টেপিং এর ফলে শ্বাসরোধের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
যদিও মুখের স্বাস্থ্যবিধির জন্য মুখ-টেপিং করা আরও বেশি কার্যকর। মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে লালা শুকিয়ে যায়, যা সাধারণত দাঁতের ক্ষয় এবং মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে এটি আসলেই কাজ করে কি না তা প্রমাণ করার জন্য এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য গবেষণা হয়নি।
কানাডার ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির একজন অটোল্যারিঙ্গোলজিস্ট (নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ) ব্রায়ান রোটেনবার্গ জানান, যে মুখ-টেপিং-এর ঝুঁকি এর সম্ভাব্য লাভের তুলনায় বেশি। তিনি বলেন, “যারা এটি মুখ-টেপিং করেন, তারা হয়তো গুরুতর সমস্যাকে উপেক্ষা করছেন। নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া নাকের পলিপ, এমনকি টিউমারের মতো অবস্থাকে নির্দেশ করতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া একটি ‘তাৎক্ষণিক সমাধান’ হলেও মুখে টেপ লাগানোর পরিবর্তে পরিপূর্ণভাবে চিকিৎসা নেওয়া উচিৎ।”
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট