‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ কী কী সুবিধা পান?

চরচা প্রতিবেদক
চরচা প্রতিবেদক
‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ কী কী সুবিধা পান?

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সোমবার ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি)’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশে কারা ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি?’ তারা কী ধরনের সুযোগ–সুবিধা ভোগ করেন? খালেদা জিয়াকে এমন মর্যাদা দেওয়ার পর ব্যাপারটি আলোচনায় আসছে।

প্রথমেই বোঝা দরকার রাষ্ট্রে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ কারা? বাংলাদেশে সাধারণত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান উপদেষ্টার পদে যারা থাকেন, তারাই রাষ্ট্রের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান উপদেষ্টা পদাধিকারীদের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে সংবেদনশীল হিসেবে ধরা হয়। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে এরা এমনিতেই অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুযোগ–সুবিধার জন্য আলাদা করে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণার প্রয়োজন পড়ে না। তবে এদের বাইরেও নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিতে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করা হতে পারে। সোমবার যেমন বিএনপি চেয়ারপারসনকে এমনটি ঘোষণা করা হয়েছে।

পাশাপাশি দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ মনে করেই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। সেক্ষেত্রে আলাদা করে কোনো প্রজ্ঞাপন জারির প্রয়োজন পড়ে না।

‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন-২০২১ এর আওতায় ‘বিশেষ নিরাপত্তা’ পেয়ে থাকেন। এই আইনের ২ ধারায় উল্লেখ আছে, ‘‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অর্থ সরকার কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান এবং এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে একই ধরনের ব্যক্তি বলে ঘোষিত অন্য কোনো ব্যক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত হবেন।”

সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ব্যক্তি বিশেষকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশেষ প্রজ্ঞাপন ঘোষণা করেই এটা করা হয়। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও এটিই করা হয়েছে।

অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির শারীরিক নিরাপত্তা দেয় এসএসএফ
অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির শারীরিক নিরাপত্তা দেয় এসএসএফ

‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’র সুযোগ–সুবিধা

এই মর্যাদার ব্যক্তিকে শারীরিক নিরাপত্তা দেয় ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী’ বা এসএসএফ। তাদের সঙ্গে থাকে প্রেসিডেন্টস গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) সশস্ত্র সৈনিকেরা। এক্ষেত্রে পিজিআর মূলত স্থাপনার নিরাপত্তা দেয়।

এসএসএফ অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির শারীরিক নিরাপত্তাই শুধু নয়, তাদের চলাফেরা, অবস্থান, বাসভবন ও জনসম্মুখে অবস্থানের সময় সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করে, তার পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির চলাফেরার সম্ভাব্য সব বাঁধা দূরে করে তার বাধাহীন চলাফেরাও নিশ্চিত করে এসএসএফ। এ ছাড়া জনসম্মুখে বা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির চারদিকে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির হাত থেকে তাকে রক্ষা করাও এসএসএফের দায়িত্ব।

অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিত করে এসএসএফ সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রয়োজনে যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে, তাকে এসএসএফ গ্রেপ্তার করতে পারে, এমনকি তাকে গুলিও করতে পারে।

খালেদা জিয়াকে এর আগেও সরকার ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তাকে ও শেখ হাসিনাকে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ঘোষণা করে এসএসএফ অধীনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল।

সম্পর্কিত