রিতু চক্রবর্ত্তী

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাত হলো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ থামাতে তৎপর আন্তর্জাতিক মহল। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনেও কর্মতৎপরতা দেখা যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ট্রাম্পের মেয়ের জামাই জ্যারেড কুশনার ও তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইউক্রেন–রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের সাথে দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন। বসেছেন পুতিনের সাথে। ফোনে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা কথাও বলেছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনেস্কির সাথেও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আশার আলো দেখা যাচ্ছে—এমনটা বলা যাচ্ছে না আসলে।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোতে ট্রাম্প যে ভূমিকা গ্রহণ করেছেন, তা নিয়েও চলছে সমালোচনা। ২৮ দফার যে শান্তিচুক্তি ট্রাম্প প্রশাসন প্রস্তাব করেছেন, তাকে নিন্দুকেরা অভিহিত করছেন রাশিয়ার ‘ভার্চুয়াল উইশলিস্ট’ হিসেবে। কারণ এই ২৮ দফা প্রস্তাবটির বেশির ভাগই রাশিয়ার পক্ষে যায়! আর তাই ইউক্রেন এই শান্তিপ্রস্তাব মেনে নিচ্ছে না বলে বিশ্লেষকদের মত। তবে ট্রাম্পের দাবি, প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি এই ২৮ দফা শান্তিপ্রস্তাব পড়েই দেখেননি!
রাশিয়া বলছে, চুক্তিপত্রে আমুল পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যদিকে কুশনার ও উইটকফের সাথে ফোনে কথা বলার পর জেলেনেস্কি এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন, ইউক্রেনের জন্য এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া কঠিন। অর্থাৎ, দুই পক্ষই শান্তিচুক্তি মেনে না নেওয়ার মতো অবস্থানই নিচ্ছে।
তবে রিগ্যান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোরামে দেওয়া এক ভাষণে আমেরিকার বিদায়ী রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাধানের খুব কাছাকাছি তারা। তার মতে, এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ মূলত নির্ভর করছে ডনবাস ও ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাপোরিঝঝিয়ার ভবিষ্যতের ওপর।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া ডনবাস অঞ্চলের প্রায় ৮৮% এবং জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭৩% নিয়ন্ত্রণ করে। যদিও বিশ্বের প্রায় সব দেশ এই অঞ্চলটিকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তবুও ইউক্রেন এখনও ডনবাসের কমপক্ষে ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে, যা রাশিয়া নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রুশ ও পূর্ব ইউরোপীয় রাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক ড. মার্নি হাউলেট গত আগস্ট মাসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “ডনবাস দখল করার পর রাশিয়া যুদ্ধ থামাবে, এমন কোনো লক্ষণ নেই। যদি এই অঞ্চলগুলো জোর করে দখল করা হয়, তবে তা একবিংশ শতাব্দীতে শক্তি প্রয়োগ করে সীমান্ত পরিবর্তনের কাজটিকে বৈধতা দেবে এবং ভবিষ্যতের আক্রমণের পথ তৈরি করবে।”
গত নভেম্বরে আমেরিকার দেওয়া খসড়া শান্তি প্রস্তাবের কিছু অংশ ফাঁস হয়েছিল। এটি ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাদের মতে, এমন খসড়ার মধ্য দিয়ে মস্কোর প্রধান দাবিগুলোর কাছে আসলে নতি স্বীকার করেছে।
উইটকফের সঙ্গে ক্রেমলিন বৈঠকের ঠিক আগে পুতিন বলেছিলেন যে, ইউরোপের সাথে যুদ্ধ চায় না রাশিয়া। কিন্তু ইউরোপ কোনো যুদ্ধ শুরু করলে রাশিয়ার সাথে আলোচনায় বসার জন্য কেউ আর অবশিষ্ট থাকবে না।
গত ২ ডিসেম্বর জেলেনেস্কি জানিয়েছিলেন যে, আলোচনাগুলো অবশ্যই ন্যায্য হতে হবে এবং ইউক্রেনের পেছনে কোনো খেলা চলতে দেওয়া যাবে না।
অর্থাৎ, একটি বিষয় স্পষ্ট যে, রাশিয়া ও ইউক্রেন—এই দুই পক্ষই শান্তিচুক্তি নিয়ে তর্জন–গর্জন একটু বেশিই করছে। মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেওয়া আমেরিকাও আসলে একদিকে ঝুঁকে আছে বলে অভিযোগ আছে। এমন অবস্থায় একমাত্র ইউরোপই সত্যিকারের মধ্যস্থতা করতে পারে। তবে আদৌ ইউরোপ সেই ভূমিকা নেবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে বিশ্লেষকদের। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপ আর বিশ্বরাজনীতির সংকটে ‘বিবৃতি’ দেওয়া বাদে শক্তিশালী একটি পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারছে না। আর এই সুযোগে মূলত সুবিধা হবে রাশিয়ারই।
এক কথায়, রাশিয়া–ইউক্রেন শান্তিচুক্তি আটকে আছে নানামাত্রিক স্বার্থকেন্দ্রিক জটিলতায়। এত কিছুর ভিড়ে শান্তিচুক্তি কেবলই পিছিয়ে যাচ্ছে। আরও কত পেছাবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, আল জাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাত হলো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ থামাতে তৎপর আন্তর্জাতিক মহল। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনেও কর্মতৎপরতা দেখা যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ট্রাম্পের মেয়ের জামাই জ্যারেড কুশনার ও তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইউক্রেন–রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের সাথে দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন। বসেছেন পুতিনের সাথে। ফোনে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা কথাও বলেছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনেস্কির সাথেও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আশার আলো দেখা যাচ্ছে—এমনটা বলা যাচ্ছে না আসলে।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোতে ট্রাম্প যে ভূমিকা গ্রহণ করেছেন, তা নিয়েও চলছে সমালোচনা। ২৮ দফার যে শান্তিচুক্তি ট্রাম্প প্রশাসন প্রস্তাব করেছেন, তাকে নিন্দুকেরা অভিহিত করছেন রাশিয়ার ‘ভার্চুয়াল উইশলিস্ট’ হিসেবে। কারণ এই ২৮ দফা প্রস্তাবটির বেশির ভাগই রাশিয়ার পক্ষে যায়! আর তাই ইউক্রেন এই শান্তিপ্রস্তাব মেনে নিচ্ছে না বলে বিশ্লেষকদের মত। তবে ট্রাম্পের দাবি, প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি এই ২৮ দফা শান্তিপ্রস্তাব পড়েই দেখেননি!
রাশিয়া বলছে, চুক্তিপত্রে আমুল পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যদিকে কুশনার ও উইটকফের সাথে ফোনে কথা বলার পর জেলেনেস্কি এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন, ইউক্রেনের জন্য এই প্রস্তাব মেনে নেওয়া কঠিন। অর্থাৎ, দুই পক্ষই শান্তিচুক্তি মেনে না নেওয়ার মতো অবস্থানই নিচ্ছে।
তবে রিগ্যান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোরামে দেওয়া এক ভাষণে আমেরিকার বিদায়ী রাষ্ট্রদূত কিথ কেলগ বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাধানের খুব কাছাকাছি তারা। তার মতে, এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ মূলত নির্ভর করছে ডনবাস ও ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাপোরিঝঝিয়ার ভবিষ্যতের ওপর।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া ডনবাস অঞ্চলের প্রায় ৮৮% এবং জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ৭৩% নিয়ন্ত্রণ করে। যদিও বিশ্বের প্রায় সব দেশ এই অঞ্চলটিকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তবুও ইউক্রেন এখনও ডনবাসের কমপক্ষে ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে, যা রাশিয়া নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রুশ ও পূর্ব ইউরোপীয় রাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক ড. মার্নি হাউলেট গত আগস্ট মাসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “ডনবাস দখল করার পর রাশিয়া যুদ্ধ থামাবে, এমন কোনো লক্ষণ নেই। যদি এই অঞ্চলগুলো জোর করে দখল করা হয়, তবে তা একবিংশ শতাব্দীতে শক্তি প্রয়োগ করে সীমান্ত পরিবর্তনের কাজটিকে বৈধতা দেবে এবং ভবিষ্যতের আক্রমণের পথ তৈরি করবে।”
গত নভেম্বরে আমেরিকার দেওয়া খসড়া শান্তি প্রস্তাবের কিছু অংশ ফাঁস হয়েছিল। এটি ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাদের মতে, এমন খসড়ার মধ্য দিয়ে মস্কোর প্রধান দাবিগুলোর কাছে আসলে নতি স্বীকার করেছে।
উইটকফের সঙ্গে ক্রেমলিন বৈঠকের ঠিক আগে পুতিন বলেছিলেন যে, ইউরোপের সাথে যুদ্ধ চায় না রাশিয়া। কিন্তু ইউরোপ কোনো যুদ্ধ শুরু করলে রাশিয়ার সাথে আলোচনায় বসার জন্য কেউ আর অবশিষ্ট থাকবে না।
গত ২ ডিসেম্বর জেলেনেস্কি জানিয়েছিলেন যে, আলোচনাগুলো অবশ্যই ন্যায্য হতে হবে এবং ইউক্রেনের পেছনে কোনো খেলা চলতে দেওয়া যাবে না।
অর্থাৎ, একটি বিষয় স্পষ্ট যে, রাশিয়া ও ইউক্রেন—এই দুই পক্ষই শান্তিচুক্তি নিয়ে তর্জন–গর্জন একটু বেশিই করছে। মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেওয়া আমেরিকাও আসলে একদিকে ঝুঁকে আছে বলে অভিযোগ আছে। এমন অবস্থায় একমাত্র ইউরোপই সত্যিকারের মধ্যস্থতা করতে পারে। তবে আদৌ ইউরোপ সেই ভূমিকা নেবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে বিশ্লেষকদের। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপ আর বিশ্বরাজনীতির সংকটে ‘বিবৃতি’ দেওয়া বাদে শক্তিশালী একটি পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারছে না। আর এই সুযোগে মূলত সুবিধা হবে রাশিয়ারই।
এক কথায়, রাশিয়া–ইউক্রেন শান্তিচুক্তি আটকে আছে নানামাত্রিক স্বার্থকেন্দ্রিক জটিলতায়। এত কিছুর ভিড়ে শান্তিচুক্তি কেবলই পিছিয়ে যাচ্ছে। আরও কত পেছাবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, সিএনএন, আল জাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ান