রাশোমন সিনেমা থেকে যেভাবে এল ‘রাশোমন ইফেক্ট’

রাশোমন সিনেমা থেকে যেভাবে এল ‘রাশোমন ইফেক্ট’
প্রতীকী ছবি। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

‘রাশোমন ইফেক্ট’ কি জানেন তো? একটি মাত্র ঘটনাকে একাধিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। একটি ঘটনা যখন ঘটে তখন একেকজন একেকভাবে তা দেখে এবং বর্ণনা করে। একজনের বয়ান আরেকজনের বয়ানের একেবারে বিপরীত ও সাংঘর্ষিকও হতে পারে, এই অবস্থাকেই দর্শন ও মনোবিজ্ঞানে ‘রাশোমন ইফেক্ট’ বলে। শুনে অবাক হবেন, এই কথাটি এসেছে একটি জাপানি সিনেমা থেকে।

‘রাশোমন ইফেক্ট’কে ‘কুরোসাওয়া ইফেক্ট’ও বলা হয়। জাপানের অনবদ্য সিনেমা ‘রাশোমন’ মুক্তি পায় ১৯৫০ সালে। পরিচালক ছিলেন আকিরা কুরোসাওয়া।

সেই সিনেমায় দেখা যায়, একটি খুনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু চারজন সাক্ষী চারভাবে সেই ঘটনার বর্ণনা দেয়। দার্শনিক ও মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যেকোনো একটি ঘটনা সম্পর্কে মানুষের ধারণা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কেউ মিথ্যার আশ্রয় না নিলেও—একটি বয়ান থেকে আরেকটির পার্থক্য থাকা ভীষণ সম্ভব। এই বিষয়টিকে বুঝাতেই ‘রাশোমন ইফেক্ট’ টার্মটি ব্যবহার করা হয়।

এবার সিনেমাটি নিয়ে কিছু কথা বলি। কুরোসাওয়া এই ক্ল্যাসিক্যাল সিনেমাটির পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। তার সহ-চিত্রনাট্যকার হিসেবে ছিলেন শিনেবু হাশিমোতো। মূল গল্পটি অবশ্য তাদের লেখা নয়—১৯২২ সালে ছোটগল্পটি লিখেছিলেন রাইউনুসুকে আকুতাগাওয়া। গল্পটি পড়া আর সিনেমারূপে দেখা একদমই আলাদা ব্যাপার। একটি ঘটনা চারজন চারভাবে বলছে, মানে ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সেসময় এমন চিত্রনাট্য খুবই নতুন ও দুর্বোধ্য ছিল। সিনেমার গল্পটি বুঝতে পারছিলেন না সিনেমার তিনজন সহকারী পরিচালকও।

শুরুতে কালজয়ী যেকোনো শিল্পকর্মের কপালে যা ঘটে—রাশোমন সিনেমার বেলায়ও তাই ঘটল। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে, বলা হয় এটি একঘেয়ে ও বিরক্তিকর। জাপানের সেন্সর বোর্ড সিনেমায় চুম্বন দৃশ্য মেনে নেয় ১৯৪৬ সাল থেকে। তারপরও চুম্বন দৃশ্যকে অশ্লীল মনে করত সবাই। রাশোমনে চুম্বনদৃশ্য থাকায় সিনেমাটির গায় অশ্লীলতার সিলও পড়ে যায়।

রাশোমন বিখ্যাত হয় ১৯৫১ সালে ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের গিয়ে। সেখানে যেতেও অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। খোদ সিনেমার পরিবেশক দাইয়ে ফিল্ম কোম্পানি চায়নি সিনেমাটি ইতালি পাঠানো হোক। অবশেষে রাশোমন ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে যায় এবং ইতিহাস সৃষ্টি করে। সেই উৎসবে পুরস্কার অর্জন তো করেই, পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫২ সালে সেরা ভিনদেশি চলচ্চিত্র হিসেবে পায় একাডেমি অ্যাওয়ার্ড।

শেষ করা যাক আরেকটি তথ্য দিয়ে, এই বিশ্বখ্যাত সিনেমার গল্পটি যার লেখা—সেই রাইউনুসুকে আকুতাগাওয়া ১৯২৭ সালে আত্মহত্যা করেন। শুধু রাশমনো না—তার আরো বেশ কয়েকটি গল্প অবলম্বনে সিনেমা তৈরি হয়েছে।

তথ্যসূত্র: মিডিয়াম, কানাডিয়ান জার্নাল ও কমিউনিকেশন, ব্রিটানিকা এবং দ্য হিন্দু

সম্পর্কিত