ফজলে রাব্বি

হঠাৎ করেই ফুলবাড়ী আবার আলোচনায়। ফুলবাড়ী শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে শুধু একটি স্থান নয়, একটা আন্দোলন এবং সেই আন্দোলন ও মানুষের দাবির কাছে সরকারের নতি স্বীকারের কথাই মনে আসে আগে। এতদিন পর ফুলবাড়ী আবার আলোচনায় কেন? প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের একটি ফেসবুক পোস্ট। সে আলোচনায় প্রবেশের আগে ‘ফুলবাড়ী’ প্রসঙ্গটি একটু বুঝে নেওয়া যাক।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করবে না; এশিয়া এনার্জি বাংলাদেশে কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না; এবং তাদের সাথে করা সব চুক্তি বাতিল করা হবে–দেশীয় কয়লার প্রশ্নে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৯ বছর আগে, ২০০৬ সালের ৩০ আগস্ট। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সঙ্গে জনগণের এ ‘চুক্তি’ হয়।
এরপর দেশে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে কয়লার চাহিদা বাড়তে থাকে। বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করে সে চাহিদা মেটানো হলেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর কয়লার ব্যবহারে অন্তত প্রকাশ্যে উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার।
কিন্তু সম্প্রতি শফিকুল আলম ১৯ বছর আগের সেই ‘চুক্তি’-কেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। কী বলেছেন তিনি?
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফুলবাড়ীর কয়লা উত্তোলন না করার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে নিজের মতামত তুলে ধরেন। এই কয়লা উত্তোলনের পক্ষে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি ক্ষুধা, পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কার বিপরীতে বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়, চীন ও অস্ট্রেলিয়ায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার উদাহরণ তুলে ধরেন।
শফিকুল আলমের এই ফেসবুক পোস্ট কি ব্যক্তিগত, নাকি সরকারি কোনো সিদ্ধান্তের পূর্বলক্ষণ? মোটাদাগে তার এই পোস্ট, তার ব্যক্তিগত মতামতই। কিন্তু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থাকায়, তার এই পোস্টকে অনেকেই পাঠ করছেন সরকারের তরফ থেকে ‘পাবলিক পালস টেস্ট’ হিসেবে।
এই স্ট্যাটাসকে সহজভাবে নিতে পারেনি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, সরাসরি কয়লা ফুলবাড়ীর কয়লা উত্তোলনের কথা না বললেও ইনিয়ে বিনিয়ে নানা পক্ষের মুখ থেকে বিষয়টির পক্ষে জনমত যাচাই কিংবা বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছে স্বার্থান্বেষী মহল।
সরকারপ্রধানের প্রেস সচিবের এই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। গত ৬ ডিসেম্বর এই অধ্যাপক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “প্রধান উপদেষ্টার ক্ষমতার তাপে তার তথাকথিত প্রেস সচিব বাংলাদেশের মানুষের সাথে একের পর এক বেয়াদবি করে যাচ্ছে। সর্বশেষ টাউট বাটপার কোম্পানির কোলে বসে ফুলবাড়ী নিয়ে তার মন্তব্য/নড়াচড়া ঔদ্ধত্যের সীমা অতিক্রম করেছে! এসবের যথাযথ জবাব তার প্রাপ্য।”
শফিকুল আলমের মন্তব্যে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। চরচাকে তিনি বলেন, “জ্বালানি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, অর্থনীতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আছে, এমন কোনো মানুষের পক্ষে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ীর কয়লা উত্তোলনের পক্ষে কথা বলা সম্ভব না। নানারকম কায়েমি স্বার্থে নাইকো, এশিয়া এনার্জির মতো কোম্পানিগুলোর লুটপাটের পক্ষে বলা কথা অতীতের মতো এখনো অব্যাহত আছে। এগুলো আসলে ক্ষমতাধরদের পক্ষে পাবলিক পালস টেস্ট করার কৌশল। ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প বাতিল হয়েছিল গণরায়ের ভিত্তিতে।”
ওই জনরায়ের বিপক্ষে অবস্থান দেশদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে বলেও মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।
টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক বিশ্লেষক ও লেখক কল্লোল মোস্তফা লন্ডন শেয়ার মার্কেট বিষয়ক এক ফাইনান্সিয়াল ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট শেয়ার করে তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “প্রতি বছর ডিসেম্বরে ফুলবাড়ী কয়লা খনি নিয়ে আলোচনা তোলার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। এ সময় ফুলবাড়ী থেকে কয়লা উত্তোলন করতে চাওয়া কোম্পানি জিসিএম রিসোর্সের (প্রাক্তন এশিয়া এনার্জি) এজিএম বা বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এজিএম এর সময় কোম্পানিটি ফুলবাড়ী প্রকল্প সম্পর্কে ইতিবাচক খবর বা আলোচনা তৈরির চেষ্টা করে। উদ্দেশ্য হলো শেয়ারের দাম বাড়ানো ও শেয়ারহোল্ডারদের চাঙা রাখা।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমাল্লার বসু শফিকুল আলমের স্ট্যাটাসের জবাবে রাশদুস সালেহীন জাওয়াদের একটি লেখা শেয়ার করেছেন। যাতে দাবি করা হয়েছে, ‘জেনে বুঝেই বাস্তব সত্য আড়াল’ করছেন প্রেস সচিব। তিনি লেখেন, “ফুলবাড়ীর কয়লা বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য উত্তোলন করাই হচ্ছিলো না! কয়লা খনির মালিক ছিলো এশিয়া এনার্জি, শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিলো কয়লা রপ্তানী করা। রপ্তানী করে যে আয় হতো, সেই আয়ের মাত্র ৬% পাওয়ার কথা ছিলো বাংলাদেশের, আর বাকি ৯৪% পাওয়ার কথা ছিলো এশিয়া এনার্জির। সেই সময়ে সাংবাদিকতা করা কেউ এই বেসিক ফ্যাক্ট জানে না, সেটা হতে পারে না।”
নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে গত ৭ ডিসেম্বর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডির পোস্টে গঠনমূলক সমালোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রেস সচিব শফিকুল আলম লেখেন, “সাম্প্রতিক ব্যক্তিগত পোস্টটি এসেছে সরকারের সঙ্গে ১৬ মাসের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে। বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশ, অথচ আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম অনেক সময় এই বাস্তবতাটি উপেক্ষা করে। আমি যদি এখনো এএফপিতে কাজ করতাম, তাহলে সম্ভবত বর্তমান অবস্থানটিকে কঠোর সমালোচনা করতাম।”
পেছনের কথা
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী কয়লা খনি ঘিরে তৎপর হয়ে ওঠে এশিয়া এনার্জি নামের একটি কোম্পানি। ফুলবাড়ী, বিরামপুর, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ অঞ্চলে মাটির নিচে থাকা কয়লা খনি থেকে তুলতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি থেকে ৫৭২ মিলিয়ন টন কয়লা তোলার ইচ্ছা ছিল তাদের। অথচ কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না লন্ডনে তালিকাভূক্ত এশিয়া এনার্জির। শুধু তাই না, খনির পুরো মালিকানা থাকবে তাদের হাতে। বাংলাদেশের ভাগে থাকবে মাত্র ছয় ভাগ রয়্যালটি। এই রয়্যালটির টাকাতেই সুন্দরবন পর্যন্ত রেললাইনসহ অবকাঠামো নির্মাণ করে এই কয়লা বিদেশে রপ্তানির সুযোগ করে দিতে হবে।
এশিয়া এনার্জির এমন পরিকল্পনার তথ্য সামনে এলে প্রথমে স্থানীয়রা প্রতিবাদ শুরু করে। পরে তাদের আগ্রহে একপর্যায়ে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। গড়ে ওঠে তীব্র আন্দোলন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় তৎকালীন বিডিআর। শহীদ হন আমিন, তরিকুল ও সালেকিন। তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরসহ সারাদেশের মানুষ। বাধ্য হয়ে ২০০৬ সালের ৩০ আগস্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন না করা, বাংলাদেশে এশিয়া এনার্জির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও সরকারের সাথে চুক্তি বাতিলসহ সাত দফা দাবি মেনে চুক্তি সই করে সরকার।

হঠাৎ করেই ফুলবাড়ী আবার আলোচনায়। ফুলবাড়ী শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে শুধু একটি স্থান নয়, একটা আন্দোলন এবং সেই আন্দোলন ও মানুষের দাবির কাছে সরকারের নতি স্বীকারের কথাই মনে আসে আগে। এতদিন পর ফুলবাড়ী আবার আলোচনায় কেন? প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের একটি ফেসবুক পোস্ট। সে আলোচনায় প্রবেশের আগে ‘ফুলবাড়ী’ প্রসঙ্গটি একটু বুঝে নেওয়া যাক।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করবে না; এশিয়া এনার্জি বাংলাদেশে কোনো কার্যক্রম চালাতে পারবে না; এবং তাদের সাথে করা সব চুক্তি বাতিল করা হবে–দেশীয় কয়লার প্রশ্নে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৯ বছর আগে, ২০০৬ সালের ৩০ আগস্ট। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সঙ্গে জনগণের এ ‘চুক্তি’ হয়।
এরপর দেশে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে কয়লার চাহিদা বাড়তে থাকে। বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করে সে চাহিদা মেটানো হলেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর কয়লার ব্যবহারে অন্তত প্রকাশ্যে উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার।
কিন্তু সম্প্রতি শফিকুল আলম ১৯ বছর আগের সেই ‘চুক্তি’-কেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। কী বলেছেন তিনি?
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফুলবাড়ীর কয়লা উত্তোলন না করার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে নিজের মতামত তুলে ধরেন। এই কয়লা উত্তোলনের পক্ষে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি ক্ষুধা, পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কার বিপরীতে বিলিয়ন ডলার সাশ্রয়, চীন ও অস্ট্রেলিয়ায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার উদাহরণ তুলে ধরেন।
শফিকুল আলমের এই ফেসবুক পোস্ট কি ব্যক্তিগত, নাকি সরকারি কোনো সিদ্ধান্তের পূর্বলক্ষণ? মোটাদাগে তার এই পোস্ট, তার ব্যক্তিগত মতামতই। কিন্তু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থাকায়, তার এই পোস্টকে অনেকেই পাঠ করছেন সরকারের তরফ থেকে ‘পাবলিক পালস টেস্ট’ হিসেবে।
এই স্ট্যাটাসকে সহজভাবে নিতে পারেনি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, সরাসরি কয়লা ফুলবাড়ীর কয়লা উত্তোলনের কথা না বললেও ইনিয়ে বিনিয়ে নানা পক্ষের মুখ থেকে বিষয়টির পক্ষে জনমত যাচাই কিংবা বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছে স্বার্থান্বেষী মহল।
সরকারপ্রধানের প্রেস সচিবের এই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। গত ৬ ডিসেম্বর এই অধ্যাপক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “প্রধান উপদেষ্টার ক্ষমতার তাপে তার তথাকথিত প্রেস সচিব বাংলাদেশের মানুষের সাথে একের পর এক বেয়াদবি করে যাচ্ছে। সর্বশেষ টাউট বাটপার কোম্পানির কোলে বসে ফুলবাড়ী নিয়ে তার মন্তব্য/নড়াচড়া ঔদ্ধত্যের সীমা অতিক্রম করেছে! এসবের যথাযথ জবাব তার প্রাপ্য।”
শফিকুল আলমের মন্তব্যে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। চরচাকে তিনি বলেন, “জ্বালানি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, অর্থনীতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আছে, এমন কোনো মানুষের পক্ষে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ীর কয়লা উত্তোলনের পক্ষে কথা বলা সম্ভব না। নানারকম কায়েমি স্বার্থে নাইকো, এশিয়া এনার্জির মতো কোম্পানিগুলোর লুটপাটের পক্ষে বলা কথা অতীতের মতো এখনো অব্যাহত আছে। এগুলো আসলে ক্ষমতাধরদের পক্ষে পাবলিক পালস টেস্ট করার কৌশল। ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প বাতিল হয়েছিল গণরায়ের ভিত্তিতে।”
ওই জনরায়ের বিপক্ষে অবস্থান দেশদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে বলেও মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।
টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক বিশ্লেষক ও লেখক কল্লোল মোস্তফা লন্ডন শেয়ার মার্কেট বিষয়ক এক ফাইনান্সিয়াল ওয়েবসাইটের স্ক্রিনশট শেয়ার করে তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “প্রতি বছর ডিসেম্বরে ফুলবাড়ী কয়লা খনি নিয়ে আলোচনা তোলার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। এ সময় ফুলবাড়ী থেকে কয়লা উত্তোলন করতে চাওয়া কোম্পানি জিসিএম রিসোর্সের (প্রাক্তন এশিয়া এনার্জি) এজিএম বা বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এজিএম এর সময় কোম্পানিটি ফুলবাড়ী প্রকল্প সম্পর্কে ইতিবাচক খবর বা আলোচনা তৈরির চেষ্টা করে। উদ্দেশ্য হলো শেয়ারের দাম বাড়ানো ও শেয়ারহোল্ডারদের চাঙা রাখা।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমাল্লার বসু শফিকুল আলমের স্ট্যাটাসের জবাবে রাশদুস সালেহীন জাওয়াদের একটি লেখা শেয়ার করেছেন। যাতে দাবি করা হয়েছে, ‘জেনে বুঝেই বাস্তব সত্য আড়াল’ করছেন প্রেস সচিব। তিনি লেখেন, “ফুলবাড়ীর কয়লা বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য উত্তোলন করাই হচ্ছিলো না! কয়লা খনির মালিক ছিলো এশিয়া এনার্জি, শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্য ছিলো কয়লা রপ্তানী করা। রপ্তানী করে যে আয় হতো, সেই আয়ের মাত্র ৬% পাওয়ার কথা ছিলো বাংলাদেশের, আর বাকি ৯৪% পাওয়ার কথা ছিলো এশিয়া এনার্জির। সেই সময়ে সাংবাদিকতা করা কেউ এই বেসিক ফ্যাক্ট জানে না, সেটা হতে পারে না।”
নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে গত ৭ ডিসেম্বর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডির পোস্টে গঠনমূলক সমালোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রেস সচিব শফিকুল আলম লেখেন, “সাম্প্রতিক ব্যক্তিগত পোস্টটি এসেছে সরকারের সঙ্গে ১৬ মাসের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে। বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশ, অথচ আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম অনেক সময় এই বাস্তবতাটি উপেক্ষা করে। আমি যদি এখনো এএফপিতে কাজ করতাম, তাহলে সম্ভবত বর্তমান অবস্থানটিকে কঠোর সমালোচনা করতাম।”
পেছনের কথা
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় ২০০৪ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী কয়লা খনি ঘিরে তৎপর হয়ে ওঠে এশিয়া এনার্জি নামের একটি কোম্পানি। ফুলবাড়ী, বিরামপুর, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ অঞ্চলে মাটির নিচে থাকা কয়লা খনি থেকে তুলতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি থেকে ৫৭২ মিলিয়ন টন কয়লা তোলার ইচ্ছা ছিল তাদের। অথচ কয়লা উত্তোলনের ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না লন্ডনে তালিকাভূক্ত এশিয়া এনার্জির। শুধু তাই না, খনির পুরো মালিকানা থাকবে তাদের হাতে। বাংলাদেশের ভাগে থাকবে মাত্র ছয় ভাগ রয়্যালটি। এই রয়্যালটির টাকাতেই সুন্দরবন পর্যন্ত রেললাইনসহ অবকাঠামো নির্মাণ করে এই কয়লা বিদেশে রপ্তানির সুযোগ করে দিতে হবে।
এশিয়া এনার্জির এমন পরিকল্পনার তথ্য সামনে এলে প্রথমে স্থানীয়রা প্রতিবাদ শুরু করে। পরে তাদের আগ্রহে একপর্যায়ে এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। গড়ে ওঠে তীব্র আন্দোলন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় তৎকালীন বিডিআর। শহীদ হন আমিন, তরিকুল ও সালেকিন। তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে দিনাজপুরসহ সারাদেশের মানুষ। বাধ্য হয়ে ২০০৬ সালের ৩০ আগস্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন না করা, বাংলাদেশে এশিয়া এনার্জির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও সরকারের সাথে চুক্তি বাতিলসহ সাত দফা দাবি মেনে চুক্তি সই করে সরকার।