সোহরাব হাসান

দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও জরিপকে অধিক বিশ্বাসযোগ্য ভাবা হয়। এ কারণে বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশি সংস্থাকে দিয়ে জরিপ করিয়ে থাকে। এর পেছনে যুক্তিও আছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিয়ে শাসকেরা অনেক কিছু করাতে পারে। কিন্তু বিদেশি প্রতিষ্ঠান হলে সেটি সম্ভব নয়।
কিন্তু, কখনো কখনো আমরা এর উল্টো যাত্রাও লক্ষ্য করি। গণতন্ত্রের সপক্ষে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট বা আইআরআই–এর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৬৯ শতাংশ মানুষের আস্থা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর। থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
কিন্তু তাদের জরিপের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন না উঠে পারে না। এই সংস্থা ২০২৩ সালের আগস্টে আরেকটি জরিপ করেছিল। ওই জরিপে দেখা যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজকে সমর্থন দিয়েছেন দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ। এবারের মতো সেটাও ছিল ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ শিরোনামে।
২০২৩ সালে যদি কোনো প্রধানমন্ত্রীর কাজের প্রতি ৭০ শতাংশ মানুষের সমর্থন থাকে, এক বছরের মাথায় তার সরকারের পতন ঘটবে কেন? আমাদের মতো দেশে যে কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের মেয়াদ যত বাড়ে, জনপ্রিয়তা তত কমতে থাকে। কিন্তু আইআরআই জরিপে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ২০১৮ সালে দেখিয়েছে ৬৬ শতাংশ। ২০২৩ সালে সেটা বেড়ে হয়েছিল ৭০ শতাংশ। কেরামতিই বটে।
উপসংহারে আআইআরআইএর জরিপের মন্তব্য ছিল, “ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জনসমর্থন ধরে রেখেছে।”
সরকারি দল জনপ্রিয়তা ধরে রাখলে বিরোধী দলের বাড়ে কীভাবে? আবার বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা বাড়লে সরকারি দল ধরে রাখে কী করে? আইআরআই জরিপের এক বছরের মাথায়, ২০২৪ সালের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং তিনি দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।
২০২৩ সালের জরিপের সঙ্গে এবারে পরিচালিত জরিপ মিলিয়ে দেখলে ফারাক খুব সামান্য। সেবারে সংস্থাটি শেখ হাসিনার প্রতি ৭০ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে বলে জানিয়েছিল। এবারে বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ৬৯ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে।
এবারে জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ নাকি ‘মন্দ’ মনে করছেন? জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৯ শতাংশ বলেছেন, ‘খুবই ভালো’। ‘মোটামুটি ভালো’–বলেছেন ৪৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৭২ শতাংশ মানুষ দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। অন্যদিকে ৭ শতাংশ মানুষের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ‘খুবই খারাপ’।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫৩ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, এ সময়ে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। ৪২ শতাংশ মনে করছেন, ভুলপথে এগোচ্ছে। এখানে সঠিক ও ভুল পথের সমর্থকের মধ্যে ফারাক কম। মাত্র ১১ শতাংশ।
যদি আগামী সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। জামায়াতকে ভোট দিতে চান ২৬ শতাংশ। এর পরই রয়েছে এনসিপি (৬ শতাংশ), জাতীয় পার্টি (৫ শতাংশ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (৪ শতাংশ)।
জরিপে অংশ নেওয়া ৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, কাকে ভোট দেবেন, সেই বিষয়ে তারা এখনো নিশ্চিত নন। আর ১১ শতাংশ উল্লিখিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। ভোট না দেওয়া মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। ১২ কোটি ৭০ লাখ ভোটারের ১১ শতাংশ মানে এক কোটিরও বেশি।
আইআরআই-এর জরিপে জাতীয় পার্টির প্রতি ৫ শতাংশ মানুষের সমর্থন থাকার কথা বলা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ৪ শতাংশ। কিন্তু তারা বোধগম্য কারণেই আওয়ামী লীগকে বাদ রেখেছে। তারা জানে, সরকার নির্বাহী আদেশে যে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, সেই দলটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। ধারণা করি, এর মাধ্যমে সংস্থাটি সরকারকে খুশি করেছে অথবা অতীতের ‘পাপ’ স্খলন করতে সচেষ্ট থেকেছে।
এটা হলো আইআরআই মডেলের নিরপেক্ষ জরিপ। যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন, তখন তাদের পক্ষে জয়গান গাওয়াই দেশে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাওয়া এই থিংকট্যাঙ্ক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির ধর্ম।
চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইআরআই-এর একটি উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছিল পরিস্থিতি অবলোকন করতে। একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এক বছর আগে তারা যেই ব্যক্তির প্রতি ৭০ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে জানিয়েছিলেন, এক বছর পর তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হলো। তাদের জরিপ বা গবেষণার বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে কী করে? সদুত্তর দিতে পারেনি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও অনেক সংস্থা জরিপ করছে। মাস খানেক আগে তরুণদের মধ্যে পরিচালিত আরেক জরিপে দেখা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে। তাদের বিবেচনায় ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জামায়াত, ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পাবে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট। বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পায়, তাহলে ১৫ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ ভোট পাবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গত ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
আইআরআই-এর জরিপ থেকে অ্যাকশন এইডের জরিপের ফল ভিন্ন। অ্যাকশন এইড বলেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি পাবে ১৫. ৮৪ শতাংশ ভোট পাবে আর আইআরআই বলেছে, ছয় শতাংশ।
গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান মানুষের কাছ থেকে কী জবাব বের করতে চান, তার ওপরই জরিপের ফলাফল নির্ভর করে। আইআরআইয়ের আগের জরিপটি মতলবি হলে পরেরটি বিশুদ্ধ হওয়ার কারণ নেই।
জরিপ হলো জনমত যাচাইয়ের একটি পরীক্ষিত মাধ্যম। এসব জরিপের মাধ্যমে রাজনীতির গতিবিধি আঁচ করা যায়। কিন্তু সেই জরিপ যদি ক্ষমতাসীনদের তুষ্ট করার কাজে ব্যবহৃত হয়, তাহলে তার উদ্দেশ্যই কেবল ব্যাহত হয় না, জরিপকারী প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
সোহরাব হাসান: সম্পাদক, চরচা।

দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ও জরিপকে অধিক বিশ্বাসযোগ্য ভাবা হয়। এ কারণে বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশি সংস্থাকে দিয়ে জরিপ করিয়ে থাকে। এর পেছনে যুক্তিও আছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিয়ে শাসকেরা অনেক কিছু করাতে পারে। কিন্তু বিদেশি প্রতিষ্ঠান হলে সেটি সম্ভব নয়।
কিন্তু, কখনো কখনো আমরা এর উল্টো যাত্রাও লক্ষ্য করি। গণতন্ত্রের সপক্ষে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট বা আইআরআই–এর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৬৯ শতাংশ মানুষের আস্থা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর। থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
কিন্তু তাদের জরিপের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন না উঠে পারে না। এই সংস্থা ২০২৩ সালের আগস্টে আরেকটি জরিপ করেছিল। ওই জরিপে দেখা যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজকে সমর্থন দিয়েছেন দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ। এবারের মতো সেটাও ছিল ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ শিরোনামে।
২০২৩ সালে যদি কোনো প্রধানমন্ত্রীর কাজের প্রতি ৭০ শতাংশ মানুষের সমর্থন থাকে, এক বছরের মাথায় তার সরকারের পতন ঘটবে কেন? আমাদের মতো দেশে যে কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের মেয়াদ যত বাড়ে, জনপ্রিয়তা তত কমতে থাকে। কিন্তু আইআরআই জরিপে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ২০১৮ সালে দেখিয়েছে ৬৬ শতাংশ। ২০২৩ সালে সেটা বেড়ে হয়েছিল ৭০ শতাংশ। কেরামতিই বটে।
উপসংহারে আআইআরআইএর জরিপের মন্তব্য ছিল, “ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জনসমর্থন ধরে রেখেছে।”
সরকারি দল জনপ্রিয়তা ধরে রাখলে বিরোধী দলের বাড়ে কীভাবে? আবার বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা বাড়লে সরকারি দল ধরে রাখে কী করে? আইআরআই জরিপের এক বছরের মাথায়, ২০২৪ সালের আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং তিনি দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।
২০২৩ সালের জরিপের সঙ্গে এবারে পরিচালিত জরিপ মিলিয়ে দেখলে ফারাক খুব সামান্য। সেবারে সংস্থাটি শেখ হাসিনার প্রতি ৭০ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে বলে জানিয়েছিল। এবারে বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ৬৯ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে।
এবারে জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ‘ভালো’ নাকি ‘মন্দ’ মনে করছেন? জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২৯ শতাংশ বলেছেন, ‘খুবই ভালো’। ‘মোটামুটি ভালো’–বলেছেন ৪৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৭২ শতাংশ মানুষ দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। অন্যদিকে ৭ শতাংশ মানুষের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ‘খুবই খারাপ’।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫৩ শতাংশ মানুষ মনে করছেন, এ সময়ে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে। ৪২ শতাংশ মনে করছেন, ভুলপথে এগোচ্ছে। এখানে সঠিক ও ভুল পথের সমর্থকের মধ্যে ফারাক কম। মাত্র ১১ শতাংশ।
যদি আগামী সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ৩০ শতাংশ মানুষ বিএনপির কথা বলেছেন। জামায়াতকে ভোট দিতে চান ২৬ শতাংশ। এর পরই রয়েছে এনসিপি (৬ শতাংশ), জাতীয় পার্টি (৫ শতাংশ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (৪ শতাংশ)।
জরিপে অংশ নেওয়া ৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, কাকে ভোট দেবেন, সেই বিষয়ে তারা এখনো নিশ্চিত নন। আর ১১ শতাংশ উল্লিখিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন। ভোট না দেওয়া মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। ১২ কোটি ৭০ লাখ ভোটারের ১১ শতাংশ মানে এক কোটিরও বেশি।
আইআরআই-এর জরিপে জাতীয় পার্টির প্রতি ৫ শতাংশ মানুষের সমর্থন থাকার কথা বলা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ৪ শতাংশ। কিন্তু তারা বোধগম্য কারণেই আওয়ামী লীগকে বাদ রেখেছে। তারা জানে, সরকার নির্বাহী আদেশে যে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, সেই দলটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। ধারণা করি, এর মাধ্যমে সংস্থাটি সরকারকে খুশি করেছে অথবা অতীতের ‘পাপ’ স্খলন করতে সচেষ্ট থেকেছে।
এটা হলো আইআরআই মডেলের নিরপেক্ষ জরিপ। যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন, তখন তাদের পক্ষে জয়গান গাওয়াই দেশে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাওয়া এই থিংকট্যাঙ্ক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির ধর্ম।
চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইআরআই-এর একটি উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছিল পরিস্থিতি অবলোকন করতে। একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, এক বছর আগে তারা যেই ব্যক্তির প্রতি ৭০ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে জানিয়েছিলেন, এক বছর পর তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হলো। তাদের জরিপ বা গবেষণার বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে কী করে? সদুত্তর দিতে পারেনি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও অনেক সংস্থা জরিপ করছে। মাস খানেক আগে তরুণদের মধ্যে পরিচালিত আরেক জরিপে দেখা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে। তাদের বিবেচনায় ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জামায়াত, ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পাবে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট। বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পায়, তাহলে ১৫ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ ভোট পাবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গত ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
আইআরআই-এর জরিপ থেকে অ্যাকশন এইডের জরিপের ফল ভিন্ন। অ্যাকশন এইড বলেছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি পাবে ১৫. ৮৪ শতাংশ ভোট পাবে আর আইআরআই বলেছে, ছয় শতাংশ।
গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান মানুষের কাছ থেকে কী জবাব বের করতে চান, তার ওপরই জরিপের ফলাফল নির্ভর করে। আইআরআইয়ের আগের জরিপটি মতলবি হলে পরেরটি বিশুদ্ধ হওয়ার কারণ নেই।
জরিপ হলো জনমত যাচাইয়ের একটি পরীক্ষিত মাধ্যম। এসব জরিপের মাধ্যমে রাজনীতির গতিবিধি আঁচ করা যায়। কিন্তু সেই জরিপ যদি ক্ষমতাসীনদের তুষ্ট করার কাজে ব্যবহৃত হয়, তাহলে তার উদ্দেশ্যই কেবল ব্যাহত হয় না, জরিপকারী প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
সোহরাব হাসান: সম্পাদক, চরচা।