মানবাধিকার পরিস্থিতি সার্বিকভাবে অস্থির ও উদ্বেগজনক: আসক

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
মানবাধিকার পরিস্থিতি সার্বিকভাবে অস্থির ও উদ্বেগজনক: আসক
ছবি: এআই জেনারেটেড

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সার্বিকভাবে অস্থির ও উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক)। ২০২৫ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আজ বুধবার আসকের এক পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য জানানো হয়।

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার এ বছর ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে মানবাধিকার কমিশন সংস্কার, পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং গুম প্রতিরোধে অধ্যাদেশ জারির মতো ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে। তবে বছর শেষেও এসব কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো সুস্পষ্ট ‘রোডম্যাপ’ জনসমক্ষে না আসায় জনগণের মধ্যে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে আগামী বছরের শুরুতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা আসায় রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।

আসক বলছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে ২০২৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর একটি ‘অন্ধকার অধ্যায়’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই রাতে একদল উগ্রপন্থী গোষ্ঠী দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। হামলার সময় ফায়ার সার্ভিসের কাজেও বাধা দেওয়া হয়, যার ফলে পত্রিকা দুটির ছাপা ও অনলাইন সংস্করণ একদিনের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। একই রাতে হামলা চালানো হয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছায়ানট-এ এবং লাঞ্ছিত করা হয় প্রবীণ সাংবাদিক নুরুল কবিরকে। এই ঘটনাগুলোকে বাক-স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার ওপর চরম আঘাত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

মব জাস্টিসের বিষয়ে আসক জানায়, ২০২৫ সালে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও ‘মব সন্ত্রাস’ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এর সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ দেখা যায় ময়মনসিংহের ভালুকায়, যেখানে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে গার্মেন্টস শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া বাউল সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার মতো বীভৎস ঘটনাও ঘটেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্রও উদ্বেগজনক। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০৯টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এবং অপহরণের সংখ্যা ১ হাজার ১১০টি—যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এরই মাঝে ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের ‘অস্ত্রধারীদের দেখামাত্র ব্রাশফায়ার’ করার নির্দেশ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে উসকে দেবে বলে মনে করছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আসক বলছে, নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করাকে সংবিধানের ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক অধিকার হরণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। এছাড়া ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে দমন-পীড়নে ৫ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু ও বিচারহীনতার অভিযোগ উঠেছে। আসক-এর অনুসন্ধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্যে অসংগতি পাওয়া গেলেও সরকারি তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জনসমক্ষে আসেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর কট্টরপন্থী গোষ্ঠীর উগ্র প্রতিক্রিয়া এবং সমাজে ‘মোরাল পুলিশিং’-এর উত্থান ২০২৫ সালের আরেকটি নেতিবাচক দিক। ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও অনলাইন সহিংসতার পাশাপাশি বাউল ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের ওপর হামলা সমাজে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতারই প্রমাণ দেয়।

সম্পর্কিত