কীভাবে পাবেন নতুন এনআইডি

তাসীন মল্লিক
তাসীন মল্লিক
কীভাবে পাবেন নতুন এনআইডি
ছবি: বাসস

নতুন ভোটার হিসেবে বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়া মানে নিজের পরিচয়, অধিকার ও দায়িত্বের স্বীকৃতি-যা একজন নাগরিকের জীবনে প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ। নির্ভুল তথ্য দিয়ে সহজেই ঘরে বসেই এনআইডির জন্য আবেদন করা যায়।

এনআইডি ব্যাংক হিসাব খোলা থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, মোবাইল সিম নিবন্ধন কিংবা সরকারি-বেসরকারি যেকোনো কাজে পরিচয় প্রমাণে অপরিহার্য। তাই ১৮ বছর পূর্ণ হলে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ভোটার নিবন্ধন করে এনআইডি সংগ্রহ করা আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। কী করে পাওয়া যাবে এনআইডি। কী কী তথ্য লাগবে, চলুন জেনে নিই।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করে। নিচে ধাপে ধাপে দেওয়া হলো নতুন ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বিস্তারিত নির্দেশনা।

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

নতুন ভোটার হতে চাইলে কয়েকটি নির্দিষ্ট নথি জমা দিতে হয়। এই নথিগুলো আবেদন যাচাই-বাছাই এবং পরিচয় নিশ্চিতকরণের জন্য অপরিহার্য। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলো-

  • জন্ম নিবন্ধন সনদ (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনসহ অনলাইন কপি)
  • পিতা-মাতা উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
  • বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদ ও বিবাহ সনদ
  • নাগরিকত্ব সনদ (ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভার মেয়রের স্বাক্ষরযুক্ত)
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি (যদি থাকে)
  • রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার সনদ (সরকারি হাসপাতাল থেকে নেওয়া হলে ভালো)
  • বিদ্যুৎ বিল বা গ্যাস বিলের কপি (ঠিকানা প্রমাণের জন্য)
  • চৌকিদারি ট্যাক্স বা বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধিত রশিদের কপি
  • জমির কাগজ বা বাড়ি ভাড়ার রসিদ (যদি প্রযোজ্য হয়)
  • ‘ভোটার হই নাই’ মর্মে অঙ্গীকারনামা-অর্থাৎ পূর্বে কখনো ভোটার হননি, এই মর্মে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র।

এই কাগজপত্রের সঙ্গে পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাধারণত অফিসে প্রয়োজন হলে নেওয়া হয়) সংযুক্ত করে নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় জমা দিতে হয়।

অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া

বর্তমানে নির্বাচন কমিশন নতুন ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে অনলাইনভিত্তিক করেছে। সহজভাবে আবেদন করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে-

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন: www.services.nidw.gov.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘নতুন ভোটার নিবন্ধন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।

ফরম পূরণ করুন: নিজের নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা, পিতা-মাতা বা স্বামী/স্ত্রীর তথ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

ফরম প্রিন্ট করুন: অনলাইনে পূরণ শেষে ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে। এই ফরমেই পরবর্তী যাচাইয়ের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বাক্ষর ও সিল প্রয়োজন হবে।

অনলাইনে এআইডির জন্য আবেদন করতে www.services.nidw.gov.bd  ওয়েবসাইটে ঢুকুন
অনলাইনে এআইডির জন্য আবেদন করতে www.services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে ঢুকুন

ফরমে সিল ও স্বাক্ষরের নিয়ম

প্রিন্ট করা ফরমে নির্দিষ্ট ঘরগুলো সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে-

  • ক্রমিক ৩৪ ও ৩৫ নম্বরে পিতা-মাতা বা স্বামী/স্ত্রীর আইডি নম্বর ও স্বাক্ষর দিতে হবে।
  • ক্রমিক ৩৭ নম্বরে পরিবারের সদস্যের স্বাক্ষর দিতে হবে।
  • ক্রমিক ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার বা পৌরসভার কাউন্সিলরের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, স্বাক্ষর ও সিল দিতে হবে।

এই স্বাক্ষরগুলো আবেদনকারীর নাগরিকত্ব ও বসবাসের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।

উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দেওয়া

ফরমটি পূরণ ও সিল-স্বাক্ষর শেষ করার পর সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে। অফিস কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ধাপের নির্দেশনা দেবে। সাধারণত অফিসে নির্ধারিত দিনে সাক্ষাৎকার, ছবি তোলা ও বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ, চোখের মণির ছবি) সংগ্রহ করা হয়।

বায়োমেট্রিক ও চূড়ান্ত নিবন্ধন

নির্বাচন অফিস থেকে এসএমএস বা ফোন কলের মাধ্যমে আবেদনকারীকে বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের জন্য ডাকা হয়। নির্দিষ্ট তারিখে অফিসে গিয়ে—

  • আঙুলের ছাপ
  • চোখের স্ক্যান (আইরিস)
  • ছবি তোলা
  • স্বাক্ষর সংগ্রহ

এই চারটি ধাপ সম্পন্ন করা হয়। এরপর তথ্য যাচাই শেষে ভোটার তালিকায় নাম যুক্ত হয় এবং এনআইডি নম্বর তৈরি হয়।

এনআইডি কার্ড সংগ্রহ

তথ্য যাচাই ও প্রক্রিয়া শেষ হলে প্রথমে ডিজিটাল কপি (স্মার্ট কার্ড নম্বরসহ অনলাইন আইডি) পাওয়া যায়। পরবর্তীতে নির্বাচনী অফিস থেকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়। নাগরিকরা তাদের এনআইডি নম্বর ব্যবহার করে অনলাইনে ভোটার তথ্য ও আইডির প্রিন্ট কপি ডাউনলোড করতে পারেন।

যা মনে রাখতে হবে

আবেদনপত্রে কোনো ভুল তথ্য থাকলে তা পরবর্তীতে সংশোধন করা জটিল হতে পারে, তাই ফরম পূরণের সময় তথ্য যাচাই করে দিন।

বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাও অনলাইন মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন, তবে বায়োমেট্রিক দিতে দেশে আসা আবশ্যক।

১৮ বছর পূর্ণ না হলে কেউ ভোটার হতে পারবেন না।

একই ব্যক্তি একাধিক জায়গায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হলে আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

সম্পর্কিত