‘হ্যালো’ এল কী করে

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
‘হ্যালো’ এল কী করে
টেলিফোন

ফোনে কথা বলার সময় ‘হ্যালো’ শব্দটি ছাড়া কথোপকথন শুরু করা প্রায় অসম্ভব। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেছিলেন- এ কথা অজানা নয়। কিন্তু অনেকেই জানেন না, ‘হ্যালো’ শব্দটি টেলিফোনের জন্য জনপ্রিয় করেছিলেন আরেক মহান উদ্ভাবক থমাস আলভা এডিসন, যিনি বৈদ্যুতিক বাল্বেরও আবিষ্কারক।

টেলিফোন আবিষ্কারের সময় একটি বড় প্রশ্ন ছিল-ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মানুষকে কীভাবে বোঝানো যাবে যে কেউ কথা বলতে চায়। তখন কল করার জন্য কোনো রিং বা বেল ব্যবস্থা ছিল না। তাই ব্যবহারকারীদের এমন একটি শব্দ দরকার ছিল যা দূর থেকেও সহজে শোনা যায় এবং মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে।

এই সমস্যার সমাধান করেন থমাস এডিসন। ১৮৭৭ সালের ১৫ আগস্ট তিনি পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গ শহরের এক টেলিগ্রাফ কোম্পানির প্রেসিডেন্ট টি. বি. এ. ডেভিডকে একটি চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, “বন্ধু ডেভিড, আমার মনে হয় আমাদের কোনো কল বেলের দরকার হবে না, কারণ ‘হ্যালো’ শব্দটি ১০ থেকে ২০ ফুট দূর থেকেও শোনা যায়।“

এই চিঠিটা অনেক বছর পর পাওয়া যায় নিউইয়র্কের আমেরিকান টেলিফোন অ্যান্ড টেলিগ্রাফ কোম্পানির আর্কাইভে। অ্যালেন কোয়েনিগসবর্গ নামের এক অধ্যাপক পাঁচ বছরের গবেষণার পর এটি খুঁজে পান। তার গবেষণার মাধ্যমেই প্রথম জানা যায় যে, টেলিফোনে প্রথম ‘হ্যালো’ শব্দটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন এডিসন।

প্রথম দিকে ‘হ্যালো’ শব্দটির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল, ‘কী চাই’। অনেকেই মনে করতেন এই প্রশ্ন দিয়েই কথোপকথন শুরু করা উচিত। কিন্তু সময়ের সাথে ‘হ্যালো’ সহজ উচ্চারণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবের কারণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

১৮৭৮ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটের নিউ হেভেনে প্রথম পাবলিক টেলিফোন এক্সচেঞ্জ চালু হয়, তখন ‘হ্যালো’ শব্দটি ব্যবহার শুরু হয়। এরপর ১৮৮০ সালের দিকে শব্দটি সারা দুনিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে যায়।

তবে টেলিফোনের আবিষ্কারক গ্রাহাম বেল নিজে কিন্তু ‘হ্যাল ‘ শব্দটি ব্যবহার করতেন না। তিনি পছন্দ করতেন ‘আহয়’ শব্দটি, যা তখন নাবিকরা জাহাজে ব্যবহার করতেন যোগাযোগের সময়। তবে এডিসনের ‘হ্যালো’ এত দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে যায় যে বেলের ‘আহয়’ টিকতেই পারেনি।

বর্তমানে ‘হ্যালো’ শুধু ফোনে নয়, সামনাসামনি কথোপকথনেরও সবচেয়ে প্রচলিত শব্দ। এটি ভদ্রতা, সৌজন্য ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এমনকি বিভিন্ন ভাষার মানুষও শব্দটি বোঝে এবং ব্যবহার করে।

প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক না কেন, টেলিফোনে ‘হ্যালো’ বলার প্রথা এখনো অপরিবর্তিত। এটি শুধু একটি শব্দ নয়-মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগের ইতিহাসে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন। শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও ‘হ্যালো’ রয়ে গেছে সেই আগের মতোই আন্তরিক, সহজ ও বিশ্বজনীন অভিবাদন হিসেবে।

সম্পর্কিত