এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বৃহস্পতিবার হংকং চায়নার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ‘হংকং চায়না’ কেন? শুধুমাত্র হংকং নয় কেন? হংকংয়ের সঙ্গে চীনের নাম কেন এক সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে?
এ ম্যাচকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন থেকে একটা নির্দেশনা এসেছে গণমাধ্যমগুলোতে। হংকং নামটি লেখার সঙ্গে সঙ্গে চায়না শব্দটাও জুড়ে দিতে হবে। অর্থাৎ লিখতে হবে হংকং চায়না। সবার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, কেন হংকংকে বলতে হবে হংকং চায়না?
হংকং কোনো স্বতন্ত্র স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র নয়। এটি চীনের অধীনস্থ একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল। যে অঞ্চলের রয়েছে আলাদা সরকার ব্যবস্থা। তবুও দেশটি স্বাধীন নয়।
চীনের দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে অবস্থিত হংকং দ্বীপ ১৩০ বছর ধরে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল। উনিশ শতকে আফিম যুদ্ধে চীনকে হারিয়ে ব্রিটেন হংকং দ্বীপটি দখলে নিয়ে নেয়। ১৮৩৯ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল আফিম যুদ্ধ। উনিশ শতকের শুরুতে ব্রিটেনে চীনের চায়ের বাজার বা চাহিদা তৈরি হয়। চীন ব্রিটেনকে চা বিক্রি করতে রাজি ছিল সোনা বা রুপার মুদ্রার বিনিময়ে। কিন্তু ব্রিটেন চাচ্ছিল ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে সংগৃহীত আফিমের বিনিময়ে চীন থেকে চা সংগ্রহ করতে। চীন রাজি না হওয়ায়, ব্রিটিশরা চোরাই অফিমের বিনিময়ে চীনা চোরাকারবারিদের কাছ থেকে চা সংগ্রহ করত। চীন সরকার ১৮৩৯ সালে ব্রিটিশদের ২০ হাজার বস্তা আফিম ধ্বংস করে দিলে শুরু হয় এই আফিম যুদ্ধ। এটি দীর্ঘ দিন ধরে চলে। সেই যুদ্ধে হেরে চীন হংকং দ্বীপ হারায় ব্রিটেনের কাছে। হংকংকে উপনিবেশে পরিণত করে ব্রিটেন। ১৮৯৮ সালের এক চুক্তির মাধ্যমে চীন হংকংকে ব্রিটেনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দেয়। ১৯৮৪ সালে ব্রিটেন চীনকে হংকং দ্বীপ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এক চুক্তি করে। সে অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই হংকং ফিরে আসে চীনের কাছে।
হস্তান্তরের পর থেকে চীন হংকংয়ের ওপর কর্তৃত্ববাদী আচরণ শুরু করে। ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন ও অবাধ ব্যক্তিস্বাধীনতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও চীন সরকার হংকংবাসীর পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিতে গড়িমসি করে। হংকংয়ের জনগণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচন করতে চেয়েছিল , কিন্তু চীন সরকার চায় তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে হংকং শাসনের জন্য নিযুক্ত করতে। ফলে চীন সরকার তাদের পছন্দের তালিকা থেকে হংকংয়ের নেতা নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। চীন সরকার হংকংয়ের নাগরিকদের বিচারের জন্য চীনে প্রত্যর্পণের অনুমতি দিয়ে একট আইন পাস করলে ২০১৯ সালের জুন মাসে হংকংয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। চীন সরকারের বিরুদ্ধে হংকংয়ের ১০ লাখের বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে সেটি বাতিল করলেও চীন সরকার ২০২০ সালে ‘জাতীয় নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন একটি আইন করে। এ আইন অনুযায়ী, গণমাধ্যম বন্ধ করাসহ নাগরিকদের কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়।

এরপর থেকেই চীনের ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থা’র অধীনে হংকং শাসিত হয়ে আসছে। এই ব্যবস্থায় পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা ছাড়া আর সবকিছুতেই আছে হংকংয়ের স্বায়ত্ত্বশাসন। এমনকি একটি আলাদা পরিচয়ের অধীনে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনেও আছে হংকংয়ের পদচারণা।
চীন সব সময়ই হংকংকে নিজের ভূখণ্ড হিসেবে মনে করে। তারা মনে করে, হংকং কখনোই ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল না। বরং ব্রিটেন হংকং দখল করে সেখানে ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়েছে। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন যখন হংকংকে চীনের কাছে ফিরিয়ে দেয় তখন তাদের ৫০ বছর স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার দিয়েছিল চীন। ২০৪৭ সালে সেই ব্যবস্থার অবসান হবে। হংকং পুরোপুরি হয়ে যাবে চীনের অধীনে। তখন হংকং হবে শুধুই চীনের একটি প্রদেশ।
সেই প্রস্তুতিটা চীন এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে হংকংয়ের নামের সঙ্গে ‘চায়না’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া।