চরচা ডেস্ক

বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে লাখ লাখ পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ২০২৪ সালকে ‘আন্তর্জাতিক উটজাত প্রাণী বর্ষ’ ঘোষণা করেছিল।
এফএও-এর হিসাবে বিশ্বজুড়ে ১৯৬০-এর দশকে উটের সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি ৩০ লাখের মতো। যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন কোটির মতো।
কিন্তু উল্টো ফল দেখা গেছে ভারতে। দেশটিতে উটের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ২০তম পশুসম্পদ শুমারি অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারতে মোট উট ছিল দুই লাখ ৫২ হাজার ৯৫৬টি। ১৯৭৭ সালে ছিল ১১ লাখ উট। ২০১৩ সালেও দেশটিতে প্রায় চার লাখ উট ছিল। অর্থাৎ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উটের সংখ্যা আরও দ্রুত কমেছে।
ভারতে বিভিন্ন জাতের উট রয়েছে। রাজস্থানের থর মরুভূমিতে বিকানেরি, জয়সালমেরি ও মেওয়ারি। গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে কচ্ছি ও খারাই এবং লাদাখের ঠান্ডা মরুভূমিতে দুই-কুঁজযুক্ত বাক্ট্রিয়ান উট।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, ভারতে উট পালনকারীরা ও বিশেষজ্ঞরা প্রাণীটির সংখ্যা কমার পেছনে একাধিক কারণ দেখিয়েছেন—খামারে ট্র্যাক্টর আসা, পণ্য পরিবহনে গাড়ি ও ট্রাকের ব্যবহার এবং চারণভূমির সংকোচন। উটকে গরু বা ছাগলের মতো খামারে খাওয়ানো যায় না। তাদের মুক্তভাবে ছেড়ে দিতে হয়।
তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে ২০১৫ সালে, যখন রাজস্থানের বিজেপি সরকার ‘রাজস্থান উট (জবাই নিষেধাজ্ঞা ও অস্থায়ী স্থানান্তর বা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ) আইন’ করে। এই আইন অনুযায়ী উট পরিবহন, অবৈধ মালিকানা ও জবাই নিষিদ্ধ করা হয়। ওই আইনে উটকে অলংকার দিয়ে সাজানোও ‘আঘাত’ হিসেবে গণ্য হতে পারে। কারণ ‘ক্ষতি’ শব্দটির সংজ্ঞা আইনে অস্পষ্ট।
ওই আইনে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং তিন হাজার থেকে ২০ হাজার রুপি পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। আর এখানে অভিযুক্তকে নিজেই নির্দোষ প্রমাণ করতে হয়।
এই আইনের ফলে উটের বাজার কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যায় বলে আল জাজিরার ভাষ্য। যারা উট বিক্রি করতেন, তারা হঠাৎ করেই ‘চোরাকারবারি’ হয়ে যান। ধরেই নেওয়া হচ্ছে, উট জবাইয়ের কারণেই তার সংখ্যা কমছে। তাই উট রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে উটের সংখ্যা বাড়ে, পালনকারীদের আয় বাড়ে এবং জবাই বন্ধ হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রথম দুটি লক্ষ্যই ব্যর্থ হয়।
আইনটি কার্যকর হওয়ার পর, উটের দাম ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার রুপি থেকে নেমে আসে মাত্র ৫০০ থেকে এক হাজার রুপিতে। ফলে ক্রেতারা হঠাৎ করেই যেন উধাও হয়ে যান। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য হিসেবে আল জাজিরা বলেছে, ক্রেতারা আসলে আগ্রহ হারাননি, বরং এখন তারা ভয় পান।
পুষ্করের উট মেলায় অধিকাংশ ক্রেতাই মুসলিম ছিলেন। বিজেপি শাসিত ভারতে মুসলিমদের প্রতি বৈরিতার আবহে তাদের নিশানা করা সহজ হয়ে উঠেছে। ফলে উট কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেছে।

২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে মুসলিম ও দলিতদের ওপর গোহত্যা ইস্যুতে হামলার ঘটনা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে উট পরিবহন বা কেনাবেচা নিয়ে ক্রেতারা ভয় পাচ্ছেন।
দিল্লির জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির (জেএনইউ) অধ্যাপক আমির আলি আল জাজিরাকে বলেন, “হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পশুপ্রেমের মধ্যে দুটি অদ্ভুত দিক রয়েছে। একদিকে এটি পশুপালনের জটিলতা বোঝে না, অন্যদিকে এই পশুপ্রেমের নামে দলিত ও মুসলিমদের অপমান ও অবমাননা করা হয়।”
আইনটি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত সাবেক কর্মকর্তা নরেন্দ্র মোহন সিংহ আল জাজিরাকে বলেন, “এই আইনটি সমস্যাযুক্ত। আমাদের খুব কম সময় দেওয়া হয়েছিল এবং যাদের ওপর প্রভাব পড়বে, সেই খামারিদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি।”
এদিকে চলতি মাসের শুরুর দিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতের মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় দেশটির উটের সংখ্যার ক্রমাগত হ্রাস রোধে একটি ‘জাতীয় উট টেকসই উদ্যোগ (এনসিএসআই)’ চালুর পরিকল্পনা করছে।
এই এনসিএসআই এফএও-এর সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং গত ২৯ সেপ্টেম্বর জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রচার করা হয়েছে।
ওই খসড়া পত্রে লেখা হয়েছে, “ভারতের উটের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস রোধ এবং এর অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত গুরুত্ব পুনরুদ্ধার করতে একটি বহুমাত্রিক কৌশল অপরিহার্য।”
এনসিএসআই-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ বিভাগের পাশাপাশি পরিবেশ, গ্রামীণ উন্নয়ন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং রাজ্য সরকারগুলোকে একত্রিত করে সমন্বিত পদক্ষেপ নিশ্চিত করা হবে।
ওই নীতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত বিশেষ করে ঐতিহ্যগতভাবে উট পালনকারী রাজ্য যেমন রাজস্থান ও গুজরাটে উটের জনসংখ্যা দ্রুত ও উদ্বেগজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। এক সময় মরুভূমির প্রতীক হিসেবে পরিচিত ও গ্রামীণ জীবিকার প্রতীক এই প্রাণীটি এখন টিকে থাকার সংকটে পড়েছে। এই হ্রাসের মাত্রা ও গতি পালক সম্প্রদায়গুলোর সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভারতের শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক অঞ্চলের পরিবেশগত টেকসইতার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।”
ওই নীতিপত্রে আইনি প্রতিবন্ধকতা সংস্কার এবং নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
মুসলিম ও দলিতদের বিরুদ্ধে সর্বদা ‘জিহাদে’ থাকা বিজেপির শাসনামলের আইন আবার তাদেরই করা এনসিআই উটের সংখ্যার বাড়াতে কতটা ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে।

বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে লাখ লাখ পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ২০২৪ সালকে ‘আন্তর্জাতিক উটজাত প্রাণী বর্ষ’ ঘোষণা করেছিল।
এফএও-এর হিসাবে বিশ্বজুড়ে ১৯৬০-এর দশকে উটের সংখ্যা ছিল প্রায় এক কোটি ৩০ লাখের মতো। যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন কোটির মতো।
কিন্তু উল্টো ফল দেখা গেছে ভারতে। দেশটিতে উটের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ২০তম পশুসম্পদ শুমারি অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারতে মোট উট ছিল দুই লাখ ৫২ হাজার ৯৫৬টি। ১৯৭৭ সালে ছিল ১১ লাখ উট। ২০১৩ সালেও দেশটিতে প্রায় চার লাখ উট ছিল। অর্থাৎ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উটের সংখ্যা আরও দ্রুত কমেছে।
ভারতে বিভিন্ন জাতের উট রয়েছে। রাজস্থানের থর মরুভূমিতে বিকানেরি, জয়সালমেরি ও মেওয়ারি। গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে কচ্ছি ও খারাই এবং লাদাখের ঠান্ডা মরুভূমিতে দুই-কুঁজযুক্ত বাক্ট্রিয়ান উট।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, ভারতে উট পালনকারীরা ও বিশেষজ্ঞরা প্রাণীটির সংখ্যা কমার পেছনে একাধিক কারণ দেখিয়েছেন—খামারে ট্র্যাক্টর আসা, পণ্য পরিবহনে গাড়ি ও ট্রাকের ব্যবহার এবং চারণভূমির সংকোচন। উটকে গরু বা ছাগলের মতো খামারে খাওয়ানো যায় না। তাদের মুক্তভাবে ছেড়ে দিতে হয়।
তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে ২০১৫ সালে, যখন রাজস্থানের বিজেপি সরকার ‘রাজস্থান উট (জবাই নিষেধাজ্ঞা ও অস্থায়ী স্থানান্তর বা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ) আইন’ করে। এই আইন অনুযায়ী উট পরিবহন, অবৈধ মালিকানা ও জবাই নিষিদ্ধ করা হয়। ওই আইনে উটকে অলংকার দিয়ে সাজানোও ‘আঘাত’ হিসেবে গণ্য হতে পারে। কারণ ‘ক্ষতি’ শব্দটির সংজ্ঞা আইনে অস্পষ্ট।
ওই আইনে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং তিন হাজার থেকে ২০ হাজার রুপি পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। আর এখানে অভিযুক্তকে নিজেই নির্দোষ প্রমাণ করতে হয়।
এই আইনের ফলে উটের বাজার কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে যায় বলে আল জাজিরার ভাষ্য। যারা উট বিক্রি করতেন, তারা হঠাৎ করেই ‘চোরাকারবারি’ হয়ে যান। ধরেই নেওয়া হচ্ছে, উট জবাইয়ের কারণেই তার সংখ্যা কমছে। তাই উট রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে উটের সংখ্যা বাড়ে, পালনকারীদের আয় বাড়ে এবং জবাই বন্ধ হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রথম দুটি লক্ষ্যই ব্যর্থ হয়।
আইনটি কার্যকর হওয়ার পর, উটের দাম ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার রুপি থেকে নেমে আসে মাত্র ৫০০ থেকে এক হাজার রুপিতে। ফলে ক্রেতারা হঠাৎ করেই যেন উধাও হয়ে যান। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য হিসেবে আল জাজিরা বলেছে, ক্রেতারা আসলে আগ্রহ হারাননি, বরং এখন তারা ভয় পান।
পুষ্করের উট মেলায় অধিকাংশ ক্রেতাই মুসলিম ছিলেন। বিজেপি শাসিত ভারতে মুসলিমদের প্রতি বৈরিতার আবহে তাদের নিশানা করা সহজ হয়ে উঠেছে। ফলে উট কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেছে।

২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে মুসলিম ও দলিতদের ওপর গোহত্যা ইস্যুতে হামলার ঘটনা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে উট পরিবহন বা কেনাবেচা নিয়ে ক্রেতারা ভয় পাচ্ছেন।
দিল্লির জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির (জেএনইউ) অধ্যাপক আমির আলি আল জাজিরাকে বলেন, “হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পশুপ্রেমের মধ্যে দুটি অদ্ভুত দিক রয়েছে। একদিকে এটি পশুপালনের জটিলতা বোঝে না, অন্যদিকে এই পশুপ্রেমের নামে দলিত ও মুসলিমদের অপমান ও অবমাননা করা হয়।”
আইনটি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত সাবেক কর্মকর্তা নরেন্দ্র মোহন সিংহ আল জাজিরাকে বলেন, “এই আইনটি সমস্যাযুক্ত। আমাদের খুব কম সময় দেওয়া হয়েছিল এবং যাদের ওপর প্রভাব পড়বে, সেই খামারিদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি।”
এদিকে চলতি মাসের শুরুর দিকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতের মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় দেশটির উটের সংখ্যার ক্রমাগত হ্রাস রোধে একটি ‘জাতীয় উট টেকসই উদ্যোগ (এনসিএসআই)’ চালুর পরিকল্পনা করছে।
এই এনসিএসআই এফএও-এর সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং গত ২৯ সেপ্টেম্বর জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রচার করা হয়েছে।
ওই খসড়া পত্রে লেখা হয়েছে, “ভারতের উটের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস রোধ এবং এর অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত গুরুত্ব পুনরুদ্ধার করতে একটি বহুমাত্রিক কৌশল অপরিহার্য।”
এনসিএসআই-এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ বিভাগের পাশাপাশি পরিবেশ, গ্রামীণ উন্নয়ন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং রাজ্য সরকারগুলোকে একত্রিত করে সমন্বিত পদক্ষেপ নিশ্চিত করা হবে।
ওই নীতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত বিশেষ করে ঐতিহ্যগতভাবে উট পালনকারী রাজ্য যেমন রাজস্থান ও গুজরাটে উটের জনসংখ্যা দ্রুত ও উদ্বেগজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। এক সময় মরুভূমির প্রতীক হিসেবে পরিচিত ও গ্রামীণ জীবিকার প্রতীক এই প্রাণীটি এখন টিকে থাকার সংকটে পড়েছে। এই হ্রাসের মাত্রা ও গতি পালক সম্প্রদায়গুলোর সামাজিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ভারতের শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক অঞ্চলের পরিবেশগত টেকসইতার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।”
ওই নীতিপত্রে আইনি প্রতিবন্ধকতা সংস্কার এবং নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
মুসলিম ও দলিতদের বিরুদ্ধে সর্বদা ‘জিহাদে’ থাকা বিজেপির শাসনামলের আইন আবার তাদেরই করা এনসিআই উটের সংখ্যার বাড়াতে কতটা ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় আছে।