বিশ্বে ফুটবল লাভজনক ব্যবসা, বাংলাদেশের ক্লাবগুলো কোথায় দাঁড়িয়ে

বিশ্বে ফুটবল লাভজনক ব্যবসা, বাংলাদেশের ক্লাবগুলো কোথায় দাঁড়িয়ে
ছবি:এআই দিয়ে তৈরি

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ফুটবল থেকে ‘নাই’ হয়ে গেছে দুটি ক্লাব-শেখ জামাল ধানমন্ডি ও শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। একটা সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের ফুটবল থেকে দুটি ক্লাবের হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি অভাবনীয়। কতটা অপেশাদরি ভিত্তির ওপর দেশের ফুটবল দাঁড়িয়ে আছে, শেখ জামাল ধানমন্ডি ও শেখ রাসেলের ঘটনাটি তার নমুনা। বাংলাদেশের ফুটবল ক্লাবগুলো পেশাদারত্বের বদলে রাজনৈতিক প্রভাবের ছায়াকে বেছে নিতেই বেশি আগ্রহী। আর এই ব্যাপারটি দেশের ক্লাব ফুটবলের টেকসই উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।

ফুটবল বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ডলারের পণ্য। বিশ্বের বিখ্যাত ক্লাবগুলো এই পণ্য বিক্রি করে হয়ে উঠেছে হাজার কোটি ডলারের প্রতিষ্ঠান। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবা ইউরোপের অন্য বড় ক্লাবগুলোর প্রায় সবকটির সঙ্গেই বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তুলনা চলে। তাদের অর্থ আয়ের উৎসের অভাব নেই। প্রত্যেকটি ক্লাবই ফুটবল-বাণিজ্যের বড় নাম। আমাদের আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স, বসুন্ধরা কিংস এমনকি রহমতগঞ্জ, আরামবাগের মতো ছোট ক্লাবগুলোও পরিচিত নাম। কিন্তু তারা কখনোই ফুটবলকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেনি, নিজেরা ফুটবল নামের পণ্যটির ব্র্যান্ড হয়ে উঠতে পারেনি।

ছবি: চরচা
ছবি: চরচা

ফুটবল নিয়ে কীভাবে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হয় ক্লাবগুলো? এই বাণিজ্য বহুমাত্রিক। নিজেদের সমর্থক বা ফ্যান বেইজই হচ্ছে ক্লাবের বাজার। সমর্থকদের সঙ্গে নিজেদের সাফল্য–ব্যর্থতার ভাগাভাগিই তাদের বাণিজ্য। ক্লাবগুলো ফুটবলকে নানাভাবে বিপণন করে। নানা বিপণন পরিকল্পনায় তারা সমর্থকদের সম্পৃক্ত করে। কোনো ক্লাবের ইতিহাস–ঐতিহ্য বিপণনের বড় অনুষঙ্গ। নানা প্যাকেজিংয়ের এই ইতিহাস–ঐতিহ্যকে তারা ছড়িয়ে দেয়। বর্তমান যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ক্লাবগুলোর ফুটবল–বাণিজ্যকে আরও শক্তিশালী করেছে। নিজেদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স বা ইউটিউব চ্যানেল অনুসারী সংখ্যা যতো বেশি হবে সেটি ক্লাবকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে নানাভাবে সাহায্য করবে।

এই দেশেও ক্লাব আছে, লিগ আছে। কিন্তু কোনো ক্লাব সংস্কৃতি নেই।
এই দেশেও ক্লাব আছে, লিগ আছে। কিন্তু কোনো ক্লাব সংস্কৃতি নেই।

বিশ্বের বিখ্যাত ক্লাবগুলোর ফুটবল নিয়ে বাণিজ্য বহুমাত্রিক। সারাবিশ্বে এদের লাখো কোটি সমর্থক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোটি কোটি অনুসারী। প্রতিটি ক্লাবই শেয়ার বাজারে শেয়ার বেচাকেনা করে। দল সাফল্যে পেলে শেয়ারের দাম বাড়ে, ব্যর্থ হলে কমে। প্রতিটি ক্লাবেরই নিজস্ব স্টেডিয়াম আছে। সেই স্টেডিয়ামের টিকিট বিক্রির অর্থ তাদের আয়ের একটা অংশ। টেলিভিশন সত্ত্ব থেকে বড় অঙ্কের আয় ক্লাবগুলোর। নিজেদের স্যুভেনির বিক্রির আয় এই ক্লাবগুলোর আকাশছোঁয়া-রেপ্লিকা জার্সি, মাফলারসহ নানা স্যুভেনির। নিজেদের তারকা খেলোয়াড়দের ছবির সত্ত্ব থেকেও আয় আছে। এর পাশাপাশি নিজেদের একাডেমিতে বেড়ে ওঠা খেলোয়াড়দের বেচা–বিক্রিও বড় বাণিজ্য। নিজেদের খেলোয়াড় অন্য ক্লাবের কাছে বিক্রি থেকেও বিপুল আয় তাদের।

কীভাবে চলে বাংলাদেশের ক্লাবগুলো

বাংলাদেশে ছবিটা পুরোপুরিই উল্টো। এই দেশেও ফুটবল বিপুল জনপ্রিয় খেলা। এই দেশেও ক্লাব আছে, লিগ আছে। কিন্তু কোনো ক্লাব সংস্কৃতি নেই। থাকবে কীভাবে? ক্লাবগুলো সংস্কৃতি তৈরির কোনো চেষ্টাই কখনো করেনি। বাণিজ্য, বিপণন-এসব অনেক দূরের ব্যাপার। বাংলাদেশের ক্লাবগুলো ফুটবল–বাণিজ্যের বাইরের দুনিয়ার বাসিন্দা। বাংলাদেশে আবাহনী, মোহামেডানের মতো দর্শকনন্দিত ক্লাব থাকলেও এই ক্লাবগুলোর কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যই নেই। এমনকি এখনো পর্যন্ত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোনো উদ্যোগও তাদের নেই। প্রশ্ন ওঠে বাংলাদেশের ক্লাবগুলো ফুটবল–বাণিজ্য কি বোঝে না, নাকি ইচ্ছে করেই করে না! যদি তাদের ব্যবসা করার ইচ্ছেটাই না থাকে, সেটি কেন?

প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, প্রতি বছর ফুটবল দল গঠন করে লাভ কি এই ক্লাবগুলোর? ক্লাব পরিচালনার অর্থও তারা কীভাবে পায়। বাংলাদেশেরর ক্লাবগুলোর বেশিরভাগই পরিচালিত হয় অনুদানের অর্থে। একটি মৌসুমে ফুটবল দল গঠন করতে সব মিলিয়ে ১০/১২ কোটি টাকার দরকার হয় কমপক্ষে। এই টাকাটা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা হয়। ক্লাবের পরিচালনা–পর্ষদ আছে, তার সদস্যরা অনুদান দেন। বিভিন্ন ব্যবসায়িক গোষ্ঠী চাঁদা দেন নানা অঙ্কের। সেই অর্থ দিয়েই গঠিত হয় ফুটবল বা অন্য খেলার দল। কিন্তু যে টাকাটা বিনিয়োগ হচ্ছে, সেটি তোলার কোনো পরিকল্পনা কখনোই দেখা যায় না। পরের মৌসুমে আবারও অর্থ সংগ্রহে বের হন ক্লাবের কর্তারা। এভাবেই চলছে। ব্যবসায়ীরাও এভাবে দিনের পর দিন টাকা ঢালতে গিয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। যে বিনিয়োগের কোনো উদ্দেশ্য নেই, যে বিনিয়োগ উঠে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই, সেই বিনিয়োগ–ই বা ব্যবসায়ীরা কেন করবেন। অনুদানের অর্থ ব্যয় করা নিয়েও আছে নানা অভিযোগ।

বসুন্ধরা কিংস এরিনা
বসুন্ধরা কিংস এরিনা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী চরচাকে ঠিক এ অভিযোগটিই করেছেন, “আমি একটি ক্লাবকে টাকা দিতাম। ফুটবল ভালোবাসি বলেই দিয়েছি। অর্থের পরিমাণ কম নয়। কিন্তু আমি দেখেছি, সেই টাকা ঠিকমতো ব্যয় হয় না। অনেক অস্বচ্ছতা। আমি অবশ্যই চাইব যে টাকা দিয়েছি, সেটি উঠে আসুক। সারা দুনিয়াতে সেভাবেই ক্লাবগুলো পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে সময় এসেছে এটি নিয়ে ভাবার। ফুটবল ক্লাবগুলো যেন আর্থিক ভিত্তি শক্ত করতে পারে, সে ব্যাপারে তাদের বাধ্য করা।”

বাফুফের ভূমিকা কী

ক্লাব কর্মকর্তারা নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাবে প্রায়ই বাফুফের দিকে আঙুল তোলেন। তাদের অভিযোগ, বাফুফে কখনোই ক্লাবগুলোর জন্য কোনো আর্থিক পথরেখা দিতে পারেনি। ফুটবল লিগে স্পনসর থাকে, কিন্তু সেই টাকার ভাগ কখনোই ক্লাবগুলো পায় না। একটা নির্দিষ্ট বাণিজ্যিক ও আর্থিক পথরেখা না থাকাতেই নাকি ক্লাবগুলো আরও পেশাদারি হচ্ছে না। বাফুফের বিপণন কমিটির প্রধান ও সহ সভাপতি ফাহাদ করিমের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যানই করেছেন, “দুনিয়ার কোনো ফুটবল ফেডারেশন ক্লাবগুলোকে বলে দেয় না, তারা কীভাবে বাণিজ্য করবে। কীভাবে অর্থ আয় করবে।”

এ ব্যাপারে ক্লাবগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মত তার, “আমাদের ক্লাবগুলোকে এক হয়ে একটা কনসোর্টিয়াম দাঁড় করাতে হবে। লিগের স্টেকহোল্ডার তারাই। তাদেরই পেশাদারি হতে হবে। আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স, বসুন্ধরা-প্রতিটি ক্লাবের নামই মানুষ জানে। ফুটবল বিপণনটা কীভাবে হবে, তাদের বসে ঠিক করতে হবে। লিগের মালিকানাটা নিতে হবে তাদেরই।”

বাফুফে ভবন
বাফুফে ভবন

আর্থিক পথরেখা নিয়ে তার কথা, “বাফুফে লিগ আয়োজন করছে। মাঠের ব্যবস্থা করছে। স্পনসর নিয়ে আসছে। আমাদের স্পনসরের অর্থের পরিমাণ এমন নয় যে সেই টাকার অংশ ক্লাবগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া যায়। আমাদের বসুন্ধরা কিংস ছাড়া কারওরই নিজেদের ভ্যেনু নেই, যেখানে লিগের ম্যাচ হতে পারে। আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্সের মতো ক্লাবগুলোর তো এতদিনে এসব নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। তারা তো নিজেরাই নিজেদের ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করাতে পারছেনা। ব্র্যান্ড দাঁড় করালে ব্যবসাও হবে।”

ফাহাদ করিম অবশ্য স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ ফুটবল লিগকে সুন্দর প্যাকেজে উপস্থান করার একটা দায় বাফুফের আছে, “হ্যাঁ, মানছি অন্তত প্যাকেজিংটা আমরা ঠিক করতে পারি। এ লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। আপনারা দেখছেন, এই মৌসুমে সম্প্রচারটা ভালো করার চেষ্টা করছি। মাঠের মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে আমরা কয়েকটা স্টেডিয়ামও চেয়েছি। স্টেডিয়ামগুলো ফুটবলের অধীনে চলে আসলে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে বলে মনে করি।”

বাফুফে সহ সভাপতির সঙ্গে মতদ্বৈততা আছে ফুটবল ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষক আহমেদ শায়েকের, “ক্লাবগুলোর জন্য একটা নির্দিষ্ট আয়ের পথ তৈরি করে দেওয়া একটা ফেডারেশনের দায়িত্ব। লিগের স্পনসরশিপ এবং সম্প্রচার সত্ত্বের একটা নির্দিষ্ট অংশ ক্লাবগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেয় সব সফল ফেডারেশন। এতে করে প্রতিটা ক্লাবের হাতেই নির্দিষ্ট অংকের অর্থ থাকতে পারে, যেটা তাদের দলগঠনে কাজে দেবে। এরপর যদি ক্লাব আরও উচ্চবিলাসী হয় তবে তারা নিজেরা জার্সি স্পনসর, ফ্যান দের নিয়ে কার্যক্রম করে আরও অর্থ উপায় করতে পারে। লিগটাকে পণ্য হিসাবে ফেডারেশন তখনই বিক্রি করতে পারে স্পনসর এবং সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের কাছে যখন সেই লিগ এ দল থাকে, এবং দলে ভালো প্লেয়ার থাকে। তাই বিক্রিত পণ্যের মূল্যটাও দলগুলোরই প্রাপ্য, ফেডারেশনের নয়।”

উদ্যোগ নেই ক্লাবগুলোরও

অথচ একসময় আবাহনী, মোহামেডান, এমনকি ঘরোয়া ফুটবলের তৃতীয় শক্তি ব্রাদার্সের জন্যও গলা ফাটানো দর্শক–সমর্থক ছিল বাংলাদেশে। আবাহনী–মোহামেডান ম্যাচের দিন পাড়া মহল্লায় উড়ত দুই ক্লাবের পতাকা। উপচে পড়ত গ্যালারি। খেলা শেষে জয়োৎসব যেমন হতো, প্রিয় দলের হার মানতে না পেরে দাঙ্গা–হাঙ্গামাও কম হতো না। নিতান্ত আবেগতাড়িত ছিল তখনকার সেই ফুটবল প্রেম। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সেটা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশের ফুটবল। ধরে রাখার কোনো যুগোপযোগী উদ্যোগও কখনো নেওয়া হয়নি।

একটা ক্লাব লাভবান হতে পারে নিজস্ব ভেন্যু বা মাঠ দিয়ে। লিগে হোম ম্যাচের টিকিট বিক্রি আয়ের বড় একটা উৎস।
একটা ক্লাব লাভবান হতে পারে নিজস্ব ভেন্যু বা মাঠ দিয়ে। লিগে হোম ম্যাচের টিকিট বিক্রি আয়ের বড় একটা উৎস।

বাংলাদেশের ফুটবলের বাস্তবতাটা তুলে ধরলেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। বলেন, “ব্যবসা তখনই হবে, যখন বাজার গড়ে উঠবে। আমাদের এখানে এখনো সেই বাজারটাই গড়ে ওঠেনি। তবে ক্লাবগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। মাঠে খেলা যত বেশি থাকবে, সেই খেলা নিয়ে সাধারণ মানুষ যতো আলোচনা করবে, আগ্রহী হবে; বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ততই বাড়তে থাকবে।”

একটা ক্লাব লাভবান হতে পারে নিজস্ব ভেন্যু বা মাঠ দিয়ে। লিগে হোম ম্যাচের টিকিট বিক্রি আয়ের বড় একটা উৎস। বাজারে ছাড়া যেতে পারে শেয়ারও। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে মার্চেন্ডাইজিং থেকে আয়। অতীতে কিছু ক্লাব এরকম বাণিজ্যিক উদ্যোগ নিলেও তা ধরে রাখতে পারেনি। ১৯৮৯ সালে আবাহনী প্রথম নিজেদের লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয়। বাজারে ছাড়া হয়েছিল শেয়ার। কিন্তু সেটি সেভাবে সফল হয়নি। মোহামেডান ও ব্রাদার্সও লিমিটেড কোম্পানি হয়েছে এ দশকের শুরুর দিকে। কিন্তু কার্যক্রমে এর কোনো প্রভাব নেই। প্রিমিয়ার লিগে ক্লাবগুলোর আলাদা ‘হোম ভেন্যু’ থাকলেও সেটি আসলে নামমাত্রই। যেভাবে আয়ের উৎস হয়ে ওঠার কথা, সেভাবে হয়নি। ‘হোম ভেন্যুর’ গেটমানি বা টিকিট বিক্রি থেকে তেমন কোনো অর্থ রোজগার নেই বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর।

ছবি: চরচা
ছবি: চরচা

বাংলাদেশের ফুটবলে নিজস্ব ভ্যেনু আছে শুধু বসুন্ধরা কিংসের। ধানমন্ডিতে আবাহনীর মালিকানায় বিশাল মাঠ থাকলেও সেটি তাদের হোম ভ্যেনু নয়। মোহামেডানের নিজেদের অনুশীলনের মাঠই নেই। বছরের পর বছর ধরে তারা বিভিন্ন মাঠে অনুশীলন করে বেড়ায় যাযাবরের মতো। ৯০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী একটি ক্লাব নিজেদের স্টেডিয়াম দূরে থাক, মাঠই বানাতে পারেনি, এটা বেশ অদ্ভুত ব্যাপারই। বাফুফে প্রিমিয়ার লিগের আগে জেলা স্টেডিয়ামগুলো ক্লাবের ‘হোম ভ্যেনু’ হিসেবে ব্যবহার করলেও তাতে দর্শক টানার কোনো উদ্যোগই নেয় না ক্লাবগুলো।

একটা সময় ‘গেট মানি’ ছিল ক্লাবগুলোর আয়ের বড় উৎস। আশি–নব্বইয়ের দশকে লিগে পুরো মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হতো। সেই টাকার একটা অংশ পেত ক্লাবগুলো। সেই গেট মানি ছিল বাফুফেরও আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের ফুটবলে দর্শক–খরা এই ব্যাপারটিই নষ্ট করে দিয়েছে। মাঝখানে খেলা অনিয়মিত হয়ে যাওয়াই দর্শকের মাঠ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার বড় একটা কারণ।

ক্লাবের সঙ্গে সংযোগ নেই সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের

বাংলাদেশ ফুটবল ফুটবল লিগে ১০টি ক্লাব খেলে। ঢাকার বাইরের কোনো ক্লাব নেই। কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে বাংলাদেশ ফুটবল লিগকে ঢাকা ফুটবল লিগও বলেন। দেশের ফুটবল ঢাকা কেন্দ্রিক হওয়ার কারণে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য আরও বেশি ব্যাহত হচ্ছে বলেই মনে করেন অনেকে। তাদের মতে, প্রিমিয়ার লিগে যদি ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনার ক্লাবগুলো খেলত, তাহলে এই লিগের আবেদন আরও বেশি জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া যেত। ঢাকার বাইরের ব্যবসায়ীরাও উৎসাহিত হতেন, কারণ তাতে করে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনার ফুটবলপ্রেমীরা তাদের নিজেদের ক্লাবের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুঁজে পেতেন। বাংলাদেশের ফুটবলে ক্লাবগুলোর সঙ্গে মানুষের সংযোগ সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আবাহনী ও মোহামেডানের সঙ্গে কিছু সম্পৃক্ততা এক সময় থাকলেও এই প্রজন্মের মধ্যে সেটি সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ফুটবলপ্রেমীরা যদি ক্লাবগুলোকে ‘নিজেদের ক্লাব’ হিসেবে মনে না করেন, তাহলে ফুটবল বাণিজ্যের ডালপালা মেলা খুবই কঠিন।

সম্পর্কিত