সুদীপ্ত সালাম

‘আগুনের পরশমণি’ উপন্যাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে অবরুদ্ধ ঢাকার গল্প বলেছেন হুমায়ূন আহমেদ। একাত্তরের দিনগুলোতে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে উপন্যাসটি এগিয়ে যায়। অনেকের মতে আশির দশকের অন্যতম সেরা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস এটি। আচ্ছা, জানেন তো, উপন্যাসটি কাকে উৎসর্গ করা হয়েছিল? কর্নেল তাহেরসহ আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মা—বেগম আশরাফুন্নিসাকে।
যা হোক। নিজের এই উপন্যাস অবলম্বনেই হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯৪ সালে তৈরি করলেন প্রথম চলচ্চিত্র—‘আগুনের পরশমণি’। শুনতে সহজ মনে হলেও—সিনেমা বানানোটা একদমই সহজ ছিল না। এতটাই কঠিন ছিল যে, হুমায়ূন আহমেদ ‘আগুনের পরশমণি’র চিত্রনাট্যে আগুন ধরিয়ে—সে আগুনে চা বানিয়ে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।
সিনেমাটি করতে সেসময় ৪০ লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। হুমায়ূন আহমেদের কাছে ছিল মাত্র ২ লাখ টাকা। ছবি বানাতে এত টাকা কোথায় পাবেন? অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর—যিনি সিনেমাটিতে বদিউল আলম চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তিনি এসে বললেন, প্রযোজক পাওয়া কঠিন হবে না। তারা দুজন টাকার জন্য অনেকের কাছে যান, হুমায়ূন আহমেদ সিনেমা বানাতে যাচ্ছেন শুনে সবাই বাহবা দেয়, শুভকামনা জানায়; কিন্তু টাকা দেয় না। কোনো আশা না দেখে এক রাতে লেখক সিদ্ধান্ত নেন, সকালে তিনি চিত্রনাট্য পুড়িয়ে ফেলবেন এবং সেই আগুনে চা বানিয়ে খাবেন। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে সিদ্ধান্ত বদলান, সরকারি অনুদানের আশায় চিত্রনাট্য নিয়ে তখনকার তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদার সঙ্গে দেখা করতে যান। নাজমুল হুদা হুমায়ূন আহমেদের সব কথা শুনে বললেন, ‘আপনার আগুনের পরশমণি উপন্যাসটা আমার পড়া নেই। উপন্যাসটি পাঠিয়ে দেবেন। দেখি কিছু করা যায় কিনা।’
তথ্যমন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হতে পারেননি হুমায়ূন আহমেদ। তিনি নাজমুল হুদার কাছে উপন্যাসটি পাঠিয়ে দেন। তারপর অনেকদিন আর কোনো খবর নেই। সরকারি অনুদানের আশা বাদ দিয়ে তিনি আবার অর্থ সংগ্রহের কাজে নেমে পড়েন। এবার যান একটি বড় কোম্পানির মালিকের কাছে। সেই শিল্পপতি নিজেও লেখালেখি করেন। তিনি হুমায়ূন আহমেদকে প্রস্তাব করলেন, টাকা তিনি দেবেন, শর্ত হলো, সিনেমা হতে হবে তার গল্প অবলম্বনে!
এবার আশাহত হয়ে নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে সিনেমা বানানোর সিদ্ধান্ত নেন লেখক। শেষমেশ ফ্ল্যাট বিক্রি করেছিলেন কিনা, তা জানা যায়নি। কিন্তু শ্যুটিং শুরু হলো। শ্যুটিং শুরুর পরপরই জানা গেল, আগুনের পরশমণি সরকারের ২৫ লাখ টাকার অনুদান পেয়েছে! শেষে তা দিয়ে সিনেমাটি শেষ করেন হুমায়ূন আহমেদ।
এই সিনেমা করতে গিয়ে নানা বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। ব্যক্তিগত জীবনেও ঝামেলা কম হয়নি। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, তার স্ত্রী গুলতেকিন চাননি তিনি চলচ্চিত্র তৈরিতে নামেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াও হয়। সিনেমার মহরতেও গুলতেকিন যাননি। ‘আগুনের পরশমণি’ তৈরি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ একটি আস্ত বই লিখেছেন। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত বইটির শিরোনাম ‘ছবি বানানোর গল্প’। পড়তে পারেন।
যে সিনেমা নিয়ে এত সংগ্রাম, সেটিই ১৯৯৪ সালে শ্রেষ্ঠ কাহিনিসহ মোট ৮টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। আর ওই যে তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদা—যার একক চেষ্টায় অনুদান পেয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, তার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন ১০০ গোলাপের একটি তোড়া দিয়ে।

‘আগুনের পরশমণি’ উপন্যাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে অবরুদ্ধ ঢাকার গল্প বলেছেন হুমায়ূন আহমেদ। একাত্তরের দিনগুলোতে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে উপন্যাসটি এগিয়ে যায়। অনেকের মতে আশির দশকের অন্যতম সেরা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস এটি। আচ্ছা, জানেন তো, উপন্যাসটি কাকে উৎসর্গ করা হয়েছিল? কর্নেল তাহেরসহ আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মা—বেগম আশরাফুন্নিসাকে।
যা হোক। নিজের এই উপন্যাস অবলম্বনেই হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯৪ সালে তৈরি করলেন প্রথম চলচ্চিত্র—‘আগুনের পরশমণি’। শুনতে সহজ মনে হলেও—সিনেমা বানানোটা একদমই সহজ ছিল না। এতটাই কঠিন ছিল যে, হুমায়ূন আহমেদ ‘আগুনের পরশমণি’র চিত্রনাট্যে আগুন ধরিয়ে—সে আগুনে চা বানিয়ে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।
সিনেমাটি করতে সেসময় ৪০ লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। হুমায়ূন আহমেদের কাছে ছিল মাত্র ২ লাখ টাকা। ছবি বানাতে এত টাকা কোথায় পাবেন? অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর—যিনি সিনেমাটিতে বদিউল আলম চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তিনি এসে বললেন, প্রযোজক পাওয়া কঠিন হবে না। তারা দুজন টাকার জন্য অনেকের কাছে যান, হুমায়ূন আহমেদ সিনেমা বানাতে যাচ্ছেন শুনে সবাই বাহবা দেয়, শুভকামনা জানায়; কিন্তু টাকা দেয় না। কোনো আশা না দেখে এক রাতে লেখক সিদ্ধান্ত নেন, সকালে তিনি চিত্রনাট্য পুড়িয়ে ফেলবেন এবং সেই আগুনে চা বানিয়ে খাবেন। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে সিদ্ধান্ত বদলান, সরকারি অনুদানের আশায় চিত্রনাট্য নিয়ে তখনকার তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদার সঙ্গে দেখা করতে যান। নাজমুল হুদা হুমায়ূন আহমেদের সব কথা শুনে বললেন, ‘আপনার আগুনের পরশমণি উপন্যাসটা আমার পড়া নেই। উপন্যাসটি পাঠিয়ে দেবেন। দেখি কিছু করা যায় কিনা।’
তথ্যমন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হতে পারেননি হুমায়ূন আহমেদ। তিনি নাজমুল হুদার কাছে উপন্যাসটি পাঠিয়ে দেন। তারপর অনেকদিন আর কোনো খবর নেই। সরকারি অনুদানের আশা বাদ দিয়ে তিনি আবার অর্থ সংগ্রহের কাজে নেমে পড়েন। এবার যান একটি বড় কোম্পানির মালিকের কাছে। সেই শিল্পপতি নিজেও লেখালেখি করেন। তিনি হুমায়ূন আহমেদকে প্রস্তাব করলেন, টাকা তিনি দেবেন, শর্ত হলো, সিনেমা হতে হবে তার গল্প অবলম্বনে!
এবার আশাহত হয়ে নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে সিনেমা বানানোর সিদ্ধান্ত নেন লেখক। শেষমেশ ফ্ল্যাট বিক্রি করেছিলেন কিনা, তা জানা যায়নি। কিন্তু শ্যুটিং শুরু হলো। শ্যুটিং শুরুর পরপরই জানা গেল, আগুনের পরশমণি সরকারের ২৫ লাখ টাকার অনুদান পেয়েছে! শেষে তা দিয়ে সিনেমাটি শেষ করেন হুমায়ূন আহমেদ।
এই সিনেমা করতে গিয়ে নানা বাধাবিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। ব্যক্তিগত জীবনেও ঝামেলা কম হয়নি। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, তার স্ত্রী গুলতেকিন চাননি তিনি চলচ্চিত্র তৈরিতে নামেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াও হয়। সিনেমার মহরতেও গুলতেকিন যাননি। ‘আগুনের পরশমণি’ তৈরি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ একটি আস্ত বই লিখেছেন। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত বইটির শিরোনাম ‘ছবি বানানোর গল্প’। পড়তে পারেন।
যে সিনেমা নিয়ে এত সংগ্রাম, সেটিই ১৯৯৪ সালে শ্রেষ্ঠ কাহিনিসহ মোট ৮টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। আর ওই যে তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদা—যার একক চেষ্টায় অনুদান পেয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, তার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন ১০০ গোলাপের একটি তোড়া দিয়ে।