চরচা ডেস্ক

বার্ড ফ্লু (H5N1) যে এক দিন পাখি থেকে মানুষের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে ছড়িয়ে পড়ে বৈশ্বিক সংকট তৈরি করতে পারে সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে সতর্ক করছিলেন।
বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ফ্লু (এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা) দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে গেড়ে বসেছে। গত নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে চীনে প্রথম দেখা দেওয়ার পর থেকে ভাইরাসটি মাঝে মধ্যেই মানুষকে সংক্রমিত করেছে।
২০০৩ থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২৫টি দেশে ৯৯০টি মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট করেছে। যার মধ্যে ৪৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে (৪৮% মৃত্যুহার)।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, শুধু আমেরিকাতেই এই ভাইরাস ১৮ কোটি পাখিকে আক্রমণ করেছে। ১৮টি অঙ্গরাজ্যে এক হাজারের বেশি ফার্মে ছড়িয়েছে। এতে অন্তত ৭০ জনকে সংক্রমিত করেছে যাদের বেশিরভাগই খামারকর্মী।
ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একজনের মৃত্যুও হয়েছে। যে ভাইরাসটি সাধারণত পাখিকে সংক্রমিত করে তাতে আক্রান্ত হয়ে গত জানুয়ারিতে ভারতের নাগপুরে একটি বন্যপ্রাণী উদ্ধারকেন্দ্রে তিনটি বাঘ এবং একটি চিতা মারা গেছে।
মানুষের মধ্যে এর উপসর্গগুলো তীব্র ফ্লুর মতো। তীব্র জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা এবং কখনো, কখনো চোখে প্রদাহ। কিছু মানুষের আবার কোনো উপসর্গই থাকে না। মানুষের জন্য ঝুঁকি এখনো কম, তবে বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের পর্যবেক্ষণের বিষয়, ভাইরাসটিতে কোনো পরিবর্তন ঘটছে কি না, যা সহজে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
এই উদ্বেগ থেকেই ভারতের অশোক ইউনিভার্সিটির গবেষক ফিলিপ চেরিয়ান এবং গৌতম মেনন একটি নতুন ‘পিয়ার-রিভিউড মডেল’ তৈরি করেছেন। এটি সিমুলেট (বাস্তব পরিস্থির অনুকরণ) করে দেখায়- কীভাবে মানুষের মধ্যে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। তারা দেখেছেন, ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আগেই কোন প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো তা থামাতে পারে।
সহজভাবে বললে, বিএমসি পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এই মডেল বাস্তব ডেটা ও কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে দেখায় কীভাবে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ছড়াতে পারে।
অধ্যাপক গৌতম মেনন বিবিসিকে বলেন: “মানুষের জন্য H5N1 মহামারির হুমকি বাস্তব সত্য। তবে আমরা আরও নজরদারি এবং তৎপরতার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধের আশা করতে পারি।”
গবেষকরা বলছে, একটি বার্ড ফ্লু মহামারি নিঃশব্দে শুরু হবে। একটি সংক্রমিত পাখি সম্ভবত একজন কৃষক, বাজারকর্মী বা মুরগির খামারের কর্মীকে আক্রান্ত করবে।
গবেষকরা বলছেন, বিপদ প্রথম সংক্রমণে নয়, বরং তার পরে যা ঘটবে তার মধ্যে-একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ক্রমাগত সংক্রমণ।
গবেষকরা ‘ভারতসিম’ নামের একটি ওপেন-সোর্স সিমুলেশন প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নিয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম মূলত কোভিড-১৯ মডেলিংয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এটি অন্যান্য রোগ নিয়ে গবেষণার জন্যও যথেষ্ট কার্যকর।
গবেষকদের মতে, নীতিপ্রণেতাদের জন্য শিক্ষণীয় হলো, প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কতটা দ্রুত হতে পারে।
গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, একবার আক্রান্তের সংখ্যা ২ থেকে দশে পৌঁছালে রোগটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সংস্পর্শের বাইরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
‘প্রাথমিক সংস্পর্শ’ হলো যারা সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি ছিলেন। যেমন পরিবারের সদস্য, সেবাদাতা বা ঘনিষ্ঠ সহকর্মী।
‘মাধ্যমিক সংস্পর্শ’ হলো যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেননি কিন্তু প্রাথমিক সংস্পর্শের কাছাকাছি ছিলেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যদি মাত্র দুটি সংক্রমণের ঘটনা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক সংস্পর্শে আসা পরিবারগুলোকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়, তাহলে প্রাদুর্ভাব প্রায় নিশ্চিতভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
কিন্তু যখন ১০টি সংক্রমণের শনাক্ত হয়, ততক্ষণে সংক্রমণ ইতিমধ্যেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এর গতিপথ এমন হয়ে দাঁড়ায় যা কোনো প্রাথমিক পদক্ষেপ না নেওয়ার পরিস্থিতির চেয়ে খুব একটা আলাদা করা যায় না।

বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে গবেষণাকে যুক্ত রাখতে গবেষকরা তামিলনাড়ুর নামাক্কল জেলার একটি গ্রামের মডেল বেছে নেন। যা ভারতের পোলট্রি উৎপাদনের কেন্দ্র।
নামাক্কলে দেড় হাজারের বেশি পোলট্রি খামার এবং প্রায় সাত কোটি মুরগি রয়েছে। এখানে দৈনিক ছয় কোটি ডিম উৎপাদন হয়।
গবেষকরা সিনথেটিক কমিউনিটির মাধ্যমে (সিন্থেটিক কমিউনিটি হলো একটি কৃত্রিম কম্পিউটারচালিত জনসংখ্যা যা আসল জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য এবং আচরণ অনুকরণ করে) ৯ হাজার ৬৬৭ জন বাসিন্দার একটি গ্রাম তৈরি করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল ঘরবাড়ি, কাজের জায়গা, বাজার। বাস্তব এক্সপোজার অনুকরণ করতে সেখানে বার্ড ফ্লু সংক্রমিত পাখি ছাড়া হয়েছিল।
ওই সিমুলেশনে, ভাইরাসটি একটি কাজের জায়গা থেকে শুরু হয়। একটি মাঝারি আকারের খামার বা কাঁচাবাজারে প্রথমে সেখানকার লোকদের (প্রাথমিক সংস্পর্শ) মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এটি অন্যদের (মাধ্যমিক সংস্পর্শ) মধ্যে ছড়িয়ে যায়; যাদের সঙ্গে তারা বাড়ি, স্কুল এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে মেলামেশা করে।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক সংস্পর্শ দেখে গবেষকরা সংক্রমণের মূল সূচকগুলো অনুমান করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বেসিক রিপ্রোডাক্টিভ নম্বর R0 (একজন সংক্রমিত ব্যক্তি গড়ে কতজন মানুষকে সংক্রমণ করে তার পরিমাপ করে)। বাস্তবে যেহেতু মহামারি নেই, তাই গবেষকরা এর পরিবর্তে সম্ভাব্য সংক্রমণ গতির একটি মডেল তৈরি করেছেন।
পাখি নিধন, ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন এবং লক্ষ্যভিত্তিক টিকা দিলে কী হয়— সেগুলো গবেষকরা পরীক্ষা করেছেন।
এর ফলাফল ছিল খুবই স্পষ্ট। ভাইরাসটি কোনো মানুষকে সংক্রমিত করার আগেই যদি পাখি নিধন করা হয় কেবল তখনই এটি কাজ করে।
গবেষকরা দেখেছেন, সংক্রমণ একবার ছড়িয়ে পড়লে সময়ই হয়ে ওঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সংক্রমিত ব্যক্তিদের আলাদা করা এবং পরিবারগুলোকে কোয়ারেন্টিনে রাখা ভাইরাসকে দ্বিতীয় পর্যায়ে থামিয়ে দিতে পারে। কিন্তু একবার তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ দেখা দিলে (যেমন বন্ধুর বন্ধু, বা পরিচিতের পরিচিত ব্যক্তি) প্রাদুর্ভাবটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যদি না কর্তৃপক্ষ লকডাউনসহ আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়।
লক্ষ্যভিত্তিক টিকাদান ভাইরাসের টিকে থাকার সীমা বাড়াতে সাহায্য করে। যদিও পরিবারের সদস্যদের তাৎক্ষণিক ঝুঁকি কমাতে এটি খুব অল্পই ভূমিকা রাখে।

বার্ড ফ্লু (H5N1) যে এক দিন পাখি থেকে মানুষের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে ছড়িয়ে পড়ে বৈশ্বিক সংকট তৈরি করতে পারে সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে সতর্ক করছিলেন।
বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ফ্লু (এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা) দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে গেড়ে বসেছে। গত নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে চীনে প্রথম দেখা দেওয়ার পর থেকে ভাইরাসটি মাঝে মধ্যেই মানুষকে সংক্রমিত করেছে।
২০০৩ থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২৫টি দেশে ৯৯০টি মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট করেছে। যার মধ্যে ৪৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে (৪৮% মৃত্যুহার)।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, শুধু আমেরিকাতেই এই ভাইরাস ১৮ কোটি পাখিকে আক্রমণ করেছে। ১৮টি অঙ্গরাজ্যে এক হাজারের বেশি ফার্মে ছড়িয়েছে। এতে অন্তত ৭০ জনকে সংক্রমিত করেছে যাদের বেশিরভাগই খামারকর্মী।
ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একজনের মৃত্যুও হয়েছে। যে ভাইরাসটি সাধারণত পাখিকে সংক্রমিত করে তাতে আক্রান্ত হয়ে গত জানুয়ারিতে ভারতের নাগপুরে একটি বন্যপ্রাণী উদ্ধারকেন্দ্রে তিনটি বাঘ এবং একটি চিতা মারা গেছে।
মানুষের মধ্যে এর উপসর্গগুলো তীব্র ফ্লুর মতো। তীব্র জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, শরীর ব্যথা এবং কখনো, কখনো চোখে প্রদাহ। কিছু মানুষের আবার কোনো উপসর্গই থাকে না। মানুষের জন্য ঝুঁকি এখনো কম, তবে বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের পর্যবেক্ষণের বিষয়, ভাইরাসটিতে কোনো পরিবর্তন ঘটছে কি না, যা সহজে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
এই উদ্বেগ থেকেই ভারতের অশোক ইউনিভার্সিটির গবেষক ফিলিপ চেরিয়ান এবং গৌতম মেনন একটি নতুন ‘পিয়ার-রিভিউড মডেল’ তৈরি করেছেন। এটি সিমুলেট (বাস্তব পরিস্থির অনুকরণ) করে দেখায়- কীভাবে মানুষের মধ্যে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। তারা দেখেছেন, ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আগেই কোন প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো তা থামাতে পারে।
সহজভাবে বললে, বিএমসি পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত এই মডেল বাস্তব ডেটা ও কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে দেখায় কীভাবে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব ছড়াতে পারে।
অধ্যাপক গৌতম মেনন বিবিসিকে বলেন: “মানুষের জন্য H5N1 মহামারির হুমকি বাস্তব সত্য। তবে আমরা আরও নজরদারি এবং তৎপরতার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধের আশা করতে পারি।”
গবেষকরা বলছে, একটি বার্ড ফ্লু মহামারি নিঃশব্দে শুরু হবে। একটি সংক্রমিত পাখি সম্ভবত একজন কৃষক, বাজারকর্মী বা মুরগির খামারের কর্মীকে আক্রান্ত করবে।
গবেষকরা বলছেন, বিপদ প্রথম সংক্রমণে নয়, বরং তার পরে যা ঘটবে তার মধ্যে-একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ক্রমাগত সংক্রমণ।
গবেষকরা ‘ভারতসিম’ নামের একটি ওপেন-সোর্স সিমুলেশন প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নিয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম মূলত কোভিড-১৯ মডেলিংয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এটি অন্যান্য রোগ নিয়ে গবেষণার জন্যও যথেষ্ট কার্যকর।
গবেষকদের মতে, নীতিপ্রণেতাদের জন্য শিক্ষণীয় হলো, প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কতটা দ্রুত হতে পারে।
গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, একবার আক্রান্তের সংখ্যা ২ থেকে দশে পৌঁছালে রোগটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সংস্পর্শের বাইরে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
‘প্রাথমিক সংস্পর্শ’ হলো যারা সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি ছিলেন। যেমন পরিবারের সদস্য, সেবাদাতা বা ঘনিষ্ঠ সহকর্মী।
‘মাধ্যমিক সংস্পর্শ’ হলো যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেননি কিন্তু প্রাথমিক সংস্পর্শের কাছাকাছি ছিলেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যদি মাত্র দুটি সংক্রমণের ঘটনা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক সংস্পর্শে আসা পরিবারগুলোকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়, তাহলে প্রাদুর্ভাব প্রায় নিশ্চিতভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
কিন্তু যখন ১০টি সংক্রমণের শনাক্ত হয়, ততক্ষণে সংক্রমণ ইতিমধ্যেই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এর গতিপথ এমন হয়ে দাঁড়ায় যা কোনো প্রাথমিক পদক্ষেপ না নেওয়ার পরিস্থিতির চেয়ে খুব একটা আলাদা করা যায় না।

বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে গবেষণাকে যুক্ত রাখতে গবেষকরা তামিলনাড়ুর নামাক্কল জেলার একটি গ্রামের মডেল বেছে নেন। যা ভারতের পোলট্রি উৎপাদনের কেন্দ্র।
নামাক্কলে দেড় হাজারের বেশি পোলট্রি খামার এবং প্রায় সাত কোটি মুরগি রয়েছে। এখানে দৈনিক ছয় কোটি ডিম উৎপাদন হয়।
গবেষকরা সিনথেটিক কমিউনিটির মাধ্যমে (সিন্থেটিক কমিউনিটি হলো একটি কৃত্রিম কম্পিউটারচালিত জনসংখ্যা যা আসল জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য এবং আচরণ অনুকরণ করে) ৯ হাজার ৬৬৭ জন বাসিন্দার একটি গ্রাম তৈরি করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল ঘরবাড়ি, কাজের জায়গা, বাজার। বাস্তব এক্সপোজার অনুকরণ করতে সেখানে বার্ড ফ্লু সংক্রমিত পাখি ছাড়া হয়েছিল।
ওই সিমুলেশনে, ভাইরাসটি একটি কাজের জায়গা থেকে শুরু হয়। একটি মাঝারি আকারের খামার বা কাঁচাবাজারে প্রথমে সেখানকার লোকদের (প্রাথমিক সংস্পর্শ) মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এটি অন্যদের (মাধ্যমিক সংস্পর্শ) মধ্যে ছড়িয়ে যায়; যাদের সঙ্গে তারা বাড়ি, স্কুল এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে মেলামেশা করে।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক সংস্পর্শ দেখে গবেষকরা সংক্রমণের মূল সূচকগুলো অনুমান করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে বেসিক রিপ্রোডাক্টিভ নম্বর R0 (একজন সংক্রমিত ব্যক্তি গড়ে কতজন মানুষকে সংক্রমণ করে তার পরিমাপ করে)। বাস্তবে যেহেতু মহামারি নেই, তাই গবেষকরা এর পরিবর্তে সম্ভাব্য সংক্রমণ গতির একটি মডেল তৈরি করেছেন।
পাখি নিধন, ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন এবং লক্ষ্যভিত্তিক টিকা দিলে কী হয়— সেগুলো গবেষকরা পরীক্ষা করেছেন।
এর ফলাফল ছিল খুবই স্পষ্ট। ভাইরাসটি কোনো মানুষকে সংক্রমিত করার আগেই যদি পাখি নিধন করা হয় কেবল তখনই এটি কাজ করে।
গবেষকরা দেখেছেন, সংক্রমণ একবার ছড়িয়ে পড়লে সময়ই হয়ে ওঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সংক্রমিত ব্যক্তিদের আলাদা করা এবং পরিবারগুলোকে কোয়ারেন্টিনে রাখা ভাইরাসকে দ্বিতীয় পর্যায়ে থামিয়ে দিতে পারে। কিন্তু একবার তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ দেখা দিলে (যেমন বন্ধুর বন্ধু, বা পরিচিতের পরিচিত ব্যক্তি) প্রাদুর্ভাবটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যদি না কর্তৃপক্ষ লকডাউনসহ আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়।
লক্ষ্যভিত্তিক টিকাদান ভাইরাসের টিকে থাকার সীমা বাড়াতে সাহায্য করে। যদিও পরিবারের সদস্যদের তাৎক্ষণিক ঝুঁকি কমাতে এটি খুব অল্পই ভূমিকা রাখে।