তাসীন মল্লিক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই। স্বাভাবিকভাবেই এই হামলার সাথে আসন্ন নির্বাচন ও রাজনীতির নানা সমীকরণ যুক্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ এই হামলাকে ঘিরে নানা ভাষ্য হাজির করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। আর এ ক্ষেত্রে কোনটি তথ্য, কোনটি অপতথ্য, তার কোনো বাছবিচার কেউ করছে না। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে ঠিক এ উৎকণ্ঠাই প্রকাশ করা হয়েছিল প্রশাসন থেকে। নির্বাচনের সময়ে এ অপতথ্যের বাড়বাড়ন্ত ঠেকানোর কী প্রস্তুতি নির্বাচনের কমিশনের আছে–সে প্রশ্ন এরই মধ্যে উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টা হয়। এ ঘটনা ঘিরে ‘অপতথ্যের সংঘাত’নজর এড়ায়নি কারও। কোনো বাছবিচার ছাড়াই রাজনৈতিক পক্ষগুলো প্রতিপক্ষের দিকে আঙুল তুলে তদন্তাধীন একটি বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে মতামত দেওয়া শুরু করে। এমনকি গত ১৭ ডিসেম্বর হাদির মৃত্যুসংবাদও প্রচার হয়, অনেকে শোকবার্তাও পোস্ট করতে থাকেন। যদিও তখনো নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে হাদির মৃত্যুসংবাদ আসেনি।
ভোটের মাঠে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে এ ধরনের চেষ্টা সামনেও হতে পারে। এ জন্য ভোটের প্রচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্যের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে আইন সংশোধনের পাশপাশি একটি অপতথ্য মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও প্রশ্ন উঠেছে–অপতথ্য নিয়ন্ত্রণে এ প্রচেষ্টা কতটুকু কার্যকর হবে?
অপতথ্য বিস্তারের বাস্তাবতা ও তা রোধের পন্থা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ চরচাকে বলেন, ‘‘অপতথ্য আপনি শূন্য করে দিতে পারবেন না। এটার প্রবণতা ঠেকাতে হবে। এটার বিস্তার ঠেকাতে হবে। সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। আর যাদেরকে চিহ্নিত করতে পারব তারা আইনের আওতায় আসবেন।”
সামাজিক মাধ্যমে রাজনৈতিক পক্ষগুলো নানা ইস্যু ঘিরে পরস্পরকে আক্রমণ করে, যা কখনো কখনো হত্যার হুমকি পর্যন্ত গড়ায়। আর এ আক্রমণ–পাল্টা আক্রমণের ক্ষেত্রে তথ্য ও অপতথ্য দুইই সমানতালে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করছে।
ভোট ঘিরে এমন ‘সংঘাত’ঠেকাতে অপতথ্য মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সংস্থাটির আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্রে জানানো হয়েছে, এ সেল নির্বাচনের আগে চার দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পর দুদিন মিলিয়ে মোট সাত দিন পূর্ণাঙ্গরূপে কাজ করবে।
ভোটের প্রচারে এক সময় পোস্টার–সমাবেশ প্রধান অনুষঙ্গ হলেও নবম জাতীয় সংসদের সময় থেকেই অনলাইনে প্রচার জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ইন্টারনেট সুবিধার পরিসর আরও বেড়েছে। ফলে ভাচ্যুয়াল প্রচার ও পাল্টা প্রচার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি অন্যতম প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে।
শুরুর উদাহরণেই ফেরা যাক। হাদিকে গুলি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অপতথ্য, অনুমাননির্ভর ভাষ্য, অভিযোগ ইত্যাদি প্রচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে ঘায়েলের চেষ্টা করে। এমনকি হাদির ওপর হামলা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের ব্রিফিংকে এআই দিয়ে পাল্টে সামাজিকমাধ্যমে করা প্রচারকে গুরুতরভাবে আমলে নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে বিএনপির সিনিয়র নেতাকে। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের এ যুগে এআই বাস্তব এবং রাজনৈতিক নানা বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে এর ব্যবহার এমনকি বাংলাদেশেও নতুন নয়।
অপতথ্যের জেরে নাকাল রাজনীতিবিদেরা তফসিলের আগেও ইসির কাছে অভিযোগ তুলেছিলন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্থাটির সংলাপে এসে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছিলেন, “ভুয়া ভিডিও ও বিকৃত কনটেন্ট ছড়িয়ে আমাকে সামাজিকভাবে বিভ্রান্ত ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। অথচ এসব প্রতিরোধে ইসির বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।”
এ নিয়ে সত্যিকার অর্থে ইসির তরফ থেকে মনিটরিং সেল গঠনের তথ্য জানানো ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপের তথ্য জনসম্মুখে নেই।
মনিটরিং সেল: পরিসর ও সক্ষমতা কত?
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্র থেকে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা ও অপতথ্য মনিটরিং সেলে ইসি, মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বিটিআরসি ও সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে ভোটের সাত দিন পূর্ণাঙ্গ আকারে কাজ করবে। যদিও সেলের কার্যকাল সম্পর্কে বলা হয়েছে, তফসিল থেকে ভোটের পরের দুদিন পর্যন্ত।
অপতথ্য মনিটরিং সেলের কার্যক্রম কবে শুরু হচ্ছে–এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ চরচাকে বলেন, ‘‘কার্যক্রম তো তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে বলে আমি জানি।”
সেলের কার্যক্রম সম্পর্কে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘‘সাইবার সিকিউরিটি সেল বলতে নতুনভাবে কোনো স্থাপনা করা হচ্ছে না। বাংলাদেশে এক্সিসস্টিং যে সাইবার সিকিউরিটি স্ট্রাকচার আছে, সেগুলোকেই আমরা ব্যবহার করছি। তারা বিশেষভাবে এখন নির্বাচনের দিকে ফোকাস করছে।”
নির্বাচন কমিশনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, ইসি সেল সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে। এর প্রধানের দায়িত্বে আছেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এই সেলের অধীনে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিস্টেম এনালিস্ট চরচাকে বলেন, ‘‘অনলাইন স্ফেয়ার তো ইনফাইনাট। বিদেশ থেকে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সবাইকে ধরা সম্ভব, সব খুটে খুটে মনিটর সম্ভব? যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে, সেগুলো শণাক্ত করা হবে; আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। সেল পুরো বিষয়টি সমন্বয় করবে।”
ইসির এ পদক্ষেপ কার্যকর করতে হলে পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থা গ্রহণ সমানতালে হতে হবে বলে মত দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম। চরচাকে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আজও কিন্তু সাইবার বুলিং–হুমকির শিকার হয়ে একজন নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি।”
বিধি সংশোধন: প্রতিরোধের চেষ্টা
অপতথ্য ঠেকাতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও ২০০৮ সালের আচরণবিধির সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেশ কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করে নতুন আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে ইসি। তফসিলের আগে গত ১১ নভেম্বর এটি গেজেট আকারে জারি হয়। প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের আচরণবিধি সংশোধন করে ১৬ ধারায় সম্পাদনা করা অথবা কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের মাধ্যমে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, পক্ষপাতমূলক, বিদ্ধষপূর্ণ, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ প্রচার নিষিদ্ধ করেছে সংস্থাটি।
বিধি প্রয়োগের মাধ্যমে অপতথ্য পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব না হলেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রহমানেল মাছউদ। চরচাকে তিনি বলেন, “টোটাল জাস্টিস নিশ্চিত করা সম্ভব না। তবে যারা অপরাধ করতে চায়, তাদের জন্য আইন ও শাস্তির কথা উল্লেখ থাকা মানে তাদের উদ্দেশে একটি বার্তা দেওয়া।”
এ নিয়ে চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে মাছউদ বলেন, ‘‘শুধু আমাদের জন্য না, এটা একটা গ্লোবাল সমস্যা। আমরা আরপিওতে একটা সেকশন ঢুকেয়েছি। এমনিতেও সাইবার ক্রাইম সাইবার সিকিউরিটি বাংলাদেশে এখন তো প্রচলিত আছেই।”
বদিউল আলম মজুমদার চরচাকে বলেন, ‘‘অপতথ্য ঠেকানো বিষয়টি সহজ না। শত চেষ্টা করলেও পুরোপুরি অপতথ্য বিস্তার ও এর প্রভাব ঠেকানো সম্ভব না। তবে প্রচেষ্টা যেন বন্ধ না থাকে। এটা গুরুত্বপূর্ণ।”

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই। স্বাভাবিকভাবেই এই হামলার সাথে আসন্ন নির্বাচন ও রাজনীতির নানা সমীকরণ যুক্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষ এই হামলাকে ঘিরে নানা ভাষ্য হাজির করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। আর এ ক্ষেত্রে কোনটি তথ্য, কোনটি অপতথ্য, তার কোনো বাছবিচার কেউ করছে না। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে ঠিক এ উৎকণ্ঠাই প্রকাশ করা হয়েছিল প্রশাসন থেকে। নির্বাচনের সময়ে এ অপতথ্যের বাড়বাড়ন্ত ঠেকানোর কী প্রস্তুতি নির্বাচনের কমিশনের আছে–সে প্রশ্ন এরই মধ্যে উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টা হয়। এ ঘটনা ঘিরে ‘অপতথ্যের সংঘাত’নজর এড়ায়নি কারও। কোনো বাছবিচার ছাড়াই রাজনৈতিক পক্ষগুলো প্রতিপক্ষের দিকে আঙুল তুলে তদন্তাধীন একটি বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে মতামত দেওয়া শুরু করে। এমনকি গত ১৭ ডিসেম্বর হাদির মৃত্যুসংবাদও প্রচার হয়, অনেকে শোকবার্তাও পোস্ট করতে থাকেন। যদিও তখনো নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে হাদির মৃত্যুসংবাদ আসেনি।
ভোটের মাঠে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে এ ধরনের চেষ্টা সামনেও হতে পারে। এ জন্য ভোটের প্রচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্যের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে আইন সংশোধনের পাশপাশি একটি অপতথ্য মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও প্রশ্ন উঠেছে–অপতথ্য নিয়ন্ত্রণে এ প্রচেষ্টা কতটুকু কার্যকর হবে?
অপতথ্য বিস্তারের বাস্তাবতা ও তা রোধের পন্থা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ চরচাকে বলেন, ‘‘অপতথ্য আপনি শূন্য করে দিতে পারবেন না। এটার প্রবণতা ঠেকাতে হবে। এটার বিস্তার ঠেকাতে হবে। সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। আর যাদেরকে চিহ্নিত করতে পারব তারা আইনের আওতায় আসবেন।”
সামাজিক মাধ্যমে রাজনৈতিক পক্ষগুলো নানা ইস্যু ঘিরে পরস্পরকে আক্রমণ করে, যা কখনো কখনো হত্যার হুমকি পর্যন্ত গড়ায়। আর এ আক্রমণ–পাল্টা আক্রমণের ক্ষেত্রে তথ্য ও অপতথ্য দুইই সমানতালে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করছে।
ভোট ঘিরে এমন ‘সংঘাত’ঠেকাতে অপতথ্য মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সংস্থাটির আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্রে জানানো হয়েছে, এ সেল নির্বাচনের আগে চার দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পর দুদিন মিলিয়ে মোট সাত দিন পূর্ণাঙ্গরূপে কাজ করবে।
ভোটের প্রচারে এক সময় পোস্টার–সমাবেশ প্রধান অনুষঙ্গ হলেও নবম জাতীয় সংসদের সময় থেকেই অনলাইনে প্রচার জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ইন্টারনেট সুবিধার পরিসর আরও বেড়েছে। ফলে ভাচ্যুয়াল প্রচার ও পাল্টা প্রচার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি অন্যতম প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে।
শুরুর উদাহরণেই ফেরা যাক। হাদিকে গুলি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অপতথ্য, অনুমাননির্ভর ভাষ্য, অভিযোগ ইত্যাদি প্রচারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে ঘায়েলের চেষ্টা করে। এমনকি হাদির ওপর হামলা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের ব্রিফিংকে এআই দিয়ে পাল্টে সামাজিকমাধ্যমে করা প্রচারকে গুরুতরভাবে আমলে নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে বিএনপির সিনিয়র নেতাকে। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের এ যুগে এআই বাস্তব এবং রাজনৈতিক নানা বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে এর ব্যবহার এমনকি বাংলাদেশেও নতুন নয়।
অপতথ্যের জেরে নাকাল রাজনীতিবিদেরা তফসিলের আগেও ইসির কাছে অভিযোগ তুলেছিলন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্থাটির সংলাপে এসে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছিলেন, “ভুয়া ভিডিও ও বিকৃত কনটেন্ট ছড়িয়ে আমাকে সামাজিকভাবে বিভ্রান্ত ও রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার চেষ্টা চলছে। অথচ এসব প্রতিরোধে ইসির বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।”
এ নিয়ে সত্যিকার অর্থে ইসির তরফ থেকে মনিটরিং সেল গঠনের তথ্য জানানো ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপের তথ্য জনসম্মুখে নেই।
মনিটরিং সেল: পরিসর ও সক্ষমতা কত?
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্র থেকে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা ও অপতথ্য মনিটরিং সেলে ইসি, মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বিটিআরসি ও সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে ভোটের সাত দিন পূর্ণাঙ্গ আকারে কাজ করবে। যদিও সেলের কার্যকাল সম্পর্কে বলা হয়েছে, তফসিল থেকে ভোটের পরের দুদিন পর্যন্ত।
অপতথ্য মনিটরিং সেলের কার্যক্রম কবে শুরু হচ্ছে–এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ চরচাকে বলেন, ‘‘কার্যক্রম তো তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে বলে আমি জানি।”
সেলের কার্যক্রম সম্পর্কে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘‘সাইবার সিকিউরিটি সেল বলতে নতুনভাবে কোনো স্থাপনা করা হচ্ছে না। বাংলাদেশে এক্সিসস্টিং যে সাইবার সিকিউরিটি স্ট্রাকচার আছে, সেগুলোকেই আমরা ব্যবহার করছি। তারা বিশেষভাবে এখন নির্বাচনের দিকে ফোকাস করছে।”
নির্বাচন কমিশনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, ইসি সেল সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে। এর প্রধানের দায়িত্বে আছেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এই সেলের অধীনে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থা কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিস্টেম এনালিস্ট চরচাকে বলেন, ‘‘অনলাইন স্ফেয়ার তো ইনফাইনাট। বিদেশ থেকে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সবাইকে ধরা সম্ভব, সব খুটে খুটে মনিটর সম্ভব? যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে, সেগুলো শণাক্ত করা হবে; আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। সেল পুরো বিষয়টি সমন্বয় করবে।”
ইসির এ পদক্ষেপ কার্যকর করতে হলে পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থা গ্রহণ সমানতালে হতে হবে বলে মত দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম। চরচাকে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আজও কিন্তু সাইবার বুলিং–হুমকির শিকার হয়ে একজন নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি।”
বিধি সংশোধন: প্রতিরোধের চেষ্টা
অপতথ্য ঠেকাতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও ২০০৮ সালের আচরণবিধির সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেশ কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করে নতুন আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে ইসি। তফসিলের আগে গত ১১ নভেম্বর এটি গেজেট আকারে জারি হয়। প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের আচরণবিধি সংশোধন করে ১৬ ধারায় সম্পাদনা করা অথবা কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি কন্টেন্টের মাধ্যমে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, পক্ষপাতমূলক, বিদ্ধষপূর্ণ, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ প্রচার নিষিদ্ধ করেছে সংস্থাটি।
বিধি প্রয়োগের মাধ্যমে অপতথ্য পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব না হলেও অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রহমানেল মাছউদ। চরচাকে তিনি বলেন, “টোটাল জাস্টিস নিশ্চিত করা সম্ভব না। তবে যারা অপরাধ করতে চায়, তাদের জন্য আইন ও শাস্তির কথা উল্লেখ থাকা মানে তাদের উদ্দেশে একটি বার্তা দেওয়া।”
এ নিয়ে চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে মাছউদ বলেন, ‘‘শুধু আমাদের জন্য না, এটা একটা গ্লোবাল সমস্যা। আমরা আরপিওতে একটা সেকশন ঢুকেয়েছি। এমনিতেও সাইবার ক্রাইম সাইবার সিকিউরিটি বাংলাদেশে এখন তো প্রচলিত আছেই।”
বদিউল আলম মজুমদার চরচাকে বলেন, ‘‘অপতথ্য ঠেকানো বিষয়টি সহজ না। শত চেষ্টা করলেও পুরোপুরি অপতথ্য বিস্তার ও এর প্রভাব ঠেকানো সম্ভব না। তবে প্রচেষ্টা যেন বন্ধ না থাকে। এটা গুরুত্বপূর্ণ।”