আরমান ভূঁইয়া

“ফ্লাইওভারটা যেন ককটেল ছোড়ার নিরাপদ জায়গা হয়ে গেছে।” রাজধানীর মৌচাক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমানের কথায় স্পষ্ট হতাশা প্রকাশ পেল। গত এক মাসে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার থেকে অন্তত ডজনখানেক ককটেল ছোড়া হয়েছে। তারপরও সন্তোষজনক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারকে কেন্দ্র করে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভার থেকে গত দেড় মাসে সাত দিনে ডজনখানেকের বেশি ককটেল নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণ হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর এমনই এক ঘটনায় নিহত হয়েছে একজন। ফলে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তো বটেই ব্যবসায়ী, পথচারীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগে নারীসহ অন্তত দুজন পথচারী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজধানীতে গত ছয় মাস ধরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার এলাকায় প্রথম ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায়। ওই দিন মৌচাক ফ্লাইওভারের ওপর থেকে দুর্বৃত্তরা একটি ককটেল নিচে নিক্ষেপ করলে সেটি রাস্তায় বিস্ফোরিত হয়। যদিও সে ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এরপর একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে থাকে এর আশপাশের এলাকায়। নিক্ষেপের স্থল সেই ফ্লাইওভার।
সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর ঘটে ভয়াবহ ঘটনা। মগবাজার নিউ ইস্কাটন এলাকায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের ফটকের সামনে ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ছোড়া একটি ককটেল কার ডেকোরেশনের দোকানের কর্মচারী সিয়াম মজুমদারের (২১) মাথায় বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণে তার মাথার অংশবিশেষ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে মগবাজার-মৌচাক এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত সিয়ামের বাবা আলী আকবর মজুমদার বলেন, “সকাল ৯টায় বাসা থেকে কাজে বের হয়েছিল আমার ছেলে। মোটরপার্টসের দোকান থেকে চায়ের দোকানে কাপ দিতে গিয়েছিল। হঠাৎ ওর মাথার ওপর বোমা পড়ল। আমার ছেলেটা এভাবে শেষ হয়ে গেল।”
একের পর এক বিস্ফোরণ, অধরা দুর্বৃত্তরা
গত ১৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মৌচাক ক্রসিংয়ে একটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। পুলিশ জানায়, মৌচাক ফ্লাইওভার থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত নিচে ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে মগবাজার নিউ ইস্কাটনে ককটেল বিস্ফোরণে আব্দুর বাসির নামে এক পথচারী আহত হন। সে সময় রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ধারণা করা হচ্ছে ফ্লাইওভার থেকেই ককটেলটি নিক্ষেপ করা হয়েছে।
গত ২১ নভেম্বর মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে নামার পর মৌচাক এলাকার গ্রামীণ চেক কুটির দোকানের সামনে আরেকটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এরপর ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ও মধ্যরাতে মৌচাক ও মগবাজার এলাকায় পৃথক তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। যদিও সেসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর মৌচাক এলাকায় এক মিনিটের ব্যবধানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। সেদিন ককটেলের আঘাতে মৌচাক মোড়ে এক নারী পথচারী আহত হন। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, চলন্ত যান থেকেই ককটেলগুলো নিচে ছুড়ে মারা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অরক্ষিত প্রবেশপথ, নেই সিসিটিভি
সরেজমিন দেখা যায়, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে ওঠা-নামার মোট পাঁচটি পয়েন্ট রয়েছে। কিন্তু একটি বাদে কোথাও নেই কোনো চেকপোস্ট। পুরো ফ্লাইওভারে নেই কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা। স্থায়ী তল্লাশিচৌকিও নেই। ফলে দুর্বৃত্তরা সহজেই ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাচ্ছে। বারবার ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এ অবস্থায় পুরো এলাকার বাসিন্দারা তো বটেই পথচারীসহ ওই সড়ক ব্যবহার করতে হয়–এমন সবার মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। মৌচাকের স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমান চরচাকে বলেন, “এতগুলো ঘটনার পরও যদি সিসিটিভি না বসে, তাহলে মানুষ মারা গেলেই শুধু পুলিশ নড়াচড়া করবে? ফ্লাইওভারটা যেন ককটেল ছোড়ার নিরাপদ জায়গা হয়ে গেছে।”
জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন মগবাজারে চায়ের দোকানের মালিক রহিম উদ্দিন। তিনি বলেন, “প্রতিদিন চা বানাই আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি–কখন কোথা থেকে ককটেল পড়ে। পুলিশ আসে যায়, কিন্তু সারাক্ষণ তো থাকে না। আমাদের জীবনটা একেবারে অনিশ্চিত হয়ে গেছে।”
পুলিশ কী করছে?
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাংলামোটর থেকে ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে হাতিরঝিল থানার পুলিশ মোটরসাইকেল তল্লাশি করছে। প্রতিটি মোটরসাইকেলের নম্বর লিখে রাখা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা জানান, ফ্লাইওভার থেকে ককটেল নিক্ষেপ ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোর্তুজা চরচাকে বলেন, “ককটেল বিস্ফোরণসহ যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে চারদিকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। প্রতিটি ফ্লাইওভারের ইনকামিং ও আউটগোয়িং পয়েন্টে চেকপোস্টের পাশাপাশি ফ্লাইওভারের ওপর একাধিক মোটরসাইকেল টিম দিয়ে ক্রস পেট্রোলিং চালানো হচ্ছে। অন্যান্য থানার টহল দলও ওপর ও নিচে নিয়মিত টহল দিচ্ছে।”
তবে নিউ ইস্কাটন থেকে ফ্লাইওভারের ওপরে উঠে মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে নেমে আবার মৌচাকের দিকে ওঠার সময় কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। মালিবাগ আবুল হোটেলের দিক থেকেও ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে কোনো চেকপোস্ট ছিল না। মৌচাক পয়েন্টে ফ্লাইওভারের ওপরে শাহজাহারপুর থানার তিনজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। তাদের ফ্লাইওভারের ওপরেই সন্দেহভাজন যানবাহন তল্লাশি করতে দেখা যায়।

ফ্লাইওভারের ওপরে মালিবাগ মোড়ে দেখা গেছে পল্টন থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসাআই) অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, “ফ্লাইওভারের ওপরে যার যার থানা এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। ককটেলক বিষ্ফোরণ রোধসহ যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে আমরা কাজ করছি।”
অন্যদিকে নিউ ইস্কাটন ছাড়া রাজারবাগ, শান্তিনগর ও হলি ফ্যামিলির দিকের ফ্লাইওভারের ওঠার মুখেও কোনো চেকপোস্ট চোখে পড়েনি। রমনা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ রাহাৎ খান চরচাকে বলেন, “ফ্লাইওভারটি পুরোপুরি রমনা থানার আওতাভুক্ত না হলেও ওঠানামার পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে ফ্লাইওভারের ওপর মোটরসাইকেল দিয়ে ক্রস পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে।”
কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এ তৎপরতা সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা। মৌচাক এলাকার ফরচুন মার্কেটের কাপড়ের দোকানি আব্দুর রশিদ আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, “সন্ধ্যা হলেই মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ভয়ে থাকেন। হঠাৎ করে ফ্লাইওভার থেকে ককটেল পড়লে কার ওপর পড়বে কেউ জানে না। ব্যবসা তো দূরের কথা, বেঁচে থাকাই বড় চিন্তা।”
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, “ফ্লাইওভারে নিয়মিত ক্রস পেট্রোলিং চালু রয়েছে। ফ্লাইওভারের ওপর স্থায়ীভাবে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ না থাকলেও মোটরসাইকেল টহলের মাধ্যমে নজরদারি রাখা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের ওপরে সিসিটিভি ক্যামেরার ঘাটতি রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জানানো হয়েছে এবং ডিএমপির পক্ষ থেকেও সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

“ফ্লাইওভারটা যেন ককটেল ছোড়ার নিরাপদ জায়গা হয়ে গেছে।” রাজধানীর মৌচাক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমানের কথায় স্পষ্ট হতাশা প্রকাশ পেল। গত এক মাসে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার থেকে অন্তত ডজনখানেক ককটেল ছোড়া হয়েছে। তারপরও সন্তোষজনক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারকে কেন্দ্র করে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই ফ্লাইওভার থেকে গত দেড় মাসে সাত দিনে ডজনখানেকের বেশি ককটেল নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণ হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর এমনই এক ঘটনায় নিহত হয়েছে একজন। ফলে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তো বটেই ব্যবসায়ী, পথচারীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর আগে নারীসহ অন্তত দুজন পথচারী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজধানীতে গত ছয় মাস ধরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার এলাকায় প্রথম ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায়। ওই দিন মৌচাক ফ্লাইওভারের ওপর থেকে দুর্বৃত্তরা একটি ককটেল নিচে নিক্ষেপ করলে সেটি রাস্তায় বিস্ফোরিত হয়। যদিও সে ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এরপর একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে থাকে এর আশপাশের এলাকায়। নিক্ষেপের স্থল সেই ফ্লাইওভার।
সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর ঘটে ভয়াবহ ঘটনা। মগবাজার নিউ ইস্কাটন এলাকায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের ফটকের সামনে ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ছোড়া একটি ককটেল কার ডেকোরেশনের দোকানের কর্মচারী সিয়াম মজুমদারের (২১) মাথায় বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণে তার মাথার অংশবিশেষ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে মগবাজার-মৌচাক এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত সিয়ামের বাবা আলী আকবর মজুমদার বলেন, “সকাল ৯টায় বাসা থেকে কাজে বের হয়েছিল আমার ছেলে। মোটরপার্টসের দোকান থেকে চায়ের দোকানে কাপ দিতে গিয়েছিল। হঠাৎ ওর মাথার ওপর বোমা পড়ল। আমার ছেলেটা এভাবে শেষ হয়ে গেল।”
একের পর এক বিস্ফোরণ, অধরা দুর্বৃত্তরা
গত ১৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মৌচাক ক্রসিংয়ে একটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। পুলিশ জানায়, মৌচাক ফ্লাইওভার থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত নিচে ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে মগবাজার নিউ ইস্কাটনে ককটেল বিস্ফোরণে আব্দুর বাসির নামে এক পথচারী আহত হন। সে সময় রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ধারণা করা হচ্ছে ফ্লাইওভার থেকেই ককটেলটি নিক্ষেপ করা হয়েছে।
গত ২১ নভেম্বর মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে নামার পর মৌচাক এলাকার গ্রামীণ চেক কুটির দোকানের সামনে আরেকটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এরপর ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ও মধ্যরাতে মৌচাক ও মগবাজার এলাকায় পৃথক তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। যদিও সেসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর মৌচাক এলাকায় এক মিনিটের ব্যবধানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। সেদিন ককটেলের আঘাতে মৌচাক মোড়ে এক নারী পথচারী আহত হন। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, চলন্ত যান থেকেই ককটেলগুলো নিচে ছুড়ে মারা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অরক্ষিত প্রবেশপথ, নেই সিসিটিভি
সরেজমিন দেখা যায়, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে ওঠা-নামার মোট পাঁচটি পয়েন্ট রয়েছে। কিন্তু একটি বাদে কোথাও নেই কোনো চেকপোস্ট। পুরো ফ্লাইওভারে নেই কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা। স্থায়ী তল্লাশিচৌকিও নেই। ফলে দুর্বৃত্তরা সহজেই ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যাচ্ছে। বারবার ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এ অবস্থায় পুরো এলাকার বাসিন্দারা তো বটেই পথচারীসহ ওই সড়ক ব্যবহার করতে হয়–এমন সবার মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। মৌচাকের স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমান চরচাকে বলেন, “এতগুলো ঘটনার পরও যদি সিসিটিভি না বসে, তাহলে মানুষ মারা গেলেই শুধু পুলিশ নড়াচড়া করবে? ফ্লাইওভারটা যেন ককটেল ছোড়ার নিরাপদ জায়গা হয়ে গেছে।”
জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন মগবাজারে চায়ের দোকানের মালিক রহিম উদ্দিন। তিনি বলেন, “প্রতিদিন চা বানাই আর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি–কখন কোথা থেকে ককটেল পড়ে। পুলিশ আসে যায়, কিন্তু সারাক্ষণ তো থাকে না। আমাদের জীবনটা একেবারে অনিশ্চিত হয়ে গেছে।”
পুলিশ কী করছে?
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাংলামোটর থেকে ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে হাতিরঝিল থানার পুলিশ মোটরসাইকেল তল্লাশি করছে। প্রতিটি মোটরসাইকেলের নম্বর লিখে রাখা হচ্ছে। পুলিশ সদস্যরা জানান, ফ্লাইওভার থেকে ককটেল নিক্ষেপ ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোর্তুজা চরচাকে বলেন, “ককটেল বিস্ফোরণসহ যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে চারদিকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। প্রতিটি ফ্লাইওভারের ইনকামিং ও আউটগোয়িং পয়েন্টে চেকপোস্টের পাশাপাশি ফ্লাইওভারের ওপর একাধিক মোটরসাইকেল টিম দিয়ে ক্রস পেট্রোলিং চালানো হচ্ছে। অন্যান্য থানার টহল দলও ওপর ও নিচে নিয়মিত টহল দিচ্ছে।”
তবে নিউ ইস্কাটন থেকে ফ্লাইওভারের ওপরে উঠে মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে নেমে আবার মৌচাকের দিকে ওঠার সময় কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। মালিবাগ আবুল হোটেলের দিক থেকেও ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে কোনো চেকপোস্ট ছিল না। মৌচাক পয়েন্টে ফ্লাইওভারের ওপরে শাহজাহারপুর থানার তিনজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। তাদের ফ্লাইওভারের ওপরেই সন্দেহভাজন যানবাহন তল্লাশি করতে দেখা যায়।

ফ্লাইওভারের ওপরে মালিবাগ মোড়ে দেখা গেছে পল্টন থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে। পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (এসাআই) অমিত কুমার বিশ্বাস বলেন, “ফ্লাইওভারের ওপরে যার যার থানা এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। ককটেলক বিষ্ফোরণ রোধসহ যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে আমরা কাজ করছি।”
অন্যদিকে নিউ ইস্কাটন ছাড়া রাজারবাগ, শান্তিনগর ও হলি ফ্যামিলির দিকের ফ্লাইওভারের ওঠার মুখেও কোনো চেকপোস্ট চোখে পড়েনি। রমনা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ রাহাৎ খান চরচাকে বলেন, “ফ্লাইওভারটি পুরোপুরি রমনা থানার আওতাভুক্ত না হলেও ওঠানামার পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে ফ্লাইওভারের ওপর মোটরসাইকেল দিয়ে ক্রস পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে।”
কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এ তৎপরতা সন্তোষজনক নয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা। মৌচাক এলাকার ফরচুন মার্কেটের কাপড়ের দোকানি আব্দুর রশিদ আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বলেন, “সন্ধ্যা হলেই মার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ভয়ে থাকেন। হঠাৎ করে ফ্লাইওভার থেকে ককটেল পড়লে কার ওপর পড়বে কেউ জানে না। ব্যবসা তো দূরের কথা, বেঁচে থাকাই বড় চিন্তা।”
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, “ফ্লাইওভারে নিয়মিত ক্রস পেট্রোলিং চালু রয়েছে। ফ্লাইওভারের ওপর স্থায়ীভাবে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ না থাকলেও মোটরসাইকেল টহলের মাধ্যমে নজরদারি রাখা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের ওপরে সিসিটিভি ক্যামেরার ঘাটতি রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জানানো হয়েছে এবং ডিএমপির পক্ষ থেকেও সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”