সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণা করেছে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন ‘এম ই এস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হল।
গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই তিন মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর যে ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায়। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামি হওয়া এসব কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে থাকবেন। মামলার নির্দিষ্ট তারিখে সেনাবাহিনী তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করবে, আদালতের কার্যক্রম শেষে আবার হেফাজতে নিয়ে যাবে।
আলাদাভাবে বিশেষ কারাগার স্থাপন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি। তারা বলছে, বিশেষ কারাগার প্রতিষ্ঠা ‘বৈষম্যমূলক’।
আগেও ছিল সাব-জেল
দেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে একাধিক অস্থায়ী কারাগার স্থাপনের নজির রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আলোচিত সাব-জেল তৈরি করা হয়েছিল ২০০৭ সালে। এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর তৈরি করা হয়েছিল বিশেষ কারাগার। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় হুইপদের জন্য বরাদ্দ একটি বাড়িতে শেখ হাসিনাকে এবং উল্টো দিকে স্পিকারের জন্য তৈরি করা বাড়িতে রাখা হয়েছিল খালেদা জিয়াকে।
সাময়িক কারাগার বা সাব-জেল কী?
সাময়িক কারাগার হল জেলখানার বাইরেও অস্থায়ী জেল, যেখানে কারাগারের সব নিয়ম মেনেই অস্থায়ীভাবে বন্দিদের রাখা হয়, এটিকে সাব-জেল বা উপ-কারাগারও বলা হয়।
বন্দির গুরুত্ব, নিরাপত্তা ঝুঁকি, বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধাসহ নানা কারণেই অস্থায়ী কারাগারের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে দেশের যেকোনো সরকারি বাড়ি-অফিস ভবন বা স্থাপনাকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করতে পারে সরকার। দেশের ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৫৪১ (১) এর ক্ষমতাবলে, দ্য প্রিজনস অ্যাক্ট ১৮৯৪ এর ধারা ৩ (বি) অনুসারে সাময়িক কারাগার স্থাপন করা যায়।
কোনো নির্দিষ্ট জায়গাকে সাব-জেল (উপ-কারাগার) ঘোষণা করার ক্ষমতা সরকারের আছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আইন হচ্ছে আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনতে হবে। আদালতে আনার পরে আদালত যদি ফারদার অর্ডার (পরবর্তী আদেশ) দিয়ে বলেন কারাগারে পাঠান, তখন কারাগার বলতে সেটা কেন্দ্রীয় কারাগারও হতে পারে, সেটা জাতীয় সংসদ ভবনের মধ্যেও হতে পারে, এমপি হোস্টেল হতে পারে বা অন্য কোনো জায়গাকেও যদি সরকার কারাগার ঘোষণা করে, সে জায়গায় পাঠানো যেতে পারে। সেটা জেল বা কারাগার হিসেবে গণ্য হবে।”
তবে যেকোন স্থাপনায় সাব-জেল করা হলেও এর পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ কিংবা নিরাপত্তা সবই নিশ্চিত করবে কারা কর্তৃপক্ষ। এমনকি সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসে যে অস্থায়ী জেল স্থাপন করা হয়েছে এটির সার্বিক নিয়ন্ত্রণও থাকবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন চরচাকে জানান, কারা কর্তৃপক্ষ শিগগিরই সেনানিবাসের অস্থায়ী কারাগারের দায়িত্ব বুঝে নিবে। তিনি বলেন, “বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো স্থাপনাকেই সাব-জেল করতে পারে। সেনানিবাস হোক আর যেখানেই হোক কারাগারের সব দায়িত্ব আমাদের ওপর থাকে। আমরা আমদের আইন, লোকবল দিয়ে যেভাবে কেন্দ্রীয় কারাগার পরিচালিত হয় ঠিক সেভাবেই সাব-জেল পরিচালনা করা হবে।”