ডিম ছোড়া বিক্ষোভের অংশ হলো কীভাবে

ইয়াসিন আরাফাত
ইয়াসিন আরাফাত
ডিম ছোড়া বিক্ষোভের অংশ হলো কীভাবে
প্রতীকী ছবি। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

ইংরেজি ‘Egging’ অর্থ হলো কোনো ব্যক্তি বা তার সম্পত্তির দিকে ডিম ছুড়ে মারা। রাজনীতিবিদদের দিকে ডিম ছোড়া একটি পরিচিত ঘটনা। এই ডিম সাধারণত কাঁচা বা পচা হয়ে থাকে।

১৮৩৪ সালে নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকোর্ডে মার্কিন কবি জর্জ হোয়াইটার দাসত্ববিরোধী বক্তৃতা দেওয়ার সময়, তাকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়।

ব্রিটেনে ২০০১ সালে উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে একজন তরুণ কৃষক ডিম নিক্ষেপ করলে প্রেসকট নিজেই ঘুষি মেরে প্রতিক্রিয়া দেখান। মুহূর্তটির ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ডিম ছোড়ার রাজনীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

ডিম ছোড়া হয়েছিল হলিউডের অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের ওপরও। ২০০৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে নিজের গভর্নর হওয়ার ভোটের প্রচারণা চালানোর সময় তার দিকে ডিম নিক্ষেপ করা হয়। অবশ্য তিনি সিনেমার নায়কের মতোই নির্বিকারভাবে হাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলে দেন সেই ডিমটা।

২০০৪ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ফেডোরোভিচ ইয়ানুকোভিচ বিরোধীদের ছোড়া ডিমে আঘাত পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ২০১১ সালে আফগান বিক্ষোভকারীরা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানি কনস্যুলেটের দিকে ডিম নিক্ষেপ করেছিল। ২০১৩ সালে লন্ডনে একদল বিক্ষোভকারী, প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের কফিন ডিম দিয়ে পরিপূর্ণ করার হুমকি দিয়েছিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে এলিজাবেথ যুগে (১৬০০ সালের কাছাকাছি সময়) নাট্যভবনে যদি কোনো নাটক ভাল না হতো তাহলে দর্শকেরা পচা ডিম ছুড়ে মারত অভিনয়শিল্পীদের দিকে। তখন এই রীতিটি বিক্ষোভ প্রকাশ করার একটি পন্থা ছিল।

মার্কিন ওয়েবসাইট স্যালন ডট কমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সময়ের সাথে সাথে ডিম ছোড়ার রীতি রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখানোর একটি প্রতীকী উপায় হিসেবে বিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ, ডিম ছোড়া হয় বক্তার প্রতি অবজ্ঞা ও জনসচেতনতার চিহ্ন হিসেবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, মধ্যযুগে অপরাধীদের জনসমক্ষে ‘স্টক’ নামক স্থানে আটক করা হতো। তাদের উদ্দেশ্য করে প্রায়ই জনতা ডিম ছুড়ত। এছাড়া পচা ফলও নিক্ষেপ করা হতো।

এ বিষয়টি নিয়ে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গেলম্যানের মত হলো, প্রতিবাদ করতে গিয়ে খাবার ছুড়ে মারার কারণ হতে পারে- এটা সস্তা, সহজলভ্য এবং দৃশ্যমান।

খাদ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট বনঅ্যাপেটি ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অ্যান্ড্রু ব্যাখ্যা করে বলেন, টমেটো ছোড়া হয়, কারণ এটি হালকা, নিক্ষেপ করা সহজ, দামও কম। ছুড়ে মারার পর এটি ফেটে গেলে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি জাগায়। ডিমের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই; ফেটে গিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।

সম্পর্কিত