বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশের ষড়যন্ত্রের দুটি অভিযোগ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের একটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন হংকংয়ের মিডিয়া মোগল জিমি লাই। জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে সোমবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চীনা নীতির সমালোচক হিসেবে পরিচিত জিমি। ২০১৯ সালের গণবিক্ষোভের পর চীন সরকারের দমন-পীড়নের মুখেও দেশে-বিদেশে কর্তৃত্ববাদের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে যেতে থাকেন তিনি।
বলিষ্ঠ বক্সারের মতো গড়ন, তীক্ষ্ণ ভাষা ও আপসহীন স্বভাবের জন্য পরিচিত লাই। নিজের চেষ্টাতেই এই অবস্থান অর্জন করেছিলেন তিনি। হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে তিনি অর্থ সহায়তা করেছিলেন। তার ট্যাবলয়েড পত্রিকা অ্যাপল ডেইলি উদারপন্থী নানা উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছিল এবং চীনা কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করতে কখনো পিছপা হয়নি। এ কারণে ২০২১ সালে পুলিশি অভিযানের পর পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর কিছুদিন পরই বেইজিংয়ের আরোপিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে লাইকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। গ্রেপ্তারের আগে তিনি রয়টার্সকে বলেছিলেন, “শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।”
৭৮ বছর বয়সী লাই পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দী রয়েছেন। এই সময়ের বড় একটা অংশ কেটেছে একাকী, যার ফলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। লাই ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী এবং তিনি নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। কারাগারে তাকে এমন একটি ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, যার জানালা একটি করিডরের দিকে মুখ করা–এমনটাই জানিয়েছে তাঁর পরিবার। তার ঘনিষ্ঠদের মতে, তাঁর বিশ্বাসই তাঁকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানসিক দৃঢ়তা দিয়েছে।
প্রখ্যাত গণতন্ত্রপন্থী কর্মী ও শীর্ষস্থানীয় ক্যাথলিক ধর্মযাজক ৯৩ বছর বয়সী কার্ডিনাল জোসেফ জেন কারাগারে লাইকে দেখতে যেতেন।
হংকং ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হলেও স্বশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের দৃঢ়তা ও উদ্যোগের জন্য গর্ব করলেও শেষ পর্যন্ত চীনের অধীনে চলে যায়। পশ্চিমা উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি তাদের অনুরাগ শেষ পর্যন্ত বেইজিংয়ের কমিউনিস্ট সরকারের কাছে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে বিবেচিত হয়েছে। দারিদ্র্য থেকে সম্পদ, আর সেখান থেকে প্রতিরোধের পথে লাইয়ের জীবনের গল্পও যেন হংকংয়ের প্রতীকী প্রতিচ্ছবি।
দক্ষিণ চীনের গুয়াংঝৌ শহরের রাস্তায় অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করা এক সংগ্রামী কিশোর ছিলেন লাই। ১৯৬১ সালে তিনি একটি মাছ ধরার নৌকায় লুকিয়ে হংকংয়ে পালিয়ে যান। সেই কিশোরই পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের পোশাক ব্র্যান্ড জিওরদানো, যা গোটা এশিয়াতে জনপ্রিয়।
১৯৮৯ সালের জুনে বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ার ও আশপাশে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর চীনা সেনাদের হত্যাযজ্ঞ লাইয়ের মনোজগতে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই ঘটনার পরে লাই সাংবাদিকতার দিকে মনোযোগ দেন।
১৯৯০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাপ্তাহিক সাময়িকী নেক্সট ম্যাগাজিন। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তার রাজনৈতিক সক্রিয়তার কারণে চীনে জিওরদানো ব্র্যান্ডের দোকানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হলে লাই সেই ব্যবসা বিক্রি করে দেন এবং প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ১৯৯৫ সালে চালু করেন অ্যাপল ডেইলি। এই ট্যাবলয়েড পত্রিকাটি অপরাধসংক্রান্ত খবর, যৌন কেলেঙ্কারি, ঘোড়দৌঁড়ের পূর্বাভাস এবং হংকং ও চীনের অভিজাতদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করত, ফলে অল্প সময়েই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
লাই তার এক কলামে তৎকালীন চীনের প্রধানমন্ত্রী ও তিয়ানআনমেন ঘটনার জন্য দায়ীদের একজন হিসেবে অভিযুক্ত লি পেংকে “কচ্ছপের ডিমের ছেলে” বলে উল্লেখ করেন—যা অত্যন্ত অবমাননাকর শব্দ। এছাড়া তিনি চীনের বর্তমান নেতা শি জিন পিংকে “স্বৈরশাসক” বলে আখ্যা দেন।
হংকংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বেইজিং ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ শাসনব্যবস্থার অধীনে ব্যাপক স্বাধীনতা ও উচ্চমাত্রার স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু লাই ও অন্যান্য সমালোচকরা মনে করেন, চলমান জাতীয় নিরাপত্তা দমন-পীড়নে সেই প্রতিশ্রুতি কার্যকারিতা হারিয়েছে।
২০১৪ সালে ‘আমব্রেলা আন্দোলন’-এর সময় যখন পূর্ণ গণতন্ত্রের দাবিতে টানা ৭৯ দিন মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলেছিল। লাই তখনও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, যদিও দণ্ড দেওয়া হয়নি। কিন্তু ২০১৯ সালে, যখন লাখো মানুষ হংকংয়ে চীনের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামেন, তখন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তাঁকে “গণতন্ত্রের অশুভ শক্তি” বলে আখ্যা দেয়।
আদালতে লাই বলেন, “আপনার কাছে যত বেশি তথ্য থাকবে, আপনি তত বেশি জানবেন। আর আপনি যত বেশি জানবেন, তত বেশি স্বাধীন হবেন।’’
জিমি লাই কি ফৌজদারি না রাজনৈতিক আসামি?
২০০৮ সালে ফোর্বসের তালিকায় হংকংয়ের শীর্ষ ৪০ ধনীর একজন হিসেবে স্থান পান জিমি লাই। তখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন হংকং ডলার (১৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। তবে ২০২১ সালে তার মিডিয়া কোম্পানি নেক্সট ডিজিটালের শেয়ার জব্দ করা হয়, ফলে নগদ অর্থের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হয়।
বিচার চলাকালে লাই নিজেকে বারবার একজন “রাজনৈতিক বন্দী” বলে উল্লেখ করেন। এতে বিচারকদের একজন তাকে তিরস্কার করেন ও বলেন, লাই আদালতে উপস্থিত হয়েছেন একটি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে। লাই জবাবে বলেন, ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার তার আছে।
লাই বলেন, গণতন্ত্রের জন্য তার এ লড়াই নিজের জন্য ভালো পরিণতি বয়ে আনবে না তা তিনি জানেন, তবু এই আত্মত্যাগকে তিনি “সম্মান” হিসেবে দেখেন। এই সংকটজনক মুহূর্তে ছয় সন্তানসহ পরিবার তার পাশে থেকেছে।
স্ত্রী তেরেসা ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আদালতের শুনানিতে উপস্থিত থেকেছেন। লাইয়ের কন্যা ক্লেয়ার রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের বাবা এখনও মানসিকভাবে দৃঢ় আছেন, কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন।”
তিনি জানান, তার বাবা পিঠ ও কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত। ডায়াবেটিস, হৃদস্পন্দনের অনিয়ম এবং রক্তচাপে ভুগছেন, যা গত এক বছর আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
ক্লেয়ার আরও বলেন, “আদালতে যাওয়া কঠিন। তার ওপর বিচারপ্রক্রিয়াও অনেক দীর্ঘ। কিন্তু সেখানে তাকে বিচারক ও প্রসিকিউশন উভয় পক্ষ থেকেই তীব্রভাবে জেরা ও আক্রমণ করা হয়েছে। তবুও তারা প্রমাণ করতে পেরেছে, আমার বাবা এমন একজন মানুষ যিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, সত্যকে ভালোবাসেন, স্বাধীনতাকে ভালোবাসেন এবং তার পরিবারকে ভালোবাসেন।”
জিম মাই লাই। ছবি: রয়টার্স
বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশের ষড়যন্ত্রের দুটি অভিযোগ এবং রাষ্ট্রদ্রোহের একটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন হংকংয়ের মিডিয়া মোগল জিমি লাই। জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে সোমবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চীনা নীতির সমালোচক হিসেবে পরিচিত জিমি। ২০১৯ সালের গণবিক্ষোভের পর চীন সরকারের দমন-পীড়নের মুখেও দেশে-বিদেশে কর্তৃত্ববাদের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে যেতে থাকেন তিনি।
বলিষ্ঠ বক্সারের মতো গড়ন, তীক্ষ্ণ ভাষা ও আপসহীন স্বভাবের জন্য পরিচিত লাই। নিজের চেষ্টাতেই এই অবস্থান অর্জন করেছিলেন তিনি। হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে তিনি অর্থ সহায়তা করেছিলেন। তার ট্যাবলয়েড পত্রিকা অ্যাপল ডেইলি উদারপন্থী নানা উদ্যোগকে সমর্থন দিয়েছিল এবং চীনা কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করতে কখনো পিছপা হয়নি। এ কারণে ২০২১ সালে পুলিশি অভিযানের পর পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর কিছুদিন পরই বেইজিংয়ের আরোপিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে লাইকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। গ্রেপ্তারের আগে তিনি রয়টার্সকে বলেছিলেন, “শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।”
৭৮ বছর বয়সী লাই পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দী রয়েছেন। এই সময়ের বড় একটা অংশ কেটেছে একাকী, যার ফলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। লাই ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী এবং তিনি নিয়মিত ধর্মচর্চা করেন। কারাগারে তাকে এমন একটি ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, যার জানালা একটি করিডরের দিকে মুখ করা–এমনটাই জানিয়েছে তাঁর পরিবার। তার ঘনিষ্ঠদের মতে, তাঁর বিশ্বাসই তাঁকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানসিক দৃঢ়তা দিয়েছে।
প্রখ্যাত গণতন্ত্রপন্থী কর্মী ও শীর্ষস্থানীয় ক্যাথলিক ধর্মযাজক ৯৩ বছর বয়সী কার্ডিনাল জোসেফ জেন কারাগারে লাইকে দেখতে যেতেন।
হংকং ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হলেও স্বশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের দৃঢ়তা ও উদ্যোগের জন্য গর্ব করলেও শেষ পর্যন্ত চীনের অধীনে চলে যায়। পশ্চিমা উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি তাদের অনুরাগ শেষ পর্যন্ত বেইজিংয়ের কমিউনিস্ট সরকারের কাছে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে বিবেচিত হয়েছে। দারিদ্র্য থেকে সম্পদ, আর সেখান থেকে প্রতিরোধের পথে লাইয়ের জীবনের গল্পও যেন হংকংয়ের প্রতীকী প্রতিচ্ছবি।
দক্ষিণ চীনের গুয়াংঝৌ শহরের রাস্তায় অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করা এক সংগ্রামী কিশোর ছিলেন লাই। ১৯৬১ সালে তিনি একটি মাছ ধরার নৌকায় লুকিয়ে হংকংয়ে পালিয়ে যান। সেই কিশোরই পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের পোশাক ব্র্যান্ড জিওরদানো, যা গোটা এশিয়াতে জনপ্রিয়।
১৯৮৯ সালের জুনে বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ার ও আশপাশে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর চীনা সেনাদের হত্যাযজ্ঞ লাইয়ের মনোজগতে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই ঘটনার পরে লাই সাংবাদিকতার দিকে মনোযোগ দেন।
১৯৯০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাপ্তাহিক সাময়িকী নেক্সট ম্যাগাজিন। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি তার রাজনৈতিক সক্রিয়তার কারণে চীনে জিওরদানো ব্র্যান্ডের দোকানগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করা হলে লাই সেই ব্যবসা বিক্রি করে দেন এবং প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ১৯৯৫ সালে চালু করেন অ্যাপল ডেইলি। এই ট্যাবলয়েড পত্রিকাটি অপরাধসংক্রান্ত খবর, যৌন কেলেঙ্কারি, ঘোড়দৌঁড়ের পূর্বাভাস এবং হংকং ও চীনের অভিজাতদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করত, ফলে অল্প সময়েই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
লাই তার এক কলামে তৎকালীন চীনের প্রধানমন্ত্রী ও তিয়ানআনমেন ঘটনার জন্য দায়ীদের একজন হিসেবে অভিযুক্ত লি পেংকে “কচ্ছপের ডিমের ছেলে” বলে উল্লেখ করেন—যা অত্যন্ত অবমাননাকর শব্দ। এছাড়া তিনি চীনের বর্তমান নেতা শি জিন পিংকে “স্বৈরশাসক” বলে আখ্যা দেন।
হংকংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বেইজিং ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ শাসনব্যবস্থার অধীনে ব্যাপক স্বাধীনতা ও উচ্চমাত্রার স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু লাই ও অন্যান্য সমালোচকরা মনে করেন, চলমান জাতীয় নিরাপত্তা দমন-পীড়নে সেই প্রতিশ্রুতি কার্যকারিতা হারিয়েছে।
২০১৪ সালে ‘আমব্রেলা আন্দোলন’-এর সময় যখন পূর্ণ গণতন্ত্রের দাবিতে টানা ৭৯ দিন মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলেছিল। লাই তখনও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, যদিও দণ্ড দেওয়া হয়নি। কিন্তু ২০১৯ সালে, যখন লাখো মানুষ হংকংয়ে চীনের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামেন, তখন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম তাঁকে “গণতন্ত্রের অশুভ শক্তি” বলে আখ্যা দেয়।
আদালতে লাই বলেন, “আপনার কাছে যত বেশি তথ্য থাকবে, আপনি তত বেশি জানবেন। আর আপনি যত বেশি জানবেন, তত বেশি স্বাধীন হবেন।’’
জিমি লাই কি ফৌজদারি না রাজনৈতিক আসামি?
২০০৮ সালে ফোর্বসের তালিকায় হংকংয়ের শীর্ষ ৪০ ধনীর একজন হিসেবে স্থান পান জিমি লাই। তখন তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন হংকং ডলার (১৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। তবে ২০২১ সালে তার মিডিয়া কোম্পানি নেক্সট ডিজিটালের শেয়ার জব্দ করা হয়, ফলে নগদ অর্থের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হয়।
বিচার চলাকালে লাই নিজেকে বারবার একজন “রাজনৈতিক বন্দী” বলে উল্লেখ করেন। এতে বিচারকদের একজন তাকে তিরস্কার করেন ও বলেন, লাই আদালতে উপস্থিত হয়েছেন একটি ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে। লাই জবাবে বলেন, ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার তার আছে।
লাই বলেন, গণতন্ত্রের জন্য তার এ লড়াই নিজের জন্য ভালো পরিণতি বয়ে আনবে না তা তিনি জানেন, তবু এই আত্মত্যাগকে তিনি “সম্মান” হিসেবে দেখেন। এই সংকটজনক মুহূর্তে ছয় সন্তানসহ পরিবার তার পাশে থেকেছে।
স্ত্রী তেরেসা ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আদালতের শুনানিতে উপস্থিত থেকেছেন। লাইয়ের কন্যা ক্লেয়ার রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের বাবা এখনও মানসিকভাবে দৃঢ় আছেন, কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন।”
তিনি জানান, তার বাবা পিঠ ও কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত। ডায়াবেটিস, হৃদস্পন্দনের অনিয়ম এবং রক্তচাপে ভুগছেন, যা গত এক বছর আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
ক্লেয়ার আরও বলেন, “আদালতে যাওয়া কঠিন। তার ওপর বিচারপ্রক্রিয়াও অনেক দীর্ঘ। কিন্তু সেখানে তাকে বিচারক ও প্রসিকিউশন উভয় পক্ষ থেকেই তীব্রভাবে জেরা ও আক্রমণ করা হয়েছে। তবুও তারা প্রমাণ করতে পেরেছে, আমার বাবা এমন একজন মানুষ যিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, সত্যকে ভালোবাসেন, স্বাধীনতাকে ভালোবাসেন এবং তার পরিবারকে ভালোবাসেন।”