কেনাকাটাতেও এআই, অনলাইন শপিংয়ের কী হবে?

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
কেনাকাটাতেও এআই, অনলাইন শপিংয়ের কী হবে?
ছবি: রয়টার্স

প্রিয়জনদের জন্য পছন্দসই উপহার খুঁজে বের করতে অনেক দোকানে ঘোরাঘুরি করতে হয় অথবা ই-কমার্স সাইটগুলোতে স্ক্রল করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। অনেকে ব্যাপারটি উপভোগ করলেও অনেকের কাছে বিরক্তিকর। এআই এবার এই জায়গাটি নিতে চলেছে।

এআই চ্যাটবটগুলো এখন থেকে ব্যক্তিগত ক্রেতার ভূমিকা পালন করবে। একজন ব্যবহারকারী কী ধরণের জিনিস চান তা শুনে পণ্যের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করতে সাহায্য করে এআই। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান শপিফাই-এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, এ বছর ছুটির মৌসুমে ধনী দেশগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোক্তা কেনাকাটায় সাহায্য করার জন্য এআই ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন।

আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকায় গবেষণা এবং লেখালেখির কাজে সহায়তার পরে চ্যাটজিপিটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় কেনাকাটায় পরামর্শের জন্য। ভোক্তারা এমনকি চ্যাটবটের মাধ্যমে সরাসরি কেনাকাটা করতে পারবে। আমেরিকার পরামর্শক সংস্থা ম্যাককিন্সি মনে করে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার কেনাকাটা এআই-এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

এআই সংস্থাগুলো বলছে, ইন্টারনেট যুগে ই-কমার্স যেমন সরাসরি কেনাকাটাকে ব্যাহত করেছিল, তেমনই তাদের প্রযুক্তি অনলাইন কেনাকাটাকে ব্যাহত করবে। যদিও ওপেনএআই তাদের প্ল্যাটফর্মে পণ্যের বিজ্ঞাপনকে সীমিত করেছে, তবু কিছু কারিগরি পণ্যের জন্য একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস শপিফাই-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে, যা বিক্রেতাদের নির্দিষ্ট কিছু অর্থের বিনিময়ে তাদের চ্যাটবটের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির অনুমতি দেয়। আমেরিকার এজেন্টরা এখন এআই-এর মাধ্যমে দোকানে ফোন করে স্টক পরীক্ষা করতে পারে, পণ্যের দাম ট্র্যাক করতে পারে এবং কোনো চুক্তি সম্পন্ন হলে তাদের পক্ষ থেকে কিছু কেনাকাটা করতে পারে।

ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনোমিস্ট বলছে, তবে খুচরা বিক্রেতারা হাত গুটিয়ে বসে নেই। অনেক ই-কমার্স ওয়েবসাইট তাদের এবং গ্রাহকদের মধ্যে এআই এজেন্ট চলে আসায় বিরক্তি প্রকাশ করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স সাইট অ্যামাজন, রাজস্বের প্রায় এক-দশমাংশ আয় করে বিজ্ঞাপন থেকে, তারা ক্রেতাদের তাদের ওয়েবসাইটে ধরে রাখতে চায়। সম্প্রতি তারা পারপ্লেক্সিটি নামক একটি এআই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করছে এই অভিযোগে যে, তাদের এজেন্ট মানুষের ছদ্মবেশে অ্যামাজনের ওয়েবসাইটে ঘোরাফেরা করছে। যদিও পারপ্লেক্সিটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

অন্যান্য সংস্থাগুলো কিছুটা উদার। অ্যামাজনের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ালমার্ট অক্টোবরে ঘোষণা করেছে, শিগগির তাদের পণ্যগুলো সরাসরি চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করবে। এই ধরনের চুক্তি খুচরা বিক্রেতাদের এমন গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে, যাদের কাছে তারা আগে পৌঁছাতে পারতো না। মিজুহো নামের একটি ব্যাংকের বিশ্লেষকরা মনে করেন, ওয়ালমার্টের ওয়েবসাইটে আসা ভিজিটের ৪ শতাংশ আসে রেফারেল থেকে, যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে চ্যাটজিপিটি।

ওয়ালমার্টের সদ্যসাবেক প্রধান নির্বাহী ডাগ ম্যাকমিলন স্বীকার করেছেন, অনলাইন কেনাকাটাকে এখন একটি সার্চ বার বা দীর্ঘ তালিকার ওপর নির্ভরশীল থাকলে হবে না। ওয়ালমার্টসহ কিছু খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব শপিং অ্যাসিস্ট্যান্ট তৈরি করেছে। কেনাকাটার সময় আমেরিকানরা কোনো তৃতীয় পক্ষের চ্যাটবটের চেয়ে এই ধরনের অ্যাসিস্ট্যান্ট বেশি পছন্দ করে।

অ্যামাজনের বস অ্যান্ডি জেসি তৃতীয় পক্ষের শপিং এজেন্টদের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এদের কেনাকাটার কোনো ইতিহাস নেই। অধিকাংশ সময় ডেলিভারির অনুমান ভুল হয় এবং দামও ভুল করে প্রায়শই।”

ডেড্রিম, একটি এআই ফ্যাশন-শপিং টুলের প্রতিষ্ঠাতা জুলি বোর্নস্টাইন মন্তব্য করেন, চ্যাটবটগুলো কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের অনুসন্ধানের জন্য অন্যদের চেয়ে বেশি সহায়ক। কিছু ক্ষেত্রে তারা দুর্দান্ত কাজ করে যখন পণ্যগুলোর সুস্পষ্ট বা তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ থাকে। উদাহরণস্বরূপ ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা প্রসাধনী সামগ্রী। তবে ফ্যাশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, জিনিস যেখানে ব্যক্তিগত রুচি জড়িত, সেখানে এআই হোঁচট খায়।

ভোক্তারা কেনাকাটার জন্য কতটা উৎসাহের সঙ্গে এআই গ্রহণ করবে, তা চ্যাটবট প্রস্তুতকারকরা এই ক্ষেত্র থেকে কতটা অর্থ উপার্জন করবে তার ওপরও নির্ভর করতে পারে। ওয়ালমার্ট ইতিমধ্যেই তাদের শপিং অ্যাসিস্ট্যান্ট স্পার্কিতে এ বিষয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। গুগল সম্প্রতি বিপণনকারীদের বলেছে, তারা পরের বছর তাদের চ্যাটবট জেমিনিতে বিজ্ঞাপন একীভূত করবে।

এদিকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদের পণ্যের সুপারিশ করার জন্য চ্যাটবটগুলোকে বোঝানোর উপায় খুঁজছে। একটি সফটওয়্যার সংস্থা লিলি এআইয়ের ব্যবহারকারীরা চ্যাটবটগুলোতে যে ধরণের ভাষা ব্যবহার করে, তার ওপর তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং তাদের ক্লায়েন্টদের ওয়েবসাইটে তা সরবরাহ করেছে। লিলি এআইযের প্রতিষ্ঠাতা পূর্বা গুপ্ত ব্যাখ্যা করেছেন, যেখানে একটি কোম্পানি তাদের “ফ্রেঞ্চ টেরি” টপকে “মিডনাইট ব্লু” হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে পারে, সেখানে গ্রাহকরা চ্যাটবটকে “নেভি হুডি” জিজ্ঞাসা করলেই জিনিসটি পেয়ে যাবে।

এত সবকিছুর পরিণতি হতে পারে আশ্চর্যজনক। এআই যখন অনলাইন কেনাকাটার জগৎকে পাল্টে দিচ্ছে, তখন বাস্তবের দোকানগুলোর গুরুত্ব নতুনভাবে অনুভূত হচ্ছে। এআই এখন মানুষকে সরাসরি পণ্য কেনার জন্য উৎসাহিত করতে পারে। এ বছর শপিফাই-এর সমীক্ষায় উত্তরদাতাদের তিন-চতুর্থাংশ বলেছে, কেনাকাটার সময় তারা মানুষের মিথস্ক্রিয়াকে অধিক মূল্য দেন। এখনও প্রচুর ক্রেতা আছেন যারা নির্দিষ্ট ধরনের কিছু পণ্য (যেমন: পোশাক) হাতে দেখে কিনতে চান। আর বছরের এই সময়ে (বড়দিন), হাই স্ট্রিটে গিয়ে উৎসবের আনন্দ উপভোগ সুযোগ থেকে কেউ বঞ্চিত হতে চায় না।

সম্পর্কিত