আলটিমেটাম দিয়ে শাহবাগ ছাড়ল ইনকিলাব মঞ্চ

চরচা প্রতিবেদক
চরচা প্রতিবেদক
আলটিমেটাম দিয়ে শাহবাগ ছাড়ল ইনকিলাব মঞ্চ
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। ছবি: চরচা

শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার চেয়ে শাহবাগ ছেড়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের কর্মী-সমর্থরা। রোববার বিকেল সোয়া ৫ টায় আবারও শাহবাগে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের এ ঘোষণা দেন।

আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে কর্মী-সমর্থকরা চলে যেতে থাকলে রাস্তায় যান চলাচল শুরু হয়।

জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে ক্যাম্পাসে কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে। বেলা আড়াইটার পর থেকে শাহবাগে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

জানাজা ও দাফনের পর শাহবাগে জমায়েত বাড়তে থাকে। সেখানে ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা’, ‘হাদির স্মরণে ভয় করি না মরণে’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।

জাবের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জনসম্মুখে এসে হাদি হত্যার তদন্তের অগ্রগতি এবং মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানানোর দাবি জানান। না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তিনি।

ইনকিলাব মঞ্চের এই সদস্য সচিব বলেন, “স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের সামনে এসে জানাতে হবে-হাদি হত্যার মূল আসামি ধরার অগ্রগতি কত দূর। জানাতে না পারলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের সুষ্পষ্ট কোনো জবাব না পেলে আবারও শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি।”

সরকারকে উদ্দেশ করে জাবের বলেন, “বাংলাদেশে খুনিদের সাথে কোনো সুশীলতা নাই। যখন খুনীদের কথা বলা হয়, তখন আপনারা পেঁয়াজের আলাপ দেন, ফাইজলামি করেন মানুষের সাথে। জুলাই আপনাদের কী শিখিয়ে গেছে?’ 

জাবের বলেন, “সামনে নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচনকে যাতে বাধাগ্রস্ত করা যায়, নির্বাচন যাতে না হয়, আওয়ামী লীগ যাতে প্রত্যাবর্তন করতে পারে এজন্য নানা ষড়যন্ত্র চলছে। এই মুহূর্তে তারা যদি বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক নেতাকেও মারে, এ ধরনের ইম্প্যাক্ট তৈরি হবে না। কারণ, জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না। একমাত্র শরিফ ওসমান হাদি টিকে ছিল জনতার কন্ঠস্বর হয়ে, বাংলাদেশ সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে। তাকে মারা গেলে আওয়ামী লীগকে তাড়াতাড়ি ফেরানো যাবে। এজন্য তাকে খুন করা হয়েছে। ওসমান হাদির লড়াইকে আমরা চালিয়ে নিয়ে যাব।”

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ওসমান হাদি। নিজের নির্বাচনী প্রচারে গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হাদি। গতকাল শুক্রবার হাদির মরদেহ দেশে আনার পর রাখা হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে।

জুলাই আন্দোলনের সময় সক্রিয় ওসমান হাদি আন্দোলন সংগঠনে বড় ভূমিকা পালন করেন। তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায়। তার বাবা নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক, যেখান থেকেই হাদির শিক্ষাজীবন শুরু হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শেষে তিনি লেখালিখি ও পরে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন।

সম্পর্কিত