বিশ্বের সবচেয়ে ঠান্ডা শহরে কীভাবে টিকে থাকে মানুষ

চরচা ডেস্ক
চরচা ডেস্ক
বিশ্বের সবচেয়ে ঠান্ডা শহরে কীভাবে টিকে থাকে মানুষ
রাশিয়ার ইয়াকুতিয়ার তাপমাত্রা এখন মাইনাস ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। ছবি: রয়টার্স

বর্তমানে বিশ্বের শীতলতম স্থান হলো রাশিয়ার ইয়াকুতিয়া। এই জায়গার তাপমাত্রা এখন মাইনাস ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা মাইনাস ৬০ ডিগ্রি অবধি নামতে পারে।

ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য রিপাবলিক মিডিয়া নেটওয়ার্কের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

রাশিয়ার এই শহরটিতে ৩ লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। পৃথিবীর সবচেয়ে তীব্র শীত নিয়মিতভাবেই সহ্য করেন তারা।

ইয়াকুতিয়ায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় মাইনাস ৬২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শহরটির ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৬৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৮৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড করা হয়েছিল। এই চরম শীতে শহরটির দৃশ্যমানতা নেমে আসে মাত্র কয়েক মিটারে। এ সময় ইয়াকুতিয়ায় দিনে চার ঘণ্টারও কম সূর্যালোক পাওয়া যায়।

শীতে এই শহরের মানুষ এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে যান যে, বাইরে বের হলে তাদের চোখের পাপড়ি এমনকি দাড়িও জমে যায় বরফে। মাথা, নাক, কান ভারি কাপড়ে ঢেকে রাখলেও চোখ তো খুলে রাখতেই হয়। অনেকের মনেই এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, তারা তো চাইলে সানগ্লাস বা চশমা পরতে পারেন!

তবে চশমা পরলে সেটাও বরফে ঢেকে যায় এমনকি ত্বকের সঙ্গে লেগে যায়, পরে চশমা খোলা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এমনই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবেলা করে টিকে থাকে ইয়াকুতিয়ার বাসিন্দারা।

এই তীব্র শীতে কীভাবে টিকে থাকেন ইয়াকুতিয়ার বাসিন্দারা?

তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের ১০ থেকে ২০ মিনিটের বেশি সময় বাইরে না দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন।

এই শহরে টিকে থাকতে হলে জীবনযাত্রায় ব্যাপক অভিযোজন প্রয়োজন। বাসিন্দারা পরেন কয়েকস্তর বিশিষ্ট বিশেষ ধরনের তাপরোধী পোশাক, মোটা ইনসুলেটেড বুট এবং ঐতিহ্যবাহী পশমাবৃত দস্তানা, যাতে প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

যানবাহনের ইঞ্জিন অয়েল ও ব্যাটারি জমে যাওয়া ঠেকাতে অনেক গাড়ি উত্তপ্ত গ্যারেজে সারাক্ষণ চালু রাখা হয়। শীতকালে বহু মানুষই গণপরিবহনের ওপর নির্ভর করেন, কারণ খোলা জায়গায় গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে তা আর চালু নাও হতে পারে।

ইয়াকুতিয়ার বাড়িঘরও নির্মিত হয়েছে এই চরম আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে। ভবনগুলো মাটির ওপর সরাসরি না বসিয়ে খুঁটির ওপর দাঁড় করানো হয়, যাতে জমাট বাঁধা বরফের প্রভাব এড়ানো যায়। অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে থাকে সার্বক্ষণিক হিটিং ব্যবস্থা এবং একাধিক ইনসুলেটেড দরজা, যা ভেতরের উষ্ণতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।

সম্পর্কিত