তাসীন মল্লিক

গত বছর গণঅভ্যুত্থানে মাঠে সক্রিয় থাকলেও পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেকটাই কোণঠাসা দেশের বামপন্থী দলগুলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি মাঠে সক্রিয় থাকলেও বামদের জোটগুলো আওয়ামী লীগের পতনের পর রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সেই অবস্থা থেকে বের হতে এবার একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের চিন্তা করছে তারা।
শুধু বামপন্থী শক্তি নয়, সুফীধারার সংগঠন ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে চায় তারা। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নিজেদের শক্তির জানান দিতেও এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত প্রায় এক বছর ধরে সভা-সেমিনারে বামধারার বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা যুক্তফ্রন্ট গঠনের আলোচনা তুলে আসছিলেন। আগামী ২৯ নভেম্বর রাজনৈতিক কনভেশন করে ওই আলোচনার বাস্তব রূপ দিতে যাচ্ছেন বলে চরচাকে জানিয়েছেন বাম ধারার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ কাফী রতন চরচাকে জানিয়েছেন, যুক্তফ্রন্ট গঠিত হবে গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল এবং দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোকে নিয়ে। ইতোমধ্যে অপরাপর দল ও জোটগুলোর সঙ্গে তাদের আলোচনা শেষ হয়েছে।
নতুন যুক্তফ্রন্ট
যুক্তফ্রন্ট গঠনের উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে দুটি কনভেনশন আয়োজন করেছে সিপিবি। গত ৩১ অক্টোবর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কনভেশনে নতুন যুক্তফ্রন্টের একটি ধারণা দেন লেখক-অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
ইতিহাসে একাধিকবার জোট গঠন হলেও এই যুক্তফ্রন্টটিকে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বলে বক্তব্য রাখেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তার ভাষায় এটি হবে, ‘সমাজবিপ্লবীদের যুক্তফ্রন্ট’।
বাম ধারার শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, ২৯ নভেম্বর ‘বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির কনভেনশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যুক্তফ্রন্টের ঘোষণা আসবে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে থেকে এর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’। এর পাশাপাশি দলগুলোর পক্ষ থেকে ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ নামের প্রস্তাবও রয়েছে।
বামপন্থী দলগুলোর জোট গঠনের ইতিহান নতুন নয়। বাম দলগুলো গত ৯০ এর দশকে বামফ্রন্ট গঠন করে। ১৯৯৮ সালে জোটের পরিসর বাড়ে। গণফোরামসহ কয়েটি দলকে নিয়ে গড়েছিল ১১ দল।
বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকোরের সময় ২০০৩ সালের শেষ ভাগ থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাম দলগুলোর সমন্বয়ে জোট গঠনের চেষ্টা শুরু হয়। কিছু দিন যুগপৎ কর্মসূচি পালনের পর ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ, বামদের ১১ দলীয় জোট, জাসদ ও ন্যাপকে নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়।
অবশ্য সে সময় ১১ দলের চার শরিক সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাসদ (মাহবুব) ও শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল ১৪ দলীয় জোটে যুক্ত হয়নি।
১৪ দলে না যাওয়া দলগুলো নিজেদের মতো করে চলছিল। এর মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি দল একটি মোর্চা গঠন করে। আর সিপিবি-বাসদ জোট করে যৌথভাবে কর্মসূচি চালিয়ে আসছিল। ২০১৮ সালে এরা সবাই মিলে গঠন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
ওই জোটে ছিল, সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) বাসদ (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। এই জোটের কয়েকটি দল পরে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতেও যায়।

বামপন্থীদের চ্যালেঞ্জ
সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি গণভিত্তি কমে যাওয়া বামপন্থীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। দলগুলো মনে করছে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শক্তিগুলোকে এক ছাতার নিচে না আনলে ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে তাদের টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
গত ১৪ নভেম্বর সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এক সমাবেশে বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী দিনে একটা জোট গড়ে তুলব রামধনুর মত। সাত রঙের একটা জোট যেখানে সব রং থাকবে।”
বামদলগুলো মনে করছে, অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থায় নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতেই এই নতুন জোটের উদ্যোগ বাস্তব প্রয়োজন থেকে এসেছে। সংসদ নির্বাচনে এ জোট যেমন ভোটের মাঠে অংশ নেবে তেমনি নির্বাচন পরবর্তী মাঠের রাজনীতিতেও প্রভাব রাখতে চায় তারা।
যুক্তফ্রন্টে থাকবে যারা
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা-এ দুই জোটের সঙ্গে বাংলাদেশ জাসদ এবং আরও কয়েকটি প্রগতিশীল ধারার দল যোগ দিতে পারে নতুন এই যুক্তফ্রন্টে। প্রগতিশীল এবং সমমনা অংশীজনের ভোট আদায়ে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী দেবে এ ফ্রন্ট।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ চরচাকে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আন্দোলন এবং নির্বাচন। দুটিকে মিলিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, শুধু দলের প্রার্থী না। শ্রেণি, গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিগতভাবে যারা যুক্তফ্রন্টের বক্তব্যে বিশ্বাসী, তারাও এই প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রার্থী হতে পারবেন।”
বন্দর রক্ষা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা, দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতির মাঠেও থাকতে চায় যুক্তফ্রন্ট। রাজনৈতিক দল ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক স্থানীয় দল, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাশাপাশি সুফিবাদী ভাবধারার সংগঠনও যুক্ত হতে পারে এতে।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান চরচাকে বলেন, “আমরা একটা স্থায়ী ঐক্য করতে চাই। যার ভিত্তি হবে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতা। ক্ষমতা প্রধান লক্ষ্য না-জনগণের ন্যায়, অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে চাচ্ছি।”
শঙ্কা বাস্তবতা নিয়ে
নানা মতে বিভক্ত বাম ধারার দলগুলোর ঐক্য খুব সহজ নয় বলে মত বিশ্লেষকদের। গবেষক ও বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ মনে করেন, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার বাইরে নির্বাচন বিমুখ বামধারার দলও রয়েছে। নতুন বামধারার ফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী দলগুলো নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
তার মতে, “এ ফ্রন্টে সব বামপন্থী দল যুক্ত হচ্ছে না হয়তো। কিছু দল যোগ দেবে, চার–পাঁচটি থাকবে, আবার দুইটি বাইরে থাকতে পারে।”
বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার বাইরে নির্বাচন বিমুখ বামধারার দলও রয়েছে।
৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের আগে বাম গণতান্ত্রিক জোট ছিল বামদের বড় অংশের জোট। জোটে বামধারার দলের পাশাপাশি গণসংহতি আন্দোলনের মত মধ্যপন্থী দলও ছিল। তবে আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদের বিতর্কিত শাসনের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রশ্নে সে ঐক্যে ফাটল ধরে। জোট ছেড়েছিল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন।
নতুন যুক্তফ্রন্ট গঠন সামনে রেখে আবারও দল দুটির সঙ্গে যোগাযোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বামধারার দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। নতুন যুক্তফ্রন্ট যোগদানের সম্ভাবনা না থাকলেও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দল দুটির নেতারা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক চরচাকে বলেন, “ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সময় আমরা যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। তখন সেটা ছিল ফরজ কাজ। তবে আমাদের বন্ধুদেরকে তখন আমরা বোঝাতে পারিনি। ফরজ কাজের সময় তারা সাড়া দেননি। এখন ফ্রন্টে কথা বলছেন, এটা নিয়ে যদি কথা বলতে চান আমরা নিশ্চয়ই কথা বলব।”
প্রশ্ন নির্বাচনী সফলতা নিয়েও
প্রায় তিন দশক ধরেই ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারছে না বামপন্থী দলগুলো। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাম দলগুলো পৃথক ভাবে অংশ নিলেও কেউ ১ শতাংশ ভোট নিজেদের বাক্সে তুলতে পারেনি।
ফলে যুক্তফ্রন্ট সংসদ নির্বাচনে কতটুকু সফল হবে এমন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আলতাফ পারভেজের ভাষায়, “তারা নির্বাচনে খুব একটা ভালো করবে, বা সংগঠিত শক্তি হিসেবে খুব সক্ষম-এমনটাও নয়। ফলে নির্বাচনে এই ফ্রন্ট বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না।”
তিনি মনে করেন, নির্বাচনের আগে ও পরে চলমান রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আলতাফ পারভেজ বলেন, “শ্রমিক-কৃষকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এটি একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের আগে–পরে যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, বন্দর ইস্যুতে জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাঠে নামা- এসব ক্ষেত্রে যদি তারা ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে পারে, অথবা কোনো জোট গঠন করতে পারে, তাহলে সেটি একটি ভালো ভূমিকা রাখবে।”

গত বছর গণঅভ্যুত্থানে মাঠে সক্রিয় থাকলেও পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেকটাই কোণঠাসা দেশের বামপন্থী দলগুলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি মাঠে সক্রিয় থাকলেও বামদের জোটগুলো আওয়ামী লীগের পতনের পর রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সেই অবস্থা থেকে বের হতে এবার একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের চিন্তা করছে তারা।
শুধু বামপন্থী শক্তি নয়, সুফীধারার সংগঠন ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে চায় তারা। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নিজেদের শক্তির জানান দিতেও এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত প্রায় এক বছর ধরে সভা-সেমিনারে বামধারার বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা যুক্তফ্রন্ট গঠনের আলোচনা তুলে আসছিলেন। আগামী ২৯ নভেম্বর রাজনৈতিক কনভেশন করে ওই আলোচনার বাস্তব রূপ দিতে যাচ্ছেন বলে চরচাকে জানিয়েছেন বাম ধারার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ কাফী রতন চরচাকে জানিয়েছেন, যুক্তফ্রন্ট গঠিত হবে গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল এবং দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোকে নিয়ে। ইতোমধ্যে অপরাপর দল ও জোটগুলোর সঙ্গে তাদের আলোচনা শেষ হয়েছে।
নতুন যুক্তফ্রন্ট
যুক্তফ্রন্ট গঠনের উদ্দেশ্যে এরই মধ্যে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে দুটি কনভেনশন আয়োজন করেছে সিপিবি। গত ৩১ অক্টোবর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কনভেশনে নতুন যুক্তফ্রন্টের একটি ধারণা দেন লেখক-অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
ইতিহাসে একাধিকবার জোট গঠন হলেও এই যুক্তফ্রন্টটিকে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে বলে বক্তব্য রাখেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তার ভাষায় এটি হবে, ‘সমাজবিপ্লবীদের যুক্তফ্রন্ট’।
বাম ধারার শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, ২৯ নভেম্বর ‘বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির কনভেনশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যুক্তফ্রন্টের ঘোষণা আসবে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে থেকে এর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’। এর পাশাপাশি দলগুলোর পক্ষ থেকে ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ নামের প্রস্তাবও রয়েছে।
বামপন্থী দলগুলোর জোট গঠনের ইতিহান নতুন নয়। বাম দলগুলো গত ৯০ এর দশকে বামফ্রন্ট গঠন করে। ১৯৯৮ সালে জোটের পরিসর বাড়ে। গণফোরামসহ কয়েটি দলকে নিয়ে গড়েছিল ১১ দল।
বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকোরের সময় ২০০৩ সালের শেষ ভাগ থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাম দলগুলোর সমন্বয়ে জোট গঠনের চেষ্টা শুরু হয়। কিছু দিন যুগপৎ কর্মসূচি পালনের পর ২০০৫ সালের ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ, বামদের ১১ দলীয় জোট, জাসদ ও ন্যাপকে নিয়ে ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়।
অবশ্য সে সময় ১১ দলের চার শরিক সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাসদ (মাহবুব) ও শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল ১৪ দলীয় জোটে যুক্ত হয়নি।
১৪ দলে না যাওয়া দলগুলো নিজেদের মতো করে চলছিল। এর মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি দল একটি মোর্চা গঠন করে। আর সিপিবি-বাসদ জোট করে যৌথভাবে কর্মসূচি চালিয়ে আসছিল। ২০১৮ সালে এরা সবাই মিলে গঠন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
ওই জোটে ছিল, সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) বাসদ (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। এই জোটের কয়েকটি দল পরে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতেও যায়।

বামপন্থীদের চ্যালেঞ্জ
সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি গণভিত্তি কমে যাওয়া বামপন্থীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। দলগুলো মনে করছে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শক্তিগুলোকে এক ছাতার নিচে না আনলে ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতে তাদের টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
গত ১৪ নভেম্বর সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এক সমাবেশে বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী দিনে একটা জোট গড়ে তুলব রামধনুর মত। সাত রঙের একটা জোট যেখানে সব রং থাকবে।”
বামদলগুলো মনে করছে, অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থায় নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতেই এই নতুন জোটের উদ্যোগ বাস্তব প্রয়োজন থেকে এসেছে। সংসদ নির্বাচনে এ জোট যেমন ভোটের মাঠে অংশ নেবে তেমনি নির্বাচন পরবর্তী মাঠের রাজনীতিতেও প্রভাব রাখতে চায় তারা।
যুক্তফ্রন্টে থাকবে যারা
সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা-এ দুই জোটের সঙ্গে বাংলাদেশ জাসদ এবং আরও কয়েকটি প্রগতিশীল ধারার দল যোগ দিতে পারে নতুন এই যুক্তফ্রন্টে। প্রগতিশীল এবং সমমনা অংশীজনের ভোট আদায়ে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী দেবে এ ফ্রন্ট।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ চরচাকে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আন্দোলন এবং নির্বাচন। দুটিকে মিলিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, শুধু দলের প্রার্থী না। শ্রেণি, গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিগতভাবে যারা যুক্তফ্রন্টের বক্তব্যে বিশ্বাসী, তারাও এই প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রার্থী হতে পারবেন।”
বন্দর রক্ষা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা, দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতির মাঠেও থাকতে চায় যুক্তফ্রন্ট। রাজনৈতিক দল ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক স্থানীয় দল, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাশাপাশি সুফিবাদী ভাবধারার সংগঠনও যুক্ত হতে পারে এতে।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান চরচাকে বলেন, “আমরা একটা স্থায়ী ঐক্য করতে চাই। যার ভিত্তি হবে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতা। ক্ষমতা প্রধান লক্ষ্য না-জনগণের ন্যায়, অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে চাচ্ছি।”
শঙ্কা বাস্তবতা নিয়ে
নানা মতে বিভক্ত বাম ধারার দলগুলোর ঐক্য খুব সহজ নয় বলে মত বিশ্লেষকদের। গবেষক ও বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ মনে করেন, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার বাইরে নির্বাচন বিমুখ বামধারার দলও রয়েছে। নতুন বামধারার ফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী দলগুলো নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
তার মতে, “এ ফ্রন্টে সব বামপন্থী দল যুক্ত হচ্ছে না হয়তো। কিছু দল যোগ দেবে, চার–পাঁচটি থাকবে, আবার দুইটি বাইরে থাকতে পারে।”
বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার বাইরে নির্বাচন বিমুখ বামধারার দলও রয়েছে।
৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের আগে বাম গণতান্ত্রিক জোট ছিল বামদের বড় অংশের জোট। জোটে বামধারার দলের পাশাপাশি গণসংহতি আন্দোলনের মত মধ্যপন্থী দলও ছিল। তবে আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদের বিতর্কিত শাসনের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রশ্নে সে ঐক্যে ফাটল ধরে। জোট ছেড়েছিল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন।
নতুন যুক্তফ্রন্ট গঠন সামনে রেখে আবারও দল দুটির সঙ্গে যোগাযোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বামধারার দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। নতুন যুক্তফ্রন্ট যোগদানের সম্ভাবনা না থাকলেও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন দল দুটির নেতারা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক চরচাকে বলেন, “ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সময় আমরা যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। তখন সেটা ছিল ফরজ কাজ। তবে আমাদের বন্ধুদেরকে তখন আমরা বোঝাতে পারিনি। ফরজ কাজের সময় তারা সাড়া দেননি। এখন ফ্রন্টে কথা বলছেন, এটা নিয়ে যদি কথা বলতে চান আমরা নিশ্চয়ই কথা বলব।”
প্রশ্ন নির্বাচনী সফলতা নিয়েও
প্রায় তিন দশক ধরেই ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারছে না বামপন্থী দলগুলো। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাম দলগুলো পৃথক ভাবে অংশ নিলেও কেউ ১ শতাংশ ভোট নিজেদের বাক্সে তুলতে পারেনি।
ফলে যুক্তফ্রন্ট সংসদ নির্বাচনে কতটুকু সফল হবে এমন প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আলতাফ পারভেজের ভাষায়, “তারা নির্বাচনে খুব একটা ভালো করবে, বা সংগঠিত শক্তি হিসেবে খুব সক্ষম-এমনটাও নয়। ফলে নির্বাচনে এই ফ্রন্ট বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না।”
তিনি মনে করেন, নির্বাচনের আগে ও পরে চলমান রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আলতাফ পারভেজ বলেন, “শ্রমিক-কৃষকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এটি একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের আগে–পরে যে রাজনৈতিক বাস্তবতা, বন্দর ইস্যুতে জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাঠে নামা- এসব ক্ষেত্রে যদি তারা ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে পারে, অথবা কোনো জোট গঠন করতে পারে, তাহলে সেটি একটি ভালো ভূমিকা রাখবে।”

বস্তিগুলোতে আগুন লাগার মূল কারণ হচ্ছে সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত বৈদ্যুতিক সংযোগ, নিয়ম না মেনে সিলিন্ডার বা লাইন গ্যাসের অনিরাপদ ব্যবহার, বিড়ি-সিগারেট, মশার কয়েল ও খোলা বাতির ব্যবহার, উন্মুক্ত চুলা ও হিটারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার। উদাসীনতা ও অসাবধানতা এই ঝুঁকি আরও বাড়ায়

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে কথা বলেছেন তার আইনজীবী মোরশেদ হোসেন। তিনি বলেন, “কারাগারে সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি কেবল সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদের মৃত্যুর প্রসঙ্গে কথা বলতে থাকেন। নুরুল মজিদের মৃত্যু অন্য নেতাদের ভীষণ চিন্ত